Advertisement
E-Paper

স্মার্টফোনই বলে দেবে, সারছে কি না ক্যানসার! আসছে অ্যাপ

ক্যানসার, যক্ষার মতো জটিল রোগগুলির বাড়া-কমার ওপর এ বার নজর রাখা যাবে স্মার্টফোনেই! কেমোথেরাপি বা ওষুধে ক্যানসার কতটা কী সারছে, বা আদৌ সারছে কি না, বা কতটা দ্রুত বাড়ছে, সব সময় আমার-আপনার হাতে থাকা স্মার্টফোনই এ বার তা জানিয়ে দেবে! সেই মোবাইল ফোন অ্যাপও বাজারে আসছে শিগগিরই।

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৭ ১৪:৪৮

ক্যানসার, যক্ষার মতো জটিল রোগগুলির বাড়া-কমার ওপর এ বার নজর রাখা যাবে স্মার্টফোনেই!

কেমোথেরাপি বা ওষুধে ক্যানসার কতটা কী সারছে, বা আদৌ সারছে কি না, বা কতটা দ্রুত বাড়ছে, সব সময় আমার-আপনার হাতে থাকা স্মার্টফোনই এ বার তা জানিয়ে দেবে! সেই মোবাইল ফোন অ্যাপও বাজারে আসছে শিগগিরই।

ডাক্তার যে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েছেন যক্ষার সংক্রমণ রুখতে, যক্ষার জীবাণু তাকেই রুখে দিচ্ছে কি না বা শরীরে ক্যানসার কোষগুলির বাড়-বৃদ্ধি রোখার জন্য যে কেমোথেরাপি করা হচ্ছে বা ওষুধ খেয়ে যাচ্ছেন রোগী নিয়মিত, নিজেকে দ্রুত বদলে নিয়ে (মিউটেশন বা অভিযোজন) ক্যানসার কোষগুলিই সেই কেমোথেরাপি বা ওষুধের ‘বিষ’কে নির্বিষ করে দিচ্ছে কি না, এ বার সেই নজরদারিটা চালাবে আমার-আপনার হাতে থাকা স্মার্টফোনই। আমাদের প্রত্যেকের শরীরে যে আলাদা আলাদা জিন-সজ্জা (জিন সিকোয়েন্সিং) বা ডিএনএ’র গঠন (ডিএনএ সিকোয়েন্সিং) রয়েছে, তার চেহারা আর সেই চেহারায় কখন, কেমন ‘রং-বদল’ হচ্ছে, তার ওপর ‘চোখ’ রেখেই এ বার স্মার্টফোন জানিয়ে দেবে, ওষুধে কাজ হচ্ছে কি না ক্যানসার বা যক্ষা রোগীদের।


সেই স্মার্টফোন ডিভাইস

রীতিমতো সাড়া ফেলে দেওয়া গবেষণাপত্রটি দিনদু’য়েক আগে প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার-কমিউনিকেশন্স’-এ। ওই গবেষণাপত্রটিই হদিশ দিয়েছে এই আশ্চর্য প্রযুক্তির। ওই যন্ত্রটি বানিয়েছেন লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, স্টকহলম বিশ্ববিদ্যালয়, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। ওই গবেষকদলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এক ভারতীয় মহিলার। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শোভা তুলে।


ফুসফুসের ক্যানসার কোষকে (লাল) ঠেকানোর চেষ্টা দেহের প্রতিরোধী ব্যবস্থার

শরীরে ক্যানসার কোষ ছড়াচ্ছে সাদা রোঁয়ার মাধ্যমে

এই প্রযুক্তির সুবিধাটা কোথায়?

আনন্দবাজারের পাঠানো প্রশ্নের জবাবে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা শোভা তুলে ই-মেলে লিখেছেন, ‘‘ক্যানসার বা যক্ষার মতো রোগগুলিকে যে বিশেষ কোনও একটি ওষুধ বা কেমোথেরাপি করে রোখা যাচ্ছে না, তার অন্যতম প্রধান কারণ, রোগীর দেহের জিন-সজ্জা বা ডিএনএ অণুর গঠনই নির্দিষ্ট সময় অন্তর দ্রুত বদলে যাচ্ছে। আর সেই বদলে যাওয়াটা নির্ভর করছে কার ওপর, জানেন? ওষুধের ‘বিষ’কে কী ভাবে ক্যানসার কোষগুলি নির্বিষ করে দিচ্ছে বা তাকে অকেজো করে দিচ্ছে যক্ষার জীবাণু, তার ওপর নির্ভর করেই রং বদলে যাচ্ছে জিন-সজ্জার বা বদলে যাচ্ছে ডিএনএ অণুর গঠন। তাই জিন-সজ্জার ওপর নজরদারিটাই সবচেয়ে বেশি জরুরি ক্যানসার, যক্ষার মতো রোগগুলির বাড়া-কমার হিসেব রাখার জন্য। এত দিন সেই কাজটা ডাক্তাররা করতেন বহু দূরের কোনও ল্যাবরেটরিতে ‘স্যাম্পল’ পাঠিয়ে। জিন-সিকোয়েন্স পরীক্ষা করার ল্যাবরেটরি খুব সুলভ নয়। সেখানে পরীক্ষা করানোর অনেক হ্যাপা, খরচও প্রচুর। অত খরচের জন্য সব ক্যানসার বা যক্ষা রোগীর পক্ষে নিয়মিত ভাবে তা পরীক্ষা করানো সম্ভবও হয় না। কিন্তু এ বার সেটা খুব সহজেই স্মার্টফোনের মাধ্যমে করা যাবে।’’


হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা শোভা তুলে

বাজার-চলতি স্মার্টফোনে নতুন কী কী সংযোজন ঘটবে?


কী ভাবে কাজ করবে স্মার্টফোনের মলিকিউলার মাইক্রোস্কোপ

কী ভাবে একটি জিন-সজ্জা থেকে মিলবে কয়েকশো’ কোটি ডিএনএ’র হদিশ

হার্ভার্ড থেকে শোভা লিখেছেন, ‘‘ওই স্মার্টফোনগুলির থ্রিডি-প্রিন্টেড বাইরের দিকটায় থাকবে দু’টি লেসার, একটি সাদা এলইডি, একটি জোরালো লেন্স আর একটি ফিল্টার। ওই অনুষঙ্গগুলিই স্মার্টফোনের ক্যামেরাটাকে একটা মলিকিউলার মাইক্রোস্কোপে বদলে দেবে। তার মানে, যে অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে কোনও পদার্থের অণুগুলিকে দেখা যায়।’’

স্মার্টফোনগুলি দিয়ে কী ভাবে ক্যানসার বা যক্ষা রোগীর জিন-সজ্জা পরীক্ষা করা হবে?


এই জিন-সজ্জাই বলছে, ক্যানসার কোষ ছড়াচ্ছে দ্রুত (সাদা ত্রিভূজ)

শরীরে ‘ফুলে-ফলে বেড়ে ওঠা’ ক্যানসার কোষ

শোভার জবাব, ‘‘ডাক্তাররা রোগীর দেহ থেকে যে স্যাম্পল নেবেন, তাতে একটি বিশেষ ধরনের রাসায়নিক মিশিয়ে দেবেন। তার মধ্যে ফ্লুরোসেন্ট আলোর মতো জ্বলতে থাকা কিছু প্রোটিন অণুও ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। জিন-সজ্জা কী ভাবে রং বদলাচ্ছে, তা ওই ফ্লুরোসেন্ট অণুগুলির অবস্থান দেখেই বোঝা যাবে। এ বার স্মার্টফোনের যে ক্যামেরাটিকে মলিকিউলার মাইক্রোস্কোপ বানানো হয়েছে সদ্য উদ্ভাবিত প্রযুক্তিতে, সেই ক্যামেরা দিয়েই জিন-সজ্জার ওই রং-বদলে’র ছবি তুলে তা বিশ্লেষণ করা যাবে ঘরে বসেই। তার জন্য আর দূর-দূরান্তে ছুটতে হবে না।’’

নতুন যন্ত্রগুলির জন্য স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের বাড়তি খরচ হতে পারে কতটা?

আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে গবেষকরা জানিয়েছেন, ‘‘খুব বেশি হলে ৫০০ মার্কিন ডলার বা ৩৪/৩৫ হাজার টাকা দাম পড়বে ওই যন্ত্রগুলির। তবে বাজারে নতুন অ্যাপ এসে গেলে সেই খরচ আরও অনেকটাই কমে যাবে।’’

আরও পড়ুন- বেতার-বার্তায় বিপ্লব: ট্রাম্পের পদক পাচ্ছেন কলকাতার কৌশিক

Cancer Treatment: smartphone DNA Analyzing Camera Smartphone Cancer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy