Advertisement
E-Paper

পৃথিবীর শেষ স্টেশন পেরিয়ে গেলেন হকিং

বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীর পরিবার বুধবার সকালে জানিয়েছে, কেমব্রিজের বা়ড়িতেই মারা গিয়েছেন হকিং। বয়স হয়েছিল ৭৬। ব্রহ্মাণ্ডের স্বরূপ পুরোপুরি আর জানা হল না তাঁর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৮ ০৩:৪১
স্টিফেন হকিং।

স্টিফেন হকিং।

পদার্থবিদ্যার জগতে সত্যিই বিশেষ দিন হয়ে রয়ে গেল ১৪ মার্চ তারিখটা! ১৮৭৯ সালে এই দিনে জন্মেছিলেন আলবার্ট আইনস্টাইন। ২০১৮ সালের একই দিনে চলে গেলেন স্টিফেন হকিং।

বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীর পরিবার বুধবার সকালে জানিয়েছে, কেমব্রিজের বা়ড়িতেই মারা গিয়েছেন হকিং। বয়স হয়েছিল ৭৬। ব্রহ্মাণ্ডের স্বরূপ পুরোপুরি আর জানা হল না তাঁর। রইলেন হকিংয়ের তিন সন্তান ও নাতি-নাতনিরা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দুনিয়ায়, ১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি ব্রিটেনের অক্সফোর্ডে জন্ম হকিংয়ের। তাৎপর্যপূর্ণ এই তারিখটাও। কারণ, ১৬৪২ সালের ৮ জানুয়ারি গালিলিয়োর মৃত্যুদিন। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে হকিং ভর্তি হন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। চেয়েছিলেন গণিত নিয়ে পড়তে। কিন্তু সেই সময়ে অক্সফোর্ডে গণিত না থাকায় পদার্থবিদ্যা নিয়েই ভর্তি হন। এর পরে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্রহ্মাণ্ডচর্চার পাঠ।

সেখানেই ১৯৬৩ সালে ধরা পড়ল মোটর নিউরনের জটিল রোগ। ডাক্তারেরা ভেবেছিলেন, বড়জোর দু’বছর বাঁচবেন হকিং। কিন্তু রোগকে উপেক্ষা করেই তিনি বাঁচলেন পাঁচ দশক। কণ্ঠস্বর হারানোর পরে বক্তৃতা করে গেলেন ভয়েস সিন্থেসাইজার দিয়ে। পেলেন ফান্ডামেন্টাল ফিজিক্স, আলবার্ট আইনস্টাইন, উলফ-সহ প্রথম সারির সব পুরস্কারই। হকিংয়ের জীবন শুধু বিজ্ঞানীরা নন, সারা পৃথিবীর বিশেষ ভাবে সক্ষম বহু মানুষের কাছেও প্রেরণা।

আরও পড়ুন: প্রশ্ন করতে শিখিয়েছেন, প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন

শ্রদ্ধা: হকিংয়ের মৃত্যুতে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গনভিল অ্যান্ড কিইস কলেজে অর্ধনমিত পতাকা। বুধবার। রয়টার্স

রোগকে উপেক্ষা করেই নিরন্তর চলেছে হকিংয়ের গবেষণা। সেই গবেষণার প্রথম বিচ্ছুরণ ১৯৭০ সালে। বিজ্ঞানী রজার পেনরোজের সঙ্গে যৌথ ভাবে হকিং হাজির করলেন ব্ল্যাক হোলের গাণিতিক ব্যাখ্যা। ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি এবং ধ্বংসের

স্বর্গ বলে সম্ভবত কিছু নেই। মৃত্যুর পরে জীবন বলেও কিছু হয় না। এই অসাধারণ ব্রহ্মাণ্ড উপভোগ করার জন্য আমাদের একটাই জীবন

স্টিফেন হকিং

গবেষণায় খুলে দিলেন নতুন দিক। ১৯৭৪ সালে ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণ গহ্বরের ব্যাখ্যায় নিয়ে এলেন কোয়ান্টাম তত্ত্বকে। নিজের তত্ত্বে জানালেন, ব্ল্যাক হোল সব কিছু আত্মসাৎ করে না, কিছু আবার ত্যাগও করে। ১৯৭৪ সালে ব্রিটেনের সব থেকে সম্মাননীয় বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান রয়্যাল সোসাইটিতে হকিং স্থান পেলেন কনিষ্ঠতম ‘ফেলো’ হিসেবে।

১৯৮৮ সালে আক্ষরিক অর্থেই লেখা হল ‘ইতিহাস’। প্রকাশিত হল হকিংয়ের প্রথম বই ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’। ২৩৭ সপ্তাহ ধরে টানা বেস্টসেলার ছিল। ৪০টিরও বেশি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে সেই ‘কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’কে। পরবর্তী সময়ে আরও বই লিখেছেন। কল্পবিজ্ঞানের দুনিয়ায় জন্ম দিয়েছেন কিশোর চরিত্র ‘জর্জ’-এর। সেই সিরিজের শেষ বই ২০১৬ সালে, ‘জর্জ অ্যান্ড দ্য ব্লু মুন’।

শুধু বিজ্ঞানী ছিলেন না তিনি। স্টিফেন হকিংয়ের মধ্যে লুকিয়ে ছিল কৌতূহলী, শিশুসুলভ একটা মন এবং আদ্যন্ত এক প্রেমিক। কলেজ জীবনেই প্রেম জেন ওয়াইল্ডের সঙ্গে। ১৯৬৫ সালে বিয়ে। তিন সন্তানের জন্ম এবং ২৬ বছরের দাম্পত্য শেষে ১৯৯১ সালে বিচ্ছেদ। ১৯৯৫ সালে ফের বিয়ে, এলেন মেসন নামে এক নার্সকে। ২০০৬ সালে তাঁর সঙ্গেও বিচ্ছেদ। শেষ জীবনে অবশ্য কাছাকাছি এসেছিলেন জেন এবং স্টিফেন। ছেলে, মেয়ে, নাতি-নাতনিদের নিয়ে ঘরোয়া জীবনও কাটাচ্ছিলেন। গবেষণার জগৎ নিয়ে বাজি ধরাও ছিল তাঁর নেশা। হিগস বোসন আবিষ্কার হবে না— এর পক্ষে বাজি ধরে ২০১২ সালে ১০০ ডলার হেরেছিলেন হকিং।

আরও পড়ুন: কৃষ্ণগহ্বর অত কালো নয়, তিনিই বলেছিলেন

পদার্থবিদ্যা, ব্রহ্মাণ্ড গবেষণায় হকিং ছিলেন পথিকৃৎ। শেষ জীবনে তাঁর উপলব্ধি ছিল, মানুষকে বাঁচতে হলে পৃথিবীর বাইরেও বসতি গড়তে হবে। বুধবার সকালে যেন নিজেই পেরিয়ে গেলেন পৃথিবীর শেষ স্টেশন।

Stephen Hawking Scientist Passed Away স্টিফেন হকিং
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy