Advertisement
E-Paper

রাশিয়া-চিনের আগেই চাঁদে পরমাণু চুল্লি বানাতে চাইছে আমেরিকা! তিন বৃহত্তম শক্তির মাথায় কি আরও ‘বড়’ লক্ষ্য?

চাঁদে পরমাণু চুল্লি তৈরি করতে আগেই হাত মিলিয়েছে রাশিয়া এবং চিন। বিভিন্ন রিপোর্টে দাবি, পৃথিবীর উপগ্রহে পরমাণু চুল্লি কী রকম হবে, মস্কো এবং বেজিং ইতিমধ্যেই তার নীলনকশা তৈরি করে ফেলেছে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২৫ ১৬:১৫
চাঁদে পরমাণু চুল্লি তৈরির প্রস্তুতি শুরু করে দিল আমেরিকা।

চাঁদে পরমাণু চুল্লি তৈরির প্রস্তুতি শুরু করে দিল আমেরিকা। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

লক্ষ্য কি শুধুই ঘাঁটি তৈরি বা জমি ‘দখল’? না কি চুল্লি গ়ড়ে পরমাণু অস্ত্র তৈরির দিকে আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়া? চাঁদ নিয়ে বিশ্বের প্রথম তিন পরমাণু শক্তিধর দেশের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাই এই প্রশ্ন তুলে দিল।

চাঁদে পরমাণু চুল্লি তৈরি করতে আগেই হাত মিলিয়েছে রাশিয়া এবং চিন। বিভিন্ন রিপোর্টে দাবি, পৃথিবীর উপগ্রহে পরমাণু চুল্লি কী রকম হবে, মস্কো এবং বেজিং ইতিমধ্যেই তার নীলনকশা তৈরি করে ফেলেছে। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া-চিনের আগেই চাঁদে পরমাণু চুল্লি গ়়ড়তে চাইছে আমেরিকা।

মার্কিন সংবাদপত্র ‘পলিটিকো’ জানিয়েছে, রাশিয়া-চিন যেখানে আগামী ১০ বছরের মধ্যে চাঁদে পরমাণু চুল্লি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে, সেখানে আমেরিকা চাইছে ২০২৯ সালের মধ্যেই পরমাণু চুল্লি তৈরি করে ফেলতে। এই মর্মে সম্প্রতি নির্দেশিকাও জারি করেছেন আমেরিকার মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্র নাসার অস্থায়ী অধিকর্তা সন ডাফি।

আমেরিকার পরিবহণ দফতরের সচিব ডাফিকে গত মাসেই নাসার অধিকর্তা পদে বসিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ঘটনাচক্রে, তার পর থেকেই চাঁদে পরমাণু চুল্লি গড়ার তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি ডাফি যে নির্দেশিকা জারি করেছেন, তাতে তিনি স্পষ্টই জানিয়েছেন, রাশিয়া এবং চিন যদি কোনও ভাবে আমেরিকার আগে চাঁদে পরমাণু চুল্লি তৈরি করে ফেলে, তা হলে খুব সহজেই চাঁদের একাংশ তাদের দখলে চলে যাবে। তাই মস্কো-বেজিংয়ের আগেই চাঁদে ঘাঁটি গাড়তে হবে আমেরিকাকে।

নাসার অধিকর্তার নির্দেশ, আগামী এক মাসের মধ্যেই এমন এক জনকে বাছাই করে ফেলতে হবে, যিনি চাঁদে পরমাণু চুল্লি তৈরির প্রকল্পের তদারকি করবেন। আর কী ভাবে গোটা প্রকল্প রূপায়িত হবে, তার নীলনকশা যেন আগামী দু’মাসের মধ্যে জমা পড়ে যায়।

প্রশ্ন হল, পরমাণু চুল্লিই কেন? যদি বিদ্যুতের চাহিদাই প্রধান কারণ হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে সোলার প্যানেল, অর্থাৎ সৌরবিদ্যুতের কথা কেন ভাবা হচ্ছে না? বিজ্ঞানীদের একাংশের মত, চাঁদে এক দিন মানে পৃথিবীতে অন্তত চার সপ্তাহ। সেই হিসাবে দু’সপ্তাহ দিন আর দু’সপ্তাহ রাত। আর রাতে সোলার প্যানেল থেকে বিদ্যুৎ তৈরি সম্ভব নয়। কিন্তু পরমাণু চুল্লি দিন-রাত কাজ করতে পারে। সেই কারণে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পরমাণু চুল্লি তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাশিয়া-চিন। এ বার আমেরিকাও!

কিন্তু দক্ষিণ মেরু কেন? বিশেষজ্ঞদের মত, চাঁদের এই অংশে সূর্যের আলো সে ভাবে পড়ে না। দক্ষিণ মেরুর বিস্তীর্ণ এলাকা চিরআধারে নিমজ্জিত থাকে। কিন্তু অনেকের অনুমান, এই অংশের প্রাণের অস্তিত্বের জন্য উপযোগী সম্পদ পাওয়া যেতে পারে। সেই কারণে অধিকাংশ চন্দ্র অভিযানও হয় এই দক্ষিণ মেরুতেই। তবে এই অংশ যতটা সম্ভাবনাময়, ততটাই ‘বিশ্বাসঘাতক’। দক্ষিণ মেরুর পদে পদে রয়েছে বিপদ এবং প্রতিকূলতার হাতছানি। এখানে বিশাল বিশাল কিছু খাদ রয়েছে। কিছু খাদের বিস্তার হাজার কিলোমিটারেরও বেশি। তাতে বরফও মিলতে পারে। অর্থাৎ, জল। এই কারণেই দক্ষিণ মেরুকে বেছে নেওয়া হয়েছে।

২০২২ সাল থেকেই চাঁদে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির কথা ভাবছে নাসা। অন্তত ৪০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম একটি ছোটখাটো চুল্লির নকশা তৈরির জন্য কিছু সংস্থাকে অর্থও দিয়েছিল। কিন্তু তা বেশি দূর এগোয়নি। এ বার নাসা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা এমন পরমাণু চুল্লি তৈরি করবে, যা অন্তত ১০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। এই পরিমাণ বিদ্যুতে আমেরিকার অন্তত ৮০টি গৃহস্থের চাহিদা মেটে। কিন্তু চাঁদে ওই বিদ্যুৎ দিয়ে কী হবে, সে বিষয়ে এখনও অবশ্য স্পষ্ট ভাবে কিছু জানানো হয়নি। শু‌ধু এটুকু বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে চাঁদে নিজেদের ঘাঁটি তৈরি করতে ওই বিদ্যুৎ কাজে লাগবে।

কিন্তু শুধুই কি চাঁদে ঘাঁটি তৈরি লক্ষ্য? না কি পাখির চোখ অন্য কিছুতে? ঘটনাচক্রে, আমেরিকা, রাশিয়া এবং চিন— এই তিন দেশই পরমাণু শক্তিধর দেশ। বিশ্বের কোন দেশের হাতে কত পরমাণু অস্ত্র রয়েছে, সেই তালিকায় এই তিন দেশই একেবারে প্রথম দিকে। সম্প্রতি সুইডেনের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত নজরদার সংস্থা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট বা সিপ্রি-র রিপোর্ট বলছে, রাশিয়ার কাছেই সবচেয়ে পরমাণু অস্ত্র হয়েছে। সংখ্যাটা প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার। তার পরেই আমেরিকা। তাদের হাতেও পাঁচ হাজারের বেশি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। চিন তৃতীয় নম্বরে। অনেকের মত, চাঁদে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির আড়ালে তারা পরমাণু অস্ত্র তৈরির কথা যে ভাবছে না, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। সেই সম্ভাবনা যে একেবারে নেই, তা-ও কেউ জোর দিয়ে বলতে পারছেন না।

আবার কারও কারও মত, যদি চাঁদে পরমাণু অস্ত্র তৈরিই আসল উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তা হলে সেই কাজ খুব একটা সহজ হবে না। এবং তা খুব শীঘ্র সম্ভবও নয়। কারণ, আমেরিকা বা রাশিয়া-চিন যে নকশা তৈরি করেছে, তাতে এখনও বহু প্রশ্নেরই উত্তর নেই। যেমন রুশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী ইউরি-র মত, বিদ্যুৎ উৎপাদনের সময় আণবিক চুল্লিকে ঠান্ডা করার প্রয়োজন রয়েছে। চাঁদে সেটা কী ভাবে সম্ভব, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ফলে কী হতে পারে আর না-পারে, তা উত্তর এখনও ভবিষ্যতের গর্ভেই।

Nuclear Reactor Moon Donald Trump
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy