Advertisement
E-Paper

ক্যানসার কোষ শক্তি পায় কোথা থেকে, সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা! চিকিৎসায় বড় অগ্রগতির সম্ভাবনা

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, তাঁদের এই গবেষণা এই মারণ রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন দিক খুলে দেবে। বাধার মুখে পড়েও কী ভাবে আবার মাথা তুলে দাঁড়ায় ক্যানসারের কোষ, তা-ও কিছুটা বুঝতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:৫২

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

কখন, কী ভাবে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করে ক্যানসারের কোষ? আরও জাঁকিয়ে বসে মানুষের শরীরে? এই নিয়ে এ বার একটা ধারণা পেলেন বিজ্ঞানীরা। ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর বায়োপ্সি খতিয়ে দেখে কিছু গবেষণা করেছে বার্সেলোনার একটি প্রতিষ্ঠান। তাঁরা গবেষণা করে দেখেছেন, শারীরিক ভাবে চাপে পড়লেই নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করতে সমর্থ হয় ক্যানসারের কোষগুলি। এই শক্তির জন্যই ডিএনএ-র যে ক্ষতি হয়, তা মেরামত করে ফেলে ওই কোষ। এমনটাই দাবি করেছেন বিজ্ঞানীদের ওই দল।

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, তাঁদের এই গবেষণা এই মারণ রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন দিক খুলে দেবে। বাধার মুখে পড়েও কী ভাবে আবার মাথা তুলে দাঁড়ায় ক্যানসারের কোষ, তা-ও কিছুটা বুঝতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। কী কী বাধার মুখে পড়ে ক্যানসারের কোষ? বিজ্ঞানীরা বলছেন, টিউমর, ছিদ্রযুক্ত রক্তনালির মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় বাধাপ্রাপ্ত হয় ক্যানসারের কোষ। সে সময়ই বিশেষ ভাবে এই শক্তি অর্জন করে বাধা প্রতিরোধ করে শরীরে আরও ছড়িয়ে পড়তে সমর্থ হয় ক্যানসারের কোষ।

বার্সেলোনার সেন্টার ফর জেনোমিক রেগুলেশন (সিআরজি) এই গবেষণা করেছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে নেচার কমিউনিকেশনসে। গবেষকদের ওই দল একটি বিশেষ মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করেছে। সেই মাইক্রোস্কোপ জীবিত কোষে চাপ দিয়ে তার আকার কমিয়ে দিতে পারে। ওই মাইক্রোস্কোপের চাপের ফলে তিন মাইক্রন পর্যন্ত বহরে ছোট হয় কোষ। যার অর্থ একটি চুলের ৩০ ভাগের এক ভাগ ব্যাস। বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেন, চাপ দেওয়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কোষে থাকা মাইটোকনড্রিয়া সরে গিয়ে নিউক্লিয়াসের পৃষ্ঠে চলে যায়। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত এটিপি (শক্তি) ক্ষরণ করতে থাকে।

সারা এসডেলসি বলেন, ‘‘মানবকোষে মাইটোকনড্রিয়ার কী ভূমিকা, এই গবেষণার পরে আমরা নতুন করে ভাবতে বাধ্য হয়েছি। ওরা কিন্তু শুধু ব্যাটারি নয়, যা কোষকে শক্তি জোগায়। কোষ যখন প্রচণ্ড চাপে পড়ে, সে রকম জরুরিকালীন পরিস্থিতিতে কার্যোদ্ধারে ছুটে আসে মাইটোকনড্রিয়া।’’

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মাইটোকনড্রিয়া একটি চক্র তৈরি করে। সেই চক্র এতটাই দৃঢ় হয় যে কোষের নিউক্লিয়াসে চাপ পড়ে টোল পড়ে। ক্যানসার কোষের ৮৪ শতাংশের মধ্যে এই প্রক্রিয়া লক্ষ্য করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই গঠনকে তারা বলছেন ‘এনএএম’ (নিউক্লিয়াস অ্যাসোসিয়েটেড মাইটোকনড্রিয়া)। এই এনএমএম কী ভাবে কাজ করে তা দেখার জন্য গবেষকেরা একটি ফ্লুরোসেন্ট সেন্সর ব্যবহার করেন। চাপের ফলে ক্যানসার কোষে যে এটিপি (শক্তি) উৎপন্ন হয়, তা নিউক্লিয়াসে প্রবেশ করলে এই সেন্সর আলোকিত হয়। কোষগুলি চাপের মধ্যে পড়লেই এই সেন্সর সঙ্কেত দেয়।

গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বাইরে থেকে কোষে চাপ প্রয়োগের ফলে ডিএনএ চাপে পড়ে যায়। তার ভিতরে থাকা জিনোম তখন জট পাকিয়ে যায়। কোষ তখন সেই ক্ষত মেরামতের জন্য এটিপির উপরেই নির্ভর করে। প্রচণ্ড চাপে পড়লে কোষে যে অতিরিক্ত পরিমাণ এটিপি উৎপন্ন হয়, তা সহজেই ওই ক্ষত মেরামত করে দেয়। এক ঘণ্টার মধ্যেই এই কাজ করে দেয় সে।

এই বিষয়টি নিয়ে আরও নিশ্চিত হতে ক্যানসার আক্রান্ত ১৭ জন রোগীর ব্রেস্টে থাকা টিউমরের বায়োপ্সি নিয়ে পরীক্ষা করেন ওই বিজ্ঞানীরা। দলের অন্যতম গবেষক ঋতব্রত ঘোষ জানিয়েছেন, সেই পরীক্ষা থেকেই বিষয়টি নিয়ে অনেক বেশি নিশ্চিত হয়েছেন তাঁরা। তাঁরা দেখেছেন, পেশীকে নমনীয় করে যে প্রোটিন তার, তা নিউক্লিয়াসের চারপাশেও থাকে। এন্ডোপ্লাসমিক রেটিকিউলাম নিউক্লিয়াসের চারপাশে একটি জাল তৈরি করে। এই জাল এবং প্রোটিন তার এনএএমকে ধরে রাখে। তার চারপাশে তৈরি হয় চক্র। এই পরিস্থিতিতে কোষে এক রাসায়নিক (লাট্রানকুলিন এ) প্রয়োগ করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাতে দেখেছেন এনএএমের গঠন ভেঙে পড়েছে। এটিপির জোগানও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাতেই আশার আলো দেখছেন বিজ্ঞানীরা।

Cancer Scientist
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy