Advertisement
E-Paper

এসপি বাংলো ঘুরে হাতি পৌঁছে গেল জাতীয় সড়ক

পাঁচিল থেকে মুখ বাড়িয়ে পুলিশ সুপারের বাংলোয় খানিক উঁকিঝুকি। সেখান থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সুপারের বাংলোর পাশ দিয়ে হেঁটে সে সোজা উঠল জাতীয় সড়কে! তার আগে অবশ্য সে ঘুরে বেড়িয়েছে বেশ কিছু গ্রাম। মঙ্গলবার সকালে সিউড়িতে কয়েক ঘণ্টার জন্য এ ভাবেই পুলিশ এবং বন দফতরের কর্মীদের বতিব্যস্ত করে রাখল এক বুনো দাঁতাল। শেষমেশ তাকে সদাইপুরের দিকে পাঠিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল পুলিশ ও প্রশাসন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৩১
নানা মেজাজে গজরাজ। সকাল ৯টা। সে হেলেদুলে উঠে পড়ল সিউড়ির বাইপাসে। জনতা বালতি ভর্তি জল এগিয়ে দিতেই ছিটিয়ে শুরু হল কাকস্নান। স্নান শেষে উল্টে দিল বালতি। যেমন স্বভাব, চলল ট্রাকের গায়ে গা-ঘষাও। মঙ্গলবার ছবিগুলি তুলেছেন তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

নানা মেজাজে গজরাজ। সকাল ৯টা। সে হেলেদুলে উঠে পড়ল সিউড়ির বাইপাসে। জনতা বালতি ভর্তি জল এগিয়ে দিতেই ছিটিয়ে শুরু হল কাকস্নান। স্নান শেষে উল্টে দিল বালতি। যেমন স্বভাব, চলল ট্রাকের গায়ে গা-ঘষাও। মঙ্গলবার ছবিগুলি তুলেছেন তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

পাঁচিল থেকে মুখ বাড়িয়ে পুলিশ সুপারের বাংলোয় খানিক উঁকিঝুকি। সেখান থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সুপারের বাংলোর পাশ দিয়ে হেঁটে সে সোজা উঠল জাতীয় সড়কে! তার আগে অবশ্য সে ঘুরে বেড়িয়েছে বেশ কিছু গ্রাম।
মঙ্গলবার সকালে সিউড়িতে কয়েক ঘণ্টার জন্য এ ভাবেই পুলিশ এবং বন দফতরের কর্মীদের বতিব্যস্ত করে রাখল এক বুনো দাঁতাল। শেষমেশ তাকে সদাইপুরের দিকে পাঠিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল পুলিশ ও প্রশাসন। গত কয়েক মাসে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে দাঁতাল ঢুকে পড়াটা খুব নতুন নয়। দুবরাজপুর, সাঁইথিয়া, নলহাট, রামপুরহাটের বিভিন্ন এলাকায় দাঁতাল ঢুকে পড়ে এলাকায় দাপিয়ে বেরিয়েছে। হাতির হানায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এ বার কয়েক ঘণ্টা ধরে দাঁতালের দাপিয়ে বেড়ানো প্রত্যক্ষ করলেন খাদস জেলা সদর এবং লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারাও।
বস্তুত, জাতীয় সড়ক ধরে ঘোরাঘুরি করাটা যেন অভ্যাসে পরিণত করেছে দলছুট দাঁতালেরা। দিন কয়েকে আগেই দুর্গাপুর থকে অজয় পেরিয়ে আসা এক দাঁতালকে সাত সকালে দুবরাজপুর ও সদাইপুর থানা এলাকা দিয়ে যাওয়া রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে দেখেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ দিন সকাল থেকে প্রায় এক বেলা ফের একই দৃশ্যের সাক্ষী থাকলেন সিউড়ি শহর ও লাগোয়া তিলপাড়া পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারাও। জাতীয় সড়ক ধরে হাঁটতে হাঁটতে কখনও লাগোয়া গ্রামে, কখনও বা এসপি, ডিএম বাংলো ঘুরে রাস্তার ধারে দোকানে থাকা সব্জি বা পানীয় জল খেয়ে দুলকি চালে ফের জাতীয় সড়কে গিয়ে যান চলাচলে গতি স্লথ করে দেওয়া— সবাটাই ঘটল গজরাজের ইচ্ছায়। এ দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত হাতিটির অবস্থান ছিল সদাইপুর থানা এলাকায় থাকা বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র লাগোয়া জঙ্গলে। জাতীয় সড়কের খুব কাছাকাছি।
বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সোমবার রাতেই মহম্মদবাজার এলাকায় ঢুকে পড়ে ছিল দাঁতালটি। সকাল সকাল ময়ূরাক্ষী নদীর উপরে থাকা তিলপাড়া ব্যারাজের উপর থাকা সেতু পার করে জাতীয় সড়ক ধরে সিউড়িতে বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কাছে পৌঁছে যায় সে। ঘড়িতে তখন সকাল ৮টা। এর পর জাতীয় সড়কের বাঁ দিকে তিলপাড়া পঞ্চায়েতের কামালপুর গ্রামে নেমে যায়। তত ক্ষণে বুনো হাতি ঢোকার খবর সিউড়ি শহরে অনেকেই পেয়ে তা দেখতে ছুটেছেন। পৌঁছে গিয়েছেন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও।
কিছুক্ষণ গ্রামে কাটিয়ে ফের জাতীয় সড়ক ধরে সিউড়ি শহরের দিকে হাঁটতে শুরু করে হাতিটি। কিছু ক্ষণ হেঁটে জাতীয় সড়ক ছেড়ে শহরের মধ্যে থাকা এসপি বাংলোর দিকে হাতিটি আসতে শুরু করলে তৎপর হয় সিউড়ি থানার পুলিশ। পাছে বড়কর্তার বাংলোয় ঢুকে পড়ে, পাছে শহরে কারও অনিষ্ট করে। কিন্তু, দুলকি চালে চলতে থাকা হাতিটি নিজের খেয়ালেই ছিল। তবে হাতিটি শান্ত ছিল। কারও কোনও ক্ষতি হয়নি। বরং পথের ধারে বাসিন্দাদের বাড়িয়ে দেওয়া বালতি থেকে জল খাওয়া, রাস্তার ধারে দোকান থেকে সব্জি খাওয়া, সবটাই চলতে থাকল। এসপি বাংলোয় উঁকি মেরে সে আবার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের বাংলো পাশ দিয়ে রাস্তা ধরে ফের জাতীয় সড়কে ওঠে। কাছাকাছিই ছিল ডিএম বাংলোও। বড়বাগান মোড়ের কাছে রাস্তায় তিনটি লরি দাঁড় করিয়ে জাতীয় সড়ক ধরে হাঁটতে থাকা হাতির স্বাভাবিক গতি রুখতে একটা চেষ্টা করেছিল পুলিশ। উদ্দেশ্য ছিল, হাতিটিকে কড়িধ্যার দিকে নিয়ে যাওয়া। যদিও সেই চেষ্টা সফল হয়নি। হাতিটি আবদারপুরের দিকে হাঁটতে থাকলে রাস্তায় সাময়িক যানজটের সৃষ্টি হয়।

এ দিকে, বুনো হাতিকে সঠিক দিশা না দিতে পেরে এবং অতি উৎসাহীদের ভিড় সামলাতে না পেরে মেজাজ হারান সিউড়ি থানার আই সি সমীর কোপ্তিও। তাঁর কোপে পড়ে সংবাদমাধ্যমও। কেন এত ছবি তুলছেন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা, তা নিয়ে দু’চার কথা শুনিয়েও দেন। যদিও বুনো হাতি পুলিশের মর্জির ধার ধারেনি। তত ক্ষণে ১১টা বেজে গিয়েছে। অবশেষে পুলিশ ও উপস্থিত বন দফতরের কর্মীদের স্বস্তি দিয়ে দুপুরে হাতি সিউড়ি ছেড়ে সদাইপুরের দিকে চলে যায়। দিনের শেষে পরে বীরভূমের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা বর্ধমানের ডিএফও অজয় দাস বলেন, ‘‘ঝাড়খণ্ড থেকে কোনও ভাবে হাতিটি বীরভূমে ঢুকে পড়েছে। এ দিন রাতেই তাকে ফের ঝাড়খণ্ডে পাঠানোর চেষ্টা করা হবে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy