ওড়িশায় যেতে বাধা পেয়ে এক রাতের মধ্যে সীমান্তের নয়াগ্রাম থেকে দেড়শো কিলোমিটার পথ উজিয়ে মেদিনীপুর সদর ব্লকের চাঁদড়ায় ফিরে গেলে দলমার পালের ৫৫টি হাতি। খড়্গপুর বন বিভাগ সূত্রের খবর, বাকি ৪৫টির মতো হাতির দল এখনও ওড়িশা সীমানাবর্তী নয়াগ্রাম ব্লকের কেশররেখা রেঞ্জের বাঁশখালি জঙ্গলে রয়েছে। ওড়িশার দিকে যেতে বাধা পেয়ে এই দলটিও ফিরে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। হাতির স্বাভাবিক গতিপথে এভাবে ওড়িশা বন দফতর ও সেখানকার বাসিন্দারা ক্রমাগত বাধা দেওয়ায় দলমার পালের একশোটি হাতি গত কয়েক দিন ধরে নয়াগ্রাম ব্লকের জঙ্গল লাগোয়া লোকালয় দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল। সঙ্গে গোটা পনেরো শাবক নিয়ে হাতির দলটি নয়াগ্রামের বাঁশখালি ও জরিঘাটি সীমানা দিয়ে ওড়িশার ভেদুয়াশোল জঙ্গলে বার কয়েক ঢুকেও পড়েছিল। স্থানীয় সূত্রের খবর, ওড়িশার বনকর্মী ও সেখানকার গ্রামবাসীরা হাতির দলটিকে খেদিয়ে ফের পশ্চিম মেদিনীপুরের নয়াগ্রামে ঢুকিয়ে দেন। চিরাচরিত স্বাভাবিক গতিপথে বাধা পেয়ে হাতিরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গিয়ে আরও ক্ষয়ক্ষতি করতে থাকে। বাধা পেয়ে রবিবার একশোটি হাতির মধ্যে ৫৫টি হাতি নয়াগ্রাম থেকে সুবর্ণরেখা পেরিয়ে সাঁকরাইলে চলে আসে। এরপর সোমবার কলাইকুণ্ডা রেঞ্জের শঙ্করবনির জঙ্গল হয়ে হাতিগুলি ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক পার হয়ে মানিকপাড়া রেঞ্জ এলাকা হয়ে কংসাবতী নদী পেরিয়ে চাঁদড়ার দিকে ফিরে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, কার্যত উর্ধ্বশ্বাসে দ্রুত গতিতে ধুলো উড়িয়ে ফিরে গিয়েছে হাতিগুলি। ফেরার সময় সাঁকরাইল ও ঝাড়গ্রাম ব্লকের ৩০টি গ্রামের বিস্তীর্ণ আমন ধানের খেত তছনছ করে দেয় তারা। ঝাড়গ্রামের সরডিহা অঞ্চলের পেঁচাপাড়া গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ঘর ভেঙেছে হাতিরা। অন্যদিকে, নয়াগ্রামের বাঁশখালির জঙ্গলে থাকা ৪৫টি হাতিও আশেপাশের এলাকায় কার্যত তাণ্ডব শুরু করেছে। হাতিরা নয়াগ্রাম ব্লকের ধুমসাই গ্রামে দু’টি মাটির বাড়ি ভেঙেছে। নয়াগ্রাম ব্লকের ঘোড়াতোড়িয়া, বাঁকশোল, মরাপাদা, পাইলটচক, কুণ্ডলবনি, বাঁশখালি ও জরিঘাটি গ্রামের চাষজমির আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি করেছে হাতিরা।
খড়্গপুরের ডিএফও অঞ্জন গুহ বলেন, “স্বাভাবিক গতিপথে বাধা পেয়ে এক রাতের মধ্যে ৫৫টি হাতি চাঁদড়ার দিকে ফিরে গিয়েছে। বাকি ৪৫টি হাতি ওড়িশা সীমান্তে নয়াগ্রামের বাঁশখালি জঙ্গলে রয়েছে। অসময়ে এভাবে জোর করে হাতিদের ফেরানোর বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বেগে রয়েছি। কারণ, জোর করে হাতিদের গতিপথ বদলের চেষ্টা হলে বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকে। ফেরার সময় হাতিগুলির আচরণেই সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এই উদ্বেগের কথা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”