Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ক্লান্তি নেই, লাল-রাজত্বে ঢুকেই কাজে নামল মঙ্গলযান

দশ মাস ধরে ছুটেও এতটুকু ক্লান্ত হয়নি সে! বরং পৌঁছনোর কয়েক ঘণ্টা পর থেকেই কাজ শুরু করে দিয়েছে মঙ্গলযান। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) সূত্রের খবর, বুধবার রাতেই পাঁচটি ছবি এসে পৌঁছেছে বিজ্ঞানীদের হাতে। সেগুলি বিশ্লেষণের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। সেই কাজ শেষ হওয়ার আগে মঙ্গলযানের পাঠানো তথ্য নিয়ে মুখ খুলতে রাজি নয় ইসরো। তবে সংস্থার একটি সূত্র বলছে, প্রথমেই যে মারাত্মক কোনও তথ্য মিলবে, তেমন আশা নেই বললেই চলে।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:১৭
Share: Save:

দশ মাস ধরে ছুটেও এতটুকু ক্লান্ত হয়নি সে! বরং পৌঁছনোর কয়েক ঘণ্টা পর থেকেই কাজ শুরু করে দিয়েছে মঙ্গলযান। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) সূত্রের খবর, বুধবার রাতেই পাঁচটি ছবি এসে পৌঁছেছে বিজ্ঞানীদের হাতে। সেগুলি বিশ্লেষণের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। সেই কাজ শেষ হওয়ার আগে মঙ্গলযানের পাঠানো তথ্য নিয়ে মুখ খুলতে রাজি নয় ইসরো। তবে সংস্থার একটি সূত্র বলছে, প্রথমেই যে মারাত্মক কোনও তথ্য মিলবে, তেমন আশা নেই বললেই চলে।

বুধবার সকালেই লাল গ্রহের কক্ষপথে ঢুকে পড়েছে ভারতের মঙ্গলযান। প্রথম বারের চেষ্টাতেই সফল হয়েছেন এ দেশের বিজ্ঞানীরা। তৈরি হয়েছে নতুন এক ইতিহাস। এ বার উপবৃত্তাকার কক্ষ পথে মঙ্গলকে কেন্দ্র করে পাক খাবে সে। এক বার কাছে আসবে, আর এক বার গ্রহের দূরে যাবে। সব চেয়ে কাছে যখন আসবে, মঙ্গল থেকে তার দূরত্ব হবে ৪২৩ কিলোমিটার। আর দূরত্ব যখন সব চেয়ে বেশি, ব্যবধান ৮০,০০০ কিলোমিটার। মঙ্গলকে এক বার পরিক্রম করতে ভারতীয় যানের সময় লাগবে ৭৬.৭২ ঘণ্টা (৩.২ দিন)। আর এ ভাবে ঘুরতে ঘুরতেই তার শরীরে বসানো পাঁচটি যন্ত্রের সাহায্যে মঙ্গলের মাটির গঠন, চরিত্র, আবহাওয়ার প্রকৃতি, বাতাসে মিথেন গ্যাসের চিহ্ন রয়েছে কি না এবং বায়ুমণ্ডলের উপরের দিকে অ-তড়িদাহত কণার সম্পর্কে গবেষণা করবে মঙ্গলযান।

ইসরো সূত্রের খবর, মঙ্গল গবেষণায় বিশ্বের গবেষকদের চোখ এখন একটাই দিকে। তা হল মঙ্গলে মিথেন গ্যাসের উপস্থিতি রয়েছে কি না? মঙ্গলযানে সেই মিথেন গ্যাসের সন্ধানকারী যন্ত্রও বসিয়ে রেখেছেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের একাংশের বক্তব্য, মিথেন গ্যাসের অস্তিত্ব মিললে বোঝা যাবে, এক সময়ে মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব ছিল। “সে ক্ষেত্রে মহাকাশ গবেষণায় ফের নতুন ইতিহাস তৈরি করবে ইসরো।” বলছেন মুম্বইয়ের ইন্ডিয়ান অ্যাস্ট্রোবায়োলজি রিসার্চ সেন্টারের বিজ্ঞানী পুষ্কর বৈদ্য। কিন্তু মঙ্গলযানের পক্ষে মিথেন গ্যাস খুঁজে বের করা কতটা সম্ভব, তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন রয়েছে। অনেকেই বলছেন, কিউরিওসিটিকেও মিথেন সন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে পারেনি। মাটিতে নেমে রোভার যা পারেনি, কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে মঙ্গলযানের পক্ষে এই কাজ কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বিজ্ঞানীর মধ্যেও। একই সুর নাসার মঙ্গল অভিযানের সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানী অমিতাভ ঘোষেরও। তবে তিনি মনে করেন, মঙ্গলযান পারবে না, এটা এখনই নিশ্চিত করে বলা যায় না।

মঙ্গল নিয়ে অবশ্য সেই ১৯৬৯ সাল থেকেই গবেষণা চলছে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা, রাশিয়া, ইওরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার অনেকগুলি কৃত্রিম উপগ্রহ (অরবাইটার) এবং মঙ্গলগাড়ি (রোভার) লাল গ্রহের মাটিতে কাজ করেছে। সোমবারই মঙ্গলে পৌঁছেছে নাসার নতুন কৃত্রিম উপগ্রহ ‘মাভেন’। তথ্য পাঠাতে শুরু করেছে সে-ও। এত কিছুর পরেও মিথেন ছাড়া আর কী নতুন তথ্য দেবে ভারতের এই ‘দূত’?

বিজ্ঞানীরা বলছেন, মঙ্গল নিয়ে বহু গবেষণাই এখনও অসমাপ্ত রয়েছে। তা না হলে মঙ্গলযানের সময়েই নাসা ফের নতুন করে ‘মাভেন’ নামে একটু কৃত্রিম উপগ্রহকে সেখানে পাঠাত না। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা বলছেন, মঙ্গলযানের তথ্য ভারতের নিজস্ব হবে। উপকৃত হবেন দেশের গবেষকেরাই। বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের বিজ্ঞানী-শিক্ষক সুজন সেনগুপ্ত বলছেন, মঙ্গলযানে বসানো মার্স কালার ক্যামেরা এবং থার্মাল ইনফ্রারেড ইমেজিং স্পেকট্রোমিটার মঙ্গলের মাটি নিয়ে নতুন তথ্য দিতেই পারে। বিশেষ করে মঙ্গলের মাটির ভূতাত্ত্বিক গঠন কী, সেখানে সাম্প্রতিক কোনও সময়ে অগ্ন্যুৎপাত হয়েছে কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়। সে বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য মিললে অভিযানের গুরুত্ব অনেকটাই বেড়ে যাবে।

ইসরোর এক মুখপাত্র বৃহস্পতিবার জানান, পৌঁছনোর পরেই কয়েক ঘণ্টা মঙ্গলযানের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করে দেখেন তাঁরা। দেখা যায়, কাজ করার জন্য একেবারেই ‘তরতাজা’ রয়েছে সে। তার পরে যোগাযোগ ব্যবস্থায় কিছু অদলবদল করতেই তথ্য পাঠাতে শুরু করে সে। কী সেই বদল? ইসরো সূত্রের খবর, মঙ্গলযানে কাজ করার জন্য তিনটি অ্যান্টেনা রয়েছে। রওনা দেওয়ার পরে ‘লো গেন’ অ্যান্টেনা দিয়ে কাজ করা হচ্ছিল। অভিযানের শেষ পর্যায়ের জন্য মিডিয়াম গেন নামে একটি অ্যান্টেনা দিয়ে কাজ করা হয়েছিল। কিন্তু গবেষণার তথ্য ওই অ্যান্টেনা দিয়ে পাঠানো সম্ভব হবে না। তাই বুধবার রাতেই যোগাযোগ ব্যবস্থাকে হাই গেন নামে আর একটি অ্যান্টেনায় স্থানান্তরিত করা হয়। সেই থেকেই নিজের দায়িত্ব পালন শুরু করে সে।

বুধবার সাফল্যের পর ইসরোর সদর দফতর অন্তরীক্ষ ভবন এবং অন্যান্য শাখা অফিসগুলিতে কার্যত বিজয়োৎসব শুরু হয়। তার মধ্যেই অবশ্য কাজ চলেছে। শোনা যাচ্ছে, দ্বিতীয় মঙ্গল অভিযান কী ভাবে করা হবে, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে অন্তরীক্ষ ভবনে। তবে এখনই এই নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ ইসরো।

ইসরো কর্তারা যাই বলুন না কেন, বুধবারের পর থেকে ভারতীয় বিজ্ঞানী-ইঞ্জিনিয়ারদের শরীরী ভাষাই বলছিল, ছাড়পত্র পেলেই ফের ভিন গ্রহে পাড়ি দিতে প্রস্তুত তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE