Advertisement
E-Paper

‘চাকরি’ পেয়ে শান্ত এখন পাঁচ বছরের দুষ্টু বর্ষণ

পাঁচে পা দিতেই ‘চাকরি’ পেয়েছে ‘বর্ষণ’। খোদ মুখ্যমন্ত্রীর ‘ক্যান্ডিডেট’ বলে কথা!

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৫ ০২:৪০
মা আমনের সঙ্গে বর্ষণ। — ফাইল চিত্র।

মা আমনের সঙ্গে বর্ষণ। — ফাইল চিত্র।

পাঁচে পা দিতেই ‘চাকরি’ পেয়েছে ‘বর্ষণ’। খোদ মুখ্যমন্ত্রীর ‘ক্যান্ডিডেট’ বলে কথা!

কিন্তু এ যাত্রায় কেউ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে স্বজনপোষণের অভিযোগ তুলছেন না। মুখ্যমন্ত্রীও বর্ষণের চাকরি পাওয়ার খবর শুনে বলেছেন, ‘‘দেখবেন দুষ্টুমিটা কমিয়ে যেন, মন দিয়ে কাজ করে।’’ বন দফতর জানিয়েছে, মন দিয়েই কাজ করছে বর্ষণ। মায়ের পিছু পিছু পিঠে মাহুতকে নিয়ে সে এখন কুনকি হাতি হয়ে ওঠার প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।

বর্ষণের জন্ম ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে। কিন্তু নামকরণ হয়নি। ২০১২ সালে ডুর্য়াস সফরের সময়ে মমতার কানে যায়, গরুমারার ধূপঝোরার পিলখানার পোষা হাতি আমন-সূর্যের শাবকটি বেশ দুষ্টু। তাকে দেখতে ঝড়জলের মধ্যেই মাথায় ছাতা নিয়ে সেখানে যান মমতা। তখনই হস্তিশাবকটির নাম রাখেন ‘বর্ষণ’।

ভিআইপিদের দিয়ে এ ভাবে নামকরণ করানোর রেওয়াজটা নতুন কিছু নয়। কিন্তু নামকরণের পরে সে কথা বেমালুম ভুলে যাওয়াটাও অনেক ভিআইপি-র দস্তুর। মমতা কিন্তু নবান্নে বসেও নিয়মিত বর্ষণের খোঁজখবর নিয়েছেন। যতবার উত্তরবঙ্গ সফরে এসেছেন বর্ষণ কতটা বড় হয়েছে, কতটা ট্রেনিং পেল, কতটা দুষ্টুমি করছে তা জেনেছেন। হালের উত্তরবঙ্গ সফরেও মুখ্যমন্ত্রী সুকনার গভীর জঙ্গলে হাঁটার সময়ে সটান জানতে চেয়েছেন, ‘বর্ষণ’-এর চাকরি হল কি না! তখনই জলপইগুড়ির ডিএফও (বন্যপ্রাণ) সুমিতা ঘটক জানিয়ে দেন, ‘হ্যাঁ, বর্ষণ সবে চাকরিতে যোগ দিয়েছে।’’

এর পরেই ওঠে বর্ষণের দুষ্টুমির কথা। ছোট থেকেই বর্ষণের দস্যিপনার জন্যই ভারী দুশ্চিন্তায় ছিল বন দফতর। প্রশিক্ষণের গোড়ায় যা বলা হত, তার উল্টোটা করত সে। উঠতে বললে বসে পড়ত। বসতে বললে উঠে দাঁড়ত। ছুটতে বললে দাঁড়িয়ে পড়ত। তখন তাকে হেলানো মুশকিল। দাঁড়তে বললে জঙ্গলের মধ্যে এমন ছুট দিত যে ধরা মুশকিলের হয়ে যেত। ডিএফও-র তদারকিতে সকলের চেষ্টায় বর্ষণকে খানিকটা শোধরানো যায়। গত বর্ষায় পাঁচে পড়ার পরে কিছুটা শান্ত হয় সে।
এর পরেই সম্প্রতি তাকে চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বন দফতরের এক কর্তা ফিসফিসিয়ে জানান, ‘সিএম’স ক্যান্ডিডেট’ বলে কথা!

তবে গত মাসে কাজে যোগ দেওয়ার পর থেকে বর্ষণ কিন্তু শান্ত হয়ে গিয়েছে।
যেমন, কুনকি হিসেবে ‘চাকরি’ পাওয়ার পর গোড়ার
দিকে ‘ডিউটি’ হল, জঙ্গলে গিয়ে খাওয়ার উপযোগী গাছের ডালপালা নিয়ে আসা। সেটা ঠিকঠাকই করছে সে। তবে খাবার সংগ্রহ করে পিঠে দেওয়ার আগে নিজে ‘টেস্ট’ করতে একটু বেশি সময় নিচ্ছে। দু-একবার জঙ্গলে বেড়াতে যাওয়া, টহল দেওয়ার কাজে ‘ট্রায়াল’ দেওয়া হলেও তেমন বেগ দেয়নি। এক মাহুত জানান, গন্ডার দেখে একবার দাঁড়িয়ে পড়ে ফোঁসফোঁস শুরু করেছিল। সে যাত্রায় গন্ডারটিকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। আর একবার বাইসনের দল দেখে নড়তেই চায়নি। কখনও গাছের ডালে ময়ূর দেখলে শূঁড় তুলে খুনসুটি করে উড়িয়ে দিয়েছে। আবার কখনও জল ছিটিয়ে মাহুতকে ভিজিয়ে দিয়েছে। তবে সব মিলিয়ে ‘ট্রেনি-কুনকি’র কাজে খুশি ডিএফও। তিনি বলেন, “বর্ষণ ভাল ভাবেই শুরুটা করেছে। টহলও দিচ্ছে। সফল হবেই বলেই মনে করছি।”

বন দফতর সূত্রের খবর, কোনও পোষা হস্তিশাবকের বছর দু’য়েক বয়স হলে কুনকি হিসেবে ট্রেনিং শুরু হয়। তিন বছরের প্রশিক্ষণের পরে কতটা কাজ শিখল মহড়া হয়। তাতে সন্তুষ্ট হলেই কুনকি হিসেবে ‘কাজ পাকা’ হয়। বন দফতর সূত্রের খবর ‘কাজ পাকা’ হলে, সেই হাতিটির নামে খাতা তৈরি হয়। তার খাদ্য, ওষুধের জন্য সরাসরি রাজ্যের কোষাগার থেকে অর্থ বরাদ্দ হয়। বন দফতরের নিয়ম অনুযায়ী পিলখানায় থাকা অন্য হাতিদের জন্য সার্বিক বরাদ্দ হয়। কিন্তু যাদের নামে ‘সার্ভিস বুক’ খোলা হয়েছে, তাদের নামেই পৃথক বরাদ্দ হয়। বর্ষণও এখন সেই দলে। তবে বর্ষণের নামে অর্থ বরাদ্দ এখনও শুরু হয়নি। সে প্রক্রিয়া শেষ হতে আরও কিছু সময় লাগবে।

সহ প্রতিবেদন: অরিন্দম সাহা

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy