Advertisement
E-Paper

ঠিকাকর্মীকে থেঁতলে মারল দাঁতাল

গ্রাম ঘেঁষা জঙ্গলের মধ্যে দিয়েই রাস্তাটা। রবিবার সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ ওই রাস্তা দিয়েই ধান কাটতে যাচ্ছিলেন দুবরাজপুরের আসানশুলি গ্রামের বাবুরাম বাস্কি এবং তপন মুহুলি। গন্তব্য পাশের পাকুরিয়া গ্রাম। ঠিকায় কাজ করেন বলে একটু আগেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন ওঁরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৫ ০১:০৭
নিহত বাবুরামের শোকার্ত পরিজন। (ইনসেটে) বাসিন্দাকে সতর্ক করছে পুলিশ। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত

নিহত বাবুরামের শোকার্ত পরিজন। (ইনসেটে) বাসিন্দাকে সতর্ক করছে পুলিশ। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত

গ্রাম ঘেঁষা জঙ্গলের মধ্যে দিয়েই রাস্তাটা। রবিবার সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ ওই রাস্তা দিয়েই ধান কাটতে যাচ্ছিলেন দুবরাজপুরের আসানশুলি গ্রামের বাবুরাম বাস্কি এবং তপন মুহুলি। গন্তব্য পাশের পাকুরিয়া গ্রাম। ঠিকায় কাজ করেন বলে একটু আগেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন ওঁরা। কিন্তু, সামনে যে সাক্ষাত বিপদ অপেক্ষা করে রয়েছে, কে জানত।

বাবুরাম পিছনে বসে। সাইকেল চালাচ্ছিলেন তপন। একটু এগোতেই বিকট আওয়াজটা শুনে চমকে উঠেছিলেন। এ তো হাতির ডাক! কিন্তু, কিছু ভাবার আগেই সামনে চলে এসেছিল বিশাল দাঁতালটা। সাইকেল থেকে পড়ে গিয়েছিলেন দু’জনেই। তপন কোনও রকমে ছুটে পালতে পারলেও পারেননি বাবুরাম। মুহূর্তের মধ্যে হাতিটা এসে কী নৃশংস ভাবে শুঁড়ে পেচিয়ে নিয়ে আছাড় মারতে যাচ্ছিল বাবুরামকে, ব্যাস এটুকই দেখেছেন সঙ্গী তপন। তার পরেই উর্ধ্বশ্বাসে ছুটেছেন। পড়ে গিয়েছেন। আবার ছুটেছেন। চোখে জল এসে গিয়েছিল সঙ্গীর কথা ভেবে। বেশ কিছু ক্ষণ পরে ঘুরপথে গ্রামে দুঃসংবাদটা তপনই দেন।

ঘণ্টা দুয়েক পরে বরাত জোরে বেঁচে যাওয়া তপনই শোনাচ্ছিলেন গোটা ঘটনাটা।

এ দিকে রবিবার সকালের ওই ঘটনার খবর পেয়েই আসানশুলি জঙ্গলে পৌঁছে যায় পুলিশ ও বন দফতরের কর্মীরা। যোগ দেন গ্রামবাসী এবং আশপাশের গ্রামের লোকেরাও। তবুও আক্রমণে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া বাবুরামের দেহটা উদ্ধার করতে সাহস দেখাতে পারছিলেন না কেউ-ই। পাছে আবার আক্রমণের শিকার হতে হয় তাঁদেরও। নিষেধ করছিলেন বন কর্মী এবং পুলিশকর্মীরাও।

বন দফতর এ দিন জানিয়েছে, যে দাঁতালটির আক্রমণে বছর পঁয়ত্রিশের বাবুরামের মৃত্যু হল, ঝাড়খণ্ড থেকে আসা ওই দাঁতালই দিন কয়েক আগে রাজনগরের রানিগ্রামে এক সাধুর কুটিরে হানা দিয়েছিল। সে বার তার আক্রমণের শিকার ছিলেন কুটিরে আশ্রয় নেওয়া বর্ধমানের এক বাসিন্দা। মাস খানেকের মধ্যে ঝাড়খণ্ডের আরও দুই বাসিন্দাকে একই ভাবে থেঁতলে মেরেছে এই দাঁতাল। বন দফতর জানিয়েছে, হাতিটিকে ঝাড়খণ্ডে পাঠানো হলেও বারবার রাজনগরের ফেরত চলে আসছে। শনিবার গভীর রাতে সে রাজনগর থেকে দুবরাজপুরের আসানশুলি জঙ্গলে পৌঁছে গিয়েছিল। বিনা প্ররোচনায় মানুষকে মেরে ফেলার যে অভ্যাস দাঁতালটির তৈরি হয়ে গিয়েছে, সেটাই চিন্তায় ফেলেছে বন দফতরকে।

এ দিন শেষ পর্যন্ত এলাকবাসী মিলিত ভাবে দেহ উদ্ধারের দাবি জানায় বন দফতরের কাছে। বেলা ১১টা নাগাদ পিকআপ ভ্যান পাঠিয়ে বাবুরামের টুকরো টুকরো দেহাবশেষ বস্তায় ভরে উদ্ধার করা হয়। বাড়ির লোকের এমন অবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবুরামের পিসি লক্ষ্মী টুডু, মা ভাবিনি বাস্কি এবং অন্য আত্মীয়েরা। ঘটনায় চূড়ান্ত আতঙ্ক ছড়িয়েছে আসানশুলি গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যেও। গ্রামের বাসিন্দা মঙ্গলী টুডু, সুমি হেমব্রমরা বলছেন, ‘‘জঙ্গলের পাশেই ঘর। ধান কাটার সময় সকলকেই কাজে যেতে হবে। গরু-ছাগলকে বাইরে ছাড়তে হবে। কিন্তু, এ ভাবে হাতি মানুষ মারলে, আমাদের কে বাঁচাবে? বন দফতরই কিছু ব্যবস্থা করুক।’’

এ দিকে, দুবরাজপুরের রেঞ্জার কুদ্দুস হোসেন জানিয়েছেন, হাতির কাছাকাছি কেউ যাতে না যান, সে ব্যাপারে মাইকে প্রচার চালানো হচ্ছে। পাশপাশি ফের হুলাপার্টি ডেকে দাঁতালটিকে ঝাড়খণ্ডে পাঠানোর ব্যবস্থাও করা হবে। যদিও এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত হাতিটির অবস্থান একই রয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy