বোলপুরের চিত্রামোড়ে ছবিটি তুলেছেন বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
নিয়ম আছে, জরিমানার বিধি আছে। কর্তৃপক্ষ মাঝে মাঝেই সেই বিধিতে বাজারে নেমে ধর পাকড়ের অভিযানও চালান। কিন্তু সব নিয়ম নীতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, বোলপুর শহর জুড়ে বাড়ছে বেআইনি প্লাস্টিকের ব্যবহার। সে নিয়ে ক্ষোভও ছড়াছে শহরের বিভিন্ন মহলে। পুরপ্রধান মানছেন, “জন সচেতনতা বাড়াতে হবে আরও।”
বোলপুর পুরসভার নিয়ম অনুযায়ী শহরে এবং পুর এলাকায় ৪০ মাইক্রোনের নীচে থাকা প্লাস্টিক ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কয়েক বছর আগে থেকেই এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ওই সময়ে পুর এলাকার বাসিন্দা এবং শহরের ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সচেতনতার জন্য ঘোষণাও করা হয়। প্লাস্টিক ব্যবহারের বিধি এবং বিধি-নিষেধ নিয়ে সতর্ক করা হয় বাসিন্দাদের। সে সময় বার কয়েক শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে খোদ পুরপ্রধান সুশান্ত ভকতও অভিযানে নেমেছিলেন। ঘটনা হল, আর পাঁচটা অভিযানের মতো, ওই অভিযানের খবর চলে গিয়েছিল ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছে। তাই সেই অভিযানের সময়ে কেউ ধরা পড়েনি! প্রফেসর কলোনির বধূ নন্দা রায় বসু, মকরমপুর বিদ্যাসাগর পল্লির বধূ সীমা পাল বলেন, “প্লাস্টিকের দেদার ব্যবহারের ফলে, পুরসভা এলাকার একাধিক ওয়ার্ডের নিকাশি নালা ভরে গিয়েছে বাতিল প্লাস্টিকে। রাস্তাতেও পড়ে রয়েছে যত্রতত্র। এরজন্য শহরের কোথাও কোথাও নিকাশি নালায় নোংরা জল আটকা পড়ছে। কোথাও কোথাও ওই জঞ্জাল, পুর বাসিন্দাদের ঘরে পর্যন্ত ঢুকে যাচ্ছে বৃষ্টির জলে।
বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শহরের কোনও কোনও জায়গায় প্লাস্টিক প্যাকেটে ভরে ফেলে দেওয়া নোংরার কারণে, এলাকায় দুর্গন্ধময় পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। মসজিদ রোডের ব্যবসায়ী রমেশ ভকত বলেন, “ওই প্লাস্টিকে ভরতি নোংরা আবর্জনা উড়ে এসে ঘরে ঢুকে পড়েছে। দুর্গন্ধে টেকাই দায়। পুরসভার কোনও হেলদোল নেই।” বোলপুর স্টেশন রোড ধরে চৌরাস্তা-শ্রীনিকেতন রাস্তার দু’পাশের নিকাশি নালার জল উপচে মুখ্য রাস্তায় আসে। কিছু জায়গায় নিকাশি নালায় ত্রুটি থাকলেও, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ওই প্লাস্টিক জমে নিকাশি নালা উপচে যায়। স্কুল পড়ুয়া মনীষা সরকার বলেন, “চিত্রা মোড়ে অনেক সময় বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু চারপাশে নোংরা আবর্জনা ভরা প্লাস্টিক এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। দুর্গন্ধময় ওই পরিবেশ দাঁড়িয়ে থাকা দায়। পুর কর্তৃপক্ষ নজর দিলে ভাল হয়।” এলাকার খাবারের দোকানের একাংশ অবশ্য শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে প্ল্যাস্টিক বর্জনে পুরসভার সঙ্গেই কাজ করতে চান। তাঁদের দাবি, “নিয়ম যদি থাকে, তাহলে মানতে হবে। নিষিদ্ধ প্লাস্টিক বন্ধের উদ্যোগ নিক পুরসভা ও পুলিশ প্রশাসন। আমাদের সহায়তা থাকবে।”
কি বলছেন পুরপ্রধান?
তৃণমূল পরিচালিত বোলপুর পুরসভার পুরপ্রধান সুশান্ত ভকত বলেন, “পুরসভার পক্ষ থেকে ৪০ মাইক্রোনের নীচে প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ। ব্যবহারকারী ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়ের ক্ষেত্রে ধরা পড়লে এক হাজার টাকা জরিমানার বিধিও রয়েছে। মাঝে মাঝে অভিযান চালানো হলেও, জনসচেতনতা বাড়ানো আরও প্রয়োজন।” বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুনীল সিংহও বলছেন সচেতনতা বাড়ানোর কথাই। বলেন, “ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়ের এই সচেতনতা বাড়ানো আরও প্রয়োজন। বিধি নিষেধ যখন রয়েছে, সকলে মানতেও বাধ্য।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy