Advertisement
E-Paper

দূষণের গুচ্ছ অভিযোগ, পর্ষদের পরিদর্শন নিয়ে তোপ ডিএমের

‘দূষণ’ সংক্রান্ত অভিযোগ জমে জমে স্তূপ হচ্ছে জেলা প্রশাসনের দফতরে। অথচ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ রুটিন পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে। গত দু’বছরে জেলা প্রশাসন দূষণ নিয়ে অভিযোগ জানালেও পর্ষদ তার কোনও রিপোর্ট জমা দেয়নি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বাঁকুড়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী তোপ দাগলেন পর্ষদের প্রতিনিধির উপর। দূষণে অভিযুক্ত কারখানা কর্তৃপক্ষকেও সতর্ক করে দিলেন তিনি।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০৩

‘দূষণ’ সংক্রান্ত অভিযোগ জমে জমে স্তূপ হচ্ছে জেলা প্রশাসনের দফতরে। অথচ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ রুটিন পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে। গত দু’বছরে জেলা প্রশাসন দূষণ নিয়ে অভিযোগ জানালেও পর্ষদ তার কোনও রিপোর্ট জমা দেয়নি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বাঁকুড়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী তোপ দাগলেন পর্ষদের প্রতিনিধির উপর। দূষণে অভিযুক্ত কারখানা কর্তৃপক্ষকেও সতর্ক করে দিলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার ছাতনার মুরুবাহা ইকো পার্কের হল ঘরে শিল্প সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে ওই বৈঠকটি হয়। সেখানে বাঁকুড়া জেলার স্পঞ্জ আয়রন, ফেরোঅ্যালয়, এমটিপিএস ও বড়জোড়ার দু’টি খোলামুখ খনি-সহ মোট ৪৪টি ছোট-বড় কারখানার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ-সহ শিল্পের সঙ্গে জড়িত জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিক, জেলা পরিষদের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প দফতরের কর্মাধ্যক্ষ সুখেন বিদ, শালতোড়ার বিধায়ক স্বপন বাউরি ও বড়জোড়ার বিধায়ক আশুতোষ মুখোপাধ্যায় উপস্থিত ছিলেন।

ছাতনা, বড়জোড়া, মেজিয়ার মতো জেলার শিল্পাঞ্চলের ব্লকগুলিতে প্রায়ই স্পঞ্জ ও ফেরো কারখানাগুলির বিরুদ্ধে লাগাম ছাড়া দূষণ ও জল চুরির অভিযোগ তোলেন বাসিন্দারা। গত কয়েক বছরে বহু অভিযোগ জমা পড়েছে ওই ব্লকগুলির বিডিও ও জেলাশাসকের দফতরে। এই বৈঠকে সাধারণ মানুষের অভিযোগগুলি নিয়ে আলোচনা করেন জেলাশাসক। প্রশাসন সূত্রের খবর, বড়জোড়ার বিডিও ইস্তেয়াক আহমেদ খান জেলাশাসককে জানান, তাঁর এলাকায় ঘরে ঘরে কার্বনের কালো আস্তরণ পড়ছে। কারখানাগুলি দূষণ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র ব্যবহার করছে না বলে অভিযোগ উঠছে। এলাকায় শ্বাসকষ্ট ও চর্মরোগের মতো দূষণজনিত বিভিন্ন ধরনের রোগ বাড়ছে মানুষের। এলাকার জল স্তরও নেমে যাচ্ছে। ছাতনার বিডিও সুতপা নস্কর জেলাশাসককের কাছে অনুযোগ করেন, তাঁর ব্লকে একটি স্পঞ্জ আয়রণ কারখানা রয়েছে। ওই কারখানার বিরুদ্ধেও অভিযোগের অন্ত নেই। দূষণ ও জল চুরি তো বটেই, পাশাপাশি রাসায়নিক মিশ্রিত কারখানার পরিত্যক্ত জল নালার মাধ্যমে আশপাশের চাষ জমিতে ফেলা হচ্ছে বলেও অভিযোগ এসেছে। এতে জমির চাষ বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে জেলাশাসককে জানান তিনি। এমনকী ডিভিসি-র মেজিয়া তাপবিদ্যুত্‌ প্রকল্পের বিরুদ্ধেও ছাই দূষণের জেরে কৃষি জমি ও পরিবেশ দূষিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গঙ্গাজলঘাটির বিডিও উর্মি দে বিশ্বাস এ ব্যাপারে জেলাশাসককে বিশদে জানান।

এই সব অভিযোগ শোনার পরেই বৈঠকে উপস্থিত দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রতিনিধি অ্যাসিস্ট্যান্ট রিজিওনাল অফিসার নিরঞ্জন মণ্ডলকে জেলাশাসক সরাসরি প্রশ্ন করেন, পর্ষদ এ ব্যাপারে কী পদক্ষেপ করেছে? প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, জবাবে নিরঞ্জনবাবু জেলাশাসককে জানিয়েছেন, তাঁরা রুটিন পর্যবেক্ষণ চালান। এই উত্তরে খুশি না হয়ে জেলাশাসক পাল্টা তাঁকে প্রশ্ন করেন, ওই রুটিন পর্যবেক্ষণ কি তাঁরা যথেষ্ট বলে মনে করেন? উত্তরে নিরঞ্জনবাবু কিছুক্ষণ চুপ থাকেন। তারপর তিনি জানান, তাঁরা এ নিয়ে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। জেলাশাসকের প্রশ্ন, রিপোর্ট যদি পাঠিয়েছেন তার উত্তর কোথায়? এই প্রশ্নের উত্তরে নিরুত্তর থাকেন নিরঞ্জনবাবু।

জেলাশাসক ফের প্রশ্ন করেন, এমটিপিএসের ছাই দূষণ রোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? ক’টি স্পঞ্জ আয়রন কারখানার বিরুদ্ধে পর্ষদের নিয়ম না মানায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? দু’টি প্রশ্নের কোনও যথাযথ উত্তর পর্ষদের ওই আধিকারিক দিতে পারেননি বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। এতে অসন্তুষ্ট হয়ে জেলাশাসক তাঁকে একমাসের মধ্যে কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে তা জানাতে নির্দেশ দেন। স্পঞ্জ ও ফেরো কারখানার প্রতিনিধিদেরও দূষণ নিয়ে সতর্ক হতে বলেন জেলাশাসক।

বৈঠক শেষে এ বিষয়ে জেলাশাসকের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ গত দু’বছরে কতগুলি কারখানা পরিদর্শন করেছে তার কোনও রিপোর্ট আমি পাইনি। আমরা কোথাও দূষণ সংক্রান্ত অভিযোগ পেলে পর্ষদকে খতিয়ে দেখতে বলি। কিন্তু পর্ষদ থেকে আমাদের কোনও রিপোর্ট দেওয়া হয় না। পর্ষদকে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রাখতে হবে।” দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দুর্গাপুর কেন্দ্রের এক আধিকারিক বলেন, “এতদিন জেলাপ্রশাসন আমাদের কাছে রিপোর্ট চাইত না। তাই রির্পোট পাঠাতাম না। এ বার জেলাশাসক রির্পোট চেয়েছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শ নিয়ে জেলাশাসককে রিপোর্ট পাঠাব।” তাঁর দাবি, নিয়মিত বাঁকুড়ার কারখানাগুলি তাঁরা পরিদর্শন করেন। সেই রিপোর্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।” স্পঞ্জ ও ফেরোঅ্যালয় কারখানা কর্তৃপক্ষেরও দাবি, তাঁরা নিয়ম মেনেই উত্‌পাদন চালাচ্ছেন। এমটিপিএস-র ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার অশোককুমার বর্মা অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, “ছাই পরিবহণ গাড়িগুলি পুরো ঢাকা দিয়ে ছাই নিয়ে যায়। সেখান থেকে ছাই ওড়ে না। আগে ছাইপুকুর কিছু জমি নষ্ট হয়েছিল। তার ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়েছে। এরপরেও কারা অভিযোগ তুলছেন বুঝতে পারছি না।”

তবে জেলাশাসক কারখানাগুলির উপরে নজর রাখার জন্য একটি সেল গড়তে চলেছেন। তিনি জানান, কয়লা খনিগুলি মাটি খননের জন্য কী ধরনের বিষ্ফোরক ব্যবহার করছে, বিদ্যুত্‌ চুরি বা মাটির তলার জল চুরি হচ্ছে কি না, কারখানার শ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরি পাচ্ছেন কি না, কর্মীদের নিরাপত্তা কেমন এই সব দেখাশোনা করবে ওই সেল। জেলাশাসক বলেন, “দ্রুত এই সেল গড়া হবে।”

হাতি পিড়াকাটাতেই

হাতির দল ধীরে ধীরেই এগোচ্ছে। বড় দলটি পিড়াকাটা রেঞ্জের কালীবাসার জঙ্গলেই রয়েছে। দলে প্রায় ৭০টি হাতি রয়েছে। হুমগড় রেঞ্জের বারোমেসিয়ায় আবার ১০টি হাতির দল রয়েছে। বৃহস্পতিবার কলাইকুণ্ডা থেকে যে হাতির দলটি মেদিনীপুর সদর ব্লকে ঢুকেছিল, তার কয়েকটি হাতি পিড়াকাটার দিকে এগোচ্ছে। এই দলটি ওই বড় দলের সঙ্গে মিশবে বলে জানাচ্ছেন বন কর্তারা। বন দফতরের এক কর্তা বলেন, “সঙ্গে সদ্যোজাত থাকলে হাতির দল দ্রুত এলাকা ছাড়তে চায় না। পিড়াকাটা, হুমগড়ের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। দু’টি দলেই সদ্যোজাত রয়েছে। হাতির দলের গতিবিধির উপর নজর রাখা হয়েছে।”

rajdip bandyopadhyay bankura industrial area pollution dm
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy