Advertisement
E-Paper

নদীর ছাই-মুক্তিতেও বাধা তৃণমূল, নালিশ আদালতে

বাসিন্দাদের স্বার্থেই ছাই তুলে ফেলে বীরভূমের চন্দ্রভাগা নদী এবং তার দুই তীরের এলাকাকে দূষণমুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালত। কিন্তু সেই কাজে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল এবং স্থানীয় কিছু মানুষের কাছ থেকে বাধা আসছে বলে রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের তরফে শুক্রবার ওই আদালতে অভিযোগ করা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৪৩

বাসিন্দাদের স্বার্থেই ছাই তুলে ফেলে বীরভূমের চন্দ্রভাগা নদী এবং তার দুই তীরের এলাকাকে দূষণমুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালত। কিন্তু সেই কাজে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল এবং স্থানীয় কিছু মানুষের কাছ থেকে বাধা আসছে বলে রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের তরফে শুক্রবার ওই আদালতে অভিযোগ করা হয়েছে।

দূষণমুক্তির অভিযানে বাধা আসায় সিউড়ি থানায় দায়ের করা অভিযোগের প্রতিলিপি এ দিন পরিবেশ আদালতে পেশ করা হয়। জাতীয় পরিবেশ আদালত রাজ্যের মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দিয়েছে, চন্দ্রভাগা নদী থেকে ছাই তোলার কাজে বীরভূম জেলা প্রশাসন যাতে সব রকম সাহায্য করে, তার বন্দোবস্ত করতে হবে। প্রশাসনের আধিকারিকদের নিরাপত্তারও ব্যবস্থা করতে হবে।

বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই-দূষণে এলাকার কমবেশি ১০০টি গ্রামে কৃষিকাজ, মাছ চাষ ও গবাদি পশু পালনের ক্ষতি হচ্ছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। শুধু তা-ই নয়, ছাই জমে জমে চন্দ্রভাগা নদীও বিপন্ন। ছাইয়ের স্তূপে নদীটি মজে যেতে বসেছে বলে পরিবেশ আদালতে অভিযোগ জমা পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দাদের পক্ষ নিয়ে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত গত অক্টোবরে ওই আদালতে জানান, ইতিমধ্যেই চন্দ্রভাগার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অবিলম্বে ছাই তোলার কাজ শুরু না-হলে নদীর জীববৈচিত্র পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে। পরিবেশ আদালত ২৭ নভেম্বর বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমকে নির্দেশ দেয়, ১৫ দিনের মধ্যে ওই নদী থেকে সব ছাই তুলে ফেলতে হবে।

সুভাষবাবু এ দিন আদালতে কয়েকটি ছবি দাখিল করে জানান, ছাই তোলার কাজে কতটা কী অগ্রগতি হয়েছে, বৃহস্পতিবার তিনি সরেজমিনে তা দেখতে গিয়েছিলেন। তিনি দেখেছেন, চন্দ্রভাগা নদীর ছাই তোলা শুরু হলেও সেই ছাই অন্যত্র সরানো হচ্ছে না। তা রাখা হচ্ছে নদীর পাড়েই। তিনি আদালতে আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ছাই অন্যত্র না-সরালে সেগুলো আবার নদীতেই মিশবে।

তার পরেই বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের আইনজীবী সপ্তাংশু বসু আদালতে জানান, তাঁরা ছাই তোলার কাজে পুলিশের সাহায্য পাচ্ছেন না। শাসক দলের স্থানীয় এক নেতা এবং এলাকার কিছু লোক সেই কাজে বাধা দিচ্ছেন। বিদ্যুৎ নিগমের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে সিউড়ি থানায় লিখিত অভিযোগও করা হয়েছে। আদালত জানিয়ে দেয়, ছাই-মুক্তির কাজ যাতে সুষ্ঠু ভাবে হয়, সেটা পুলিশ-প্রশাসনকেই দেখতে হবে। এবং সেই ব্যবস্থা করতে হবে মুখ্যসচিবকে।

শুধু নদীর ছাই-মুক্তি নয়, বিদ্যুৎকেন্দ্রের ছাই কী ভাবে ব্যবহার করা হবে, তা-ও জানিয়ে দিয়েছে পরিবেশ আদালত। আইন মোতাবেক কোনও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে যাবতীয় বাড়িঘর তৈরির কাজেই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ছাই ব্যবহার করার কথা। পরিবেশ আদালতের বিচারপতি এ দিন বীরভূমের জেলাশাসককে নির্দেশ দেন, ওই জেলায় নতুন বাড়িঘর তৈরিতে যাতে বক্রেশ্বরের ছাই ব্যবহার করা হয়, প্রশাসনকেই তা নিশ্চিত করতে হবে।

পরিবেশকর্মী সুভাষবাবু আদালতে তাঁর আবেদনে বলেন, চন্দ্রভাগা নদীকে দূষণমুক্ত করে কী ভাবে আগের চেহারায় ফিরিয়ে আনা যায়, তারও ব্যবস্থা করা দরকার। এই বিষয়ে নদী-বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলেন তিনি। সেই সঙ্গেই জানান, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র এক জন নদী-বিশেষজ্ঞ। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে তাঁর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। আদালত জানিয়েছে, আগে ওই নদী থেকে পুরো ছাই তোলা হোক। তার পরে নদীর অবস্থা খতিয়ে দেখতে এক জন স্পেশ্যাল অফিসার পাঠানো হতে পারে। তার পরে প্রয়োজন হলে নদী-বিশেষজ্ঞেরও সাহায্য নেওয়া হবে।

চন্দ্রভাগা নদী থেকে ছাই তোলার কাজ কী ভাবে এগোচ্ছে, সেই বিষয়ে রিপোর্ট চেয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালত। আগামী ২২ জানুয়ারি সেই রিপোর্ট পেশ করতে হবে।

tmc bakreswar pollution
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy