চম্পাসারি এলাকার বাজারে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার শুরু হয়েছে। রবিবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
এক দশকের উপর শিলিগুড়িতে সব রকমের প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। গত ২৯ সেপ্টেম্বর পদ্ধতিগত ত্রুটির কথা বলে ‘ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনাল’ পর্ষদের নির্দেশে আপাতত স্থগিত রেখেছে। সেখানে নতুন করে নিয়ম মেনে নির্দেশের কথা বলেছে ট্রাইবুনাল। এতে প্লাস্টিক ক্যারিবাগ বিক্রি ও ব্যবহার করার পক্ষে সওয়াল শুরু করেন একাংশ প্লাস্টিক ব্যবসায়ী। তাতে কয়েকদিনে শহর জুড়ে ফের রমরমিয়ে অবৈধ প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ। বিভিন্ন বাজার, দোকানে অবাধে বেআইনি প্লাস্টিক ক্যারিবাগের বিক্রি ও ব্যবহার চলছে বলে অভিযোগ।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ইকো সেন্সিটিভ এলাকা এবং কোনও নির্দেশিকা না থাকলে ৪০ মাইক্রনের নিচে থাকা প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ সারা দেশে নিষিদ্ধ। এই পরিস্থিতিতে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ পদক্ষেপ করতে কেন দেরি করছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শহবাসীরা। তাঁদের অভিযোগ, “গ্রিন ট্রাইবুনালের গিয়ে পর্ষদের আইনজীবীরা পুরো বিষয়টি নতুন করে দেখে ব্যবস্থার কথা বলেছেন। কিন্তু আদতে এখনও তা না হওয়ায় শহর জুড়ে ফের বেআইনি প্লাস্টিক ক্যারিবাগের রমরমা শুরু হয়েছে।”
এই প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “আমি দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অফিসার,পরিবেশ মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করছি। শিলিগুড়ি পরিবেশের কথা ভেবে দ্রুত যাতে পদক্ষেপ নেওয়া হয় তা দেখা হচ্ছে।” রাজ্যের পরিবেশ মন্ত্রী সুর্দশন ঘোষ দস্তিদারকে এ দিন একাধিকবার মোবাইলে ফোন করা হলেও কোনও সাড়া মেলেনি। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান বিনয় কুমার দত্ত শুধু বলেন, “গ্রিন ট্রাইবুনালের রায়ের কথা শুনেছি। আমি বর্তমানে কলকাতার বাইরে আছি। ফিরে গিয়ে বিষয়টি দেখছি।”
তবে ব্যবস্থা না নেওয়া অবধি আশ্বস্ত হচ্ছেন না পরিবেশপ্রেমী থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা। রায় দেওয়ার সময় গ্রিন ট্রাইবুনালের প্রিন্সিপাল বেঞ্চ এটাও পরিস্কারভাবে জানিয়েছে, ‘ইকো-সেন্সিটিভ’ এলাকায় প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার বা বিক্রি করা ঠিক নয়। এলাকার বাসিন্দা এবং কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে স্বেচ্ছায় উদ্যোগী হতে হবে। পরিবেশপ্রেমী সংগঠন ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, “প্লাস্টিক ক্যারিবাগ নিয়ে শিলিগুড়িকে দেখে অন্য পুরসভাগুলিও উদ্যোগী হয়। পর্ষদ দেরি করছে কেন তা বোঝা যাচ্ছে না। এমন চললে তো শহর বেআইনি প্লাস্টিক ক্যারিবাগে ফের ছেয়ে যাবে। আমরাও আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলছি।” বিষয়টি নিয়ে ‘ঢিমেতালে’ চলার অভিযোগ তুলেছেন শিলিগুড়ি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের সভাপতি অভিজিৎ মজুমদার। তিনি বলেন, “আমাদের গর্ব হারাতে বসেছে। প্লাস্টিক ক্যারিবাগ ফের শহর জাঁকিয়ে বসছে। অথচ এখনও পষর্দ নিশ্চুপ।”
অবাধেই চলছে প্লাস্টিক ব্যবহার। —নিজস্ব চিত্র।
বৃহত্তর শিলিগুড়ি নাগরিক মঞ্চের তরফে আইনজীবী সুনীল সরকার, রতন বণিকেরা জানান, শহরের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য প্লাস্টিক ক্যারিবাগ বন্ধ থাকাটা জরুরি। রায় মেনে নতুন নির্দেশিকা জারি বা সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে পর্ষদ। তা এখনও করা হচ্ছে না কেন স্পষ্ট নয়। শিলিগুড়িতে সব রকমের প্লাস্টিক ক্যারিবাগ নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছেন ইস্টার্ন হিমালয়া ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারের্টস অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি সম্রাট সান্যালও। তিনি বলেন, “হিমালয়ের পাদদেশের এই শহরের প্লাস্টিক ক্যারিবাগ ফের বন্ধ করে দরকার। এটা যতদিন কার্যকরী ছিল, শহর সম্পর্কে বাইরের পর্যটকদের কাছে অন্যরকম বার্তাও যেত।”
শিলিগুড়ি পুরসভার তরফেও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে ট্রাইবুনালের রায় জানিয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা জানতে চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুর কমিশনার সোনাম ওয়াংদি ভুটিয়াও। পুরসভার প্রাক্তন মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) সুজয় ঘটক বলেন, “এটা শহরের সম্মানের প্রশ্ন। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে অরাজনৈতিকভাবে শহরবাসীকে একজোট হয়ে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করা হবে।”
যদিও একাংশ অসাধু ব্যবসায়ীর জন্য তাঁদের বদনাম হতে হচ্ছে বলে দাবি করেছেন, নর্থবেঙ্গল প্লাস্টিক উৎপাদনকারী ও ডিলারদের সংগঠনের মুখপাত্র রতন বিহানী। তাঁদের সংগঠনের এক সদস্যই গ্রিন ট্রাইবুনালে ওই মামলা করেছিলেন। তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের আইন অনুসারে ৪০ মাইক্রনের উপর ক্যারিবাগ এখন ব্যবহার হতেই পারে। তবে খোলা বাজারে অনেক ক্যারিবাগ বিক্রি হচ্ছে। এতে আমাদের বদনাম হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy