শেয়ালের উপদ্রবে আতঙ্কিত মালদহ জেলার কালিয়াচক ৩ ব্লকের বাসিন্দারা। শুক্রবার সন্ধে থেকে রাত পর্যন্ত বৈষ্ণবনগরের বিভিন্ন এলাকায় শেয়ালের কামড়ে জখম হয়েছেন ৬ জন। তাঁদের মধ্যে দু’জন গুরুতর আহত অবস্থায় ভর্তি রয়েছেন মালদহ মেডিক্যালে। মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনায় জখম বিশাল মণ্ডল বেদরাবাদ হাইস্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। সে এবং আরেক আহত ব্যক্তি তপন সরকার বৈষ্ণবনগর থানার বেদরাবাদের মির্জাবাদ পুর গ্রামের বাসিন্দা।
বেদরাবাদ, কৃষ্ণপুর, সাহাবানচকের মতো একাধিক পঞ্চায়েতের আতঙ্কিত বাসিন্দারা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের অভিযোগ, শেয়ালের উপদ্রবে সন্ধের পরে বাড়ির বাইরে বেরনো দায় হয়ে পড়েছে। দল বেঁধে গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছে শেয়ালগুলি। প্রশাসনকে জানানো সত্ত্বেও কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। আহত ছাত্রের বাবা হৃদয় মণ্ডল বলেন, ‘‘সন্ধে সাতটা নাগাদ বাড়ির পাশে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার সময় আমার ছেলেকে শেয়াল কামড়ায়। পরে এলাকার লোক গেলে পালিয়ে যায় শেয়াল। আতঙ্কে ঘর থেকে বেরোতে পারছি না।’’ যদিও বন দফতরের কর্তারা সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দিয়েছেন। বন দফতেরর জেলা আধিকারিক কৌশিক সরকার বলেন, ‘‘এ দিন শুনেছি বৈষ্ণবনগরে শেয়ালের কামড়ে কয়েক জন জখম হয়েছেন। উপদ্রব কমাতে রেঞ্জ অফিসারদের পাঠানো হবে। লোকালয়ে যাতে শেয়ালেরা না ঢুকে পড়ে, তার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হবে।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে রাতের অন্ধকারে শেয়ালগুলি ঝোপ থেকে বেরিয়ে লোকালয়ে এসে ছাগল, মুরগি গৃহস্থের বাড়ি থেকে টেনে নিয়ে চলে যেত। যার ফলে এখন এলাকায় ছাগল, মুরগি পালন করা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছেন সাধারণ মানুষ। এখন দিনের আলোতেই ঘুরে বেড়াচ্ছে শেয়ালের দল। রাস্তাঘাট সুনসান থাকলেই মানুষের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ছে তারা। এ দিন বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধে সাতটার মধ্যেই বেদরাবাদ ও সাহাবানচক গ্রাম মিলিয়ে ছ’জন শেয়ালের কামড়ে আক্রান্ত হন বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। তাঁদের উদ্ধার করে বেদরাবাদ গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বিশাল ও তপনবাবুকে রাতেই স্থানান্তরিত করতে হয় মালদহ মেডিক্যালে। এখনও তাঁরা চিকিৎসাধীন। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা করেই ছেড়ে দেওয়া হয়।
আহত তপনবাবু নিজের জমিতেই চাষের কাজ করেন। বলেন, ‘‘বাড়ির পেছনে ঝোপে শৌচকর্মের জন্য গেলে একটি শেয়াল আমার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে কামড় দেয়। কোনও রকমে পালাই। রোজ এমন ঘটছে।’’ সাহাবানচক পঞ্চায়েতের সিপিএমের প্রধান মতিউর রহমান বলেন, ‘‘সন্ধের পরে গ্রামগুলিতে লাঠি এবং আলো নিয়ে চলতে হচ্ছে। একা থাকলেই ঝোপ থেকে আক্রমণ করছে শেয়ালের দল। আতঙ্কে মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। প্রশাসন এবং বনদফতরের কর্তাদের এখন থেকেই শেয়ালের উপদ্রব কমানোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’’ কালিয়াচক ৩ ব্লকের বিডিও দুলাল সরকার বলেন, ‘‘বন দফতরের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। আমরা সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছি।’’