বাড়ি বাড়ি প্রচার চালাতে পৃথক কর্মী আছেন। সচেতনতা প্রসারের জন্য হোর্ডিং টাঙানো রয়েছে হাসপাতালে। তা সত্ত্বেও সদ্যোজাতদের মাতৃদুগ্ধ পান করানোয় অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। ‘ন্যাশনাল হেল্থ প্রোফাইল, ২০১৮’-র রিপোর্ট অনুযায়ী এ রাজ্যের ৫৩ শতাংশ শিশুকে জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে স্তন্যপান করানো হয় না।
বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, শিশু জন্মানোর পরেই তাদের স্তন্যপান না-করালে সংশ্লিষ্ট নবজাতকের সমস্যার আশঙ্কা তো আছেই। সামগ্রিক ভাবেও বিপন্ন হতে পারে নতুন প্রজন্ম। কী কী বিপদ হতে পারে, সেই বিষয়ে অনেক আগেই সতর্ক করে দিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র রিপোর্ট। ওই রিপোর্টে জানানো হয়, আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া দেশের অধিকাংশ শিশু জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে স্তন্যপানের সুযোগ পায় না। নবজাতকেরা কেন যথাসময়ে মাতৃদুগ্ধ পাচ্ছে না, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হেল্থ প্রোফাইলের রিপোর্ট সেই প্রশ্নটাকে আরও জোরালো করল।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শিশু বেশ কিছু দিন মায়ের দুধ খেতে পারে। সেটা জরুরিও। তার থেকেও জরুরি হল, ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে পরেই নবজাতককে মাতৃদুগ্ধ দিতে হবে। কেননা প্রসবের পরে হলুদ মাতৃদুগ্ধের মধ্যে থাকে ‘কোলোস্ট্রম’। শিশুর সেটা না-হলেই নয়। কেননা শিশুর শরীরে রোগ প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলার জরুরি উপাদান হল কোলোস্ট্রম। কেন্দ্রীয় রিপোর্ট অনুযায়ী এ রাজ্যের ৭৫.২% প্রসূতি হাসপাতালে প্রসব করেন। কিন্তু কোলোস্ট্রম পায় মাত্র ৪৭% সদ্যোজাত। অথচ মিজোরাম, ওড়িশা বা কেরলের মতো রাজ্যেও হাসপাতালে প্রসবের হার বৃদ্ধির পাশাপাশি জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে মাতৃদুগ্ধ পান করানোর হার বহুলাংশে বেড়েছে।
স্ত্রীরোগ চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, হাসপাতালের ‘ভুল’ নিয়মের জেরে ভুগতে হচ্ছে শিশুদের। অধিকাংশ হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে প্রসব হয়। বেসরকারি হাসপাতালে জন্মের পরেই শিশুকে রাখা হয় আলাদা ঘরে। মায়ের কাছে সন্তানকে দেওয়া হয় প্রায় ২৪ ঘণ্টা পরে। অস্ত্রোপচারের পরেই মা স্তন্যপান করাতে পারবেন কি না, তা নিয়েও ধোঁয়াশা থাকে। অথচ অস্ত্রোপচারের সঙ্গে স্তন্যপানের কোনও বিরোধ নেই। স্ত্রীরোগ চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চিকিৎসকের সঙ্গে সঙ্গে নার্স, আয়াদেরও সতর্ক থাকা দরকার। কারণ, তাঁরাই রোগীর পরিচর্যা করেন। অনেক ক্ষেত্রেই মায়ের প্রথম হলুদ দুধ ফেলে দেওয়া হয়।’’
প্রশ্ন উঠছে সরকারি পরিকাঠামো নিয়েও। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, প্রসবের পরেই মা কী ভাবে স্তন্যপান করাবেন, কখন করাবেন, সেই বিষয়ে কোনও পরামর্শই দেওয়া হয় না। কেন্দ্রের ওই রিপোর্ট জানাচ্ছে, ৭৫% প্রসূতির হাসপাতালে প্রসব হলেও প্রসবের দু’দিনের মধ্যে পরবর্তী চিকিৎসা পরিষেবা পান মাত্র ৬১.১%।
ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিভাগের চিকিৎসক আরতি বিশ্বাস বলেন, ‘‘হাসপাতালে প্রসবের হার যে-ভাবে বেড়েছে, অন্যান্য দিকে সেই হারে অগ্রগতি হয়নি। সরকার সেগুলো পর্যবেক্ষণ করেই একটি নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ২০১৮ সালে কাজ শুরু করেছে সেই প্রকল্প।’’ তিনি জানান, মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের উন্নতিই এই নতুন প্রকল্পের লক্ষ্য। তাই প্রসবের এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে মায়ের কাছে দেওয়া আবশ্যিক করা হয়েছে। মায়ের স্পর্শ ও মাতৃদুগ্ধ শিশুমৃত্যুর হার কমাতেও সাহায্য করবে। অস্ত্রোপচারে প্রসবের পরে অনেক সময় স্তন্যপানে সমস্যা হয়। কিন্তু মাকে ঠিকমতো দেখিয়ে দিলে স্তন্যপান করাতে কোনও সমস্যা হয়না। সে-দিকেও বাড়তি নজর দেওয়া হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘নতুন প্রকল্পে কয়েক মাস মাত্র কাজ হয়েছে। আশা করছি, আরও কিছু দিন কাজ চললে ইতিবাচক ফল মিলবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy