Advertisement
E-Paper

ক্যানসার কেড়ে নিল পা, কিন্তু নাচ থামাতে পারেনি

নয় নয় করে পাঁচ-ছ’টা পা হয়ে গেল আমার... শুনলেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়নয় নয় করে পাঁচ-ছ’টা পা হয়ে গেল আমার... শুনলেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৮ ১৭:৪০
অঞ্জলি রায়। ফাইল চিত্র।

অঞ্জলি রায়। ফাইল চিত্র।

এই মেয়েটি। একরত্তি পনেরো ছুঁই ছুঁই। একটা ঘরে। একটা পায়ে। একটা জীবন।
এই এক একাঙ্গী, এই শতাব্দীর ‘দুর্গা’ নারীর ক্ষমতায়নের নীরব প্রতীক।
এই দুর্গার নাম অঞ্জলি। ২০১৩-র ৬ মার্চ থেকে তার লড়াই শুরু।
ছোট্ট একটা মেয়ে স্কুলের ঝাল লজেন্স, আলুকাবলি আর অঙ্ক খাতার বাইরে ভাইয়ের সঙ্গে খুনসুটি আর অভিনেতা দেবকে সামনে দেখার স্বপ্ন নিয়ে দিব্যি ছিল, দিনে-রাতে। নাচের ছন্দে কাটছিল তার বাসন্তী কৈশোর।
হঠাৎ বুকে লাগল আঘাত। পা গেল থেমে। কেউ যেন ষড়যন্ত্র চালিয়েছিল। উড়ুক্কু মেয়ে থাম তুই এ বার! রোগের দাপট। কালো ভ্রুকুটি। পারবে কী মেয়ে?
দিন আনি দিন খাইয়ের ঘরে সুভাষগ্রামের ঘরে সে দিন যেন বাজ পড়ল! কালো ঝড়ের রাত।
চাই বড় ডাক্তার। বড় শহর। বড় অর্থ। রোগ যে অনেক বড়।
ডাক্তারের পরামর্শে সোজা পৌঁছতে হল ক্যান্সার হসপিটালে। ডাক্তার বললেন, ‘‘আজই পা কেটে ফেলতে হবে। নয়তো...’’ সুভাষগ্রামের ছোট্ট পরিবার— এ বার ঘর ছেড়ে বাইরে। তৃতীয় বিশ্বের সর্বহারা এক মেয়ে নিজের পা ছাড়া বাঁচবে কেমন করে?
‘‘আমার দুর্গা বাঁচতে শিখেছে নিজেই নিজের শর্তে’’।
বাঁচল মেয়ে। শর্ত রেখেছিল একটাই- পা চলে যাক, কিন্তু নাচতে পারব তো আমি? প্রায় বছর দুয়েকের দিন-রাত এক করে দেওয়া মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়াই। অকারণে, অকালে এই মৃত্যুডাক কেন এসেছিল অঞ্জলির জীবনে? জীবন যে এবরোখেবরো রাস্তার নাম সেটা অঞ্জলিকে আগেই চিনিয়ে দিল সময়।

এই যুদ্ধে অঞ্জলি পাশে পেয়েছে অগুনতি মানুষকে। হসপিটালের ডাক্তার ম্যাডাম, নার্সের শক্তি, সাহস আর রোটারির সঙ্গে যুক্ত অসংখ্য মানুষ।
অঞ্জলি আজ বেশ বলতে পারে ‘‘আমার যে-পা নেই, সেই পা প্রায় নয় নয় করে পাঁচ-ছ’টা পা হয়ে গেল!’’ রোটারি থেকে অঞ্জলিকে পা দেওয়া হয়। অঞ্জলি একটু করে বড় হয় আর তার পা তাল মিলিয়ে তৈরি হয়। সময় মতো পায়ের মাপ দিয়ে আসতে হয় অঞ্জলিকে। ‘‘যেতে আসতে কষ্ট খুব। ট্রেনে বা বাসে চড়তে আর পারি না। ভাগ্যিস স্কুল সামনে। পা পরে বন্ধুদের সঙ্গে চলে যাই’’।
সহজ করে নিয়েছে অঞ্জলি তার জীবন। পঞ্চদশী, কিন্তু মনে হয় যেন অনেক বড়।

আরও পড়ুন: এখনও এ সমাজে মেয়েরা শুধুই ‘মেয়ে’!


জীবনের কাছে হাত পেতে চাইলে কী চাইবে অঞ্জলি? খানিক ভেবে বলে, ‘‘নাচতে চাই। সাজতে চাই। আর সকলে বলে আমি ভাল নাচি। এটাই সবচেয়ে ভাল লাগে।’’ অঞ্জলির এই বিশ্বাসের সঙ্গে আছে তার মাস্টারমশাই। অঞ্জলিকে শুধু নাচ নয়, কোথাও হোঁচট খেলে যিনি হাতটা বাড়িয়ে দেন। গয়নায় সাজানো, চুল বাঁধা, পোশাক পরানো— সব ভাবনা মাথায় নিয়ে অঞ্জলিকে আকাশ ছোঁয়ানোর স্বপ্ন দেখান তিনি।
এক ঘরে ভাই, বাবা, মা আর এক ডজন বেড়াল আর কুকুর নিয়ে অঞ্জলির বাস।
অঞ্জলির নাচে সমস্ত প্রতিবাদ রাখা আছে। সর্বনাশের এ পার ও পার দেখা যায় না। কিন্তু অঞ্জলিকে দেখলে দেখা যায়— ‘‘রাঙা আলোয় দাঁড়িয়ে আছে সে-ছন্দ, সে-কীর্তিনাশা।’’
অচেনা ওই মেয়ের চোখে ক্ষমতার আকাশ!

Anjanli Roy Celebrity অঞ্জলি রায় Women's Day Special Women's Day Videos
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy