Advertisement
E-Paper

সকালে ইডলি, বিকেলে মোমো

ট্রেনের গতি বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বদলে যাচ্ছে মিশ্র সংস্কৃতির রেলশহর, খড়্গপুরের খাদ্যাভ্যাস। বাদশাহী মোগলাই থেকে দক্ষিণের ইডলি-দোসার পথ পেরিয়ে এখন উত্তরের মোমোর স্বাদে মজেছেন শহরবাসী।

দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৬ ১৩:৫৩

ট্রেনের গতি বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বদলে যাচ্ছে মিশ্র সংস্কৃতির রেলশহর, খড়্গপুরের খাদ্যাভ্যাস। বাদশাহী মোগলাই থেকে দক্ষিণের ইডলি-দোসার পথ পেরিয়ে এখন উত্তরের মোমোর স্বাদে মজেছেন শহরবাসী।

খড়্গপুর শহরে তেলুগু, ওড়িয়া, বিহারি, গুজরাতি, মারাঠি, তামিল, পঞ্জাবি, বাঙালি-সহ বহু সংস্কৃতির লোকজনের বসবাস। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় তেলুগু। তাই তাঁদের খাওয়া-দাওয়ার চল এই শহরকে আচ্ছন্ন করেছে বেশি। শহরের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে ইডলি-দোসার ঝুপড়ি দোকান ও ট্রলি। আগে বিভিন্ন পাড়ায় মাথায় করে ঝুড়িতে ইডলি বিক্রি করতেন কিছু তেলুগু। আর গোলবাজারের ‘স্বপ্না’ হোটেল ইডলি-দোসায় নাম করেছিল খুব। বছর সাতেক আগে বন্ধ হয়েছে ওই হোটেল। তবে বাজার জুড়ে এখন হাজারো ইডলি দোকান। ছোট ছোট এই সব দোকানে ইডলি-দোসার সঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে উপমা, উত্তপম, বড়া। প্রাতরাশে শহরবাসীর পছন্দ দক্ষিণী এই সব খাবার। দক্ষিণীরা বাড়িতেও ইডলি-দোসা বানিয়ে নেন অনেকে। সঙ্গে সম্বর আর চাটনি। তবে বাঙালিরা এখনও বাড়িতে ইডলি-দোসা বানানোয় স্বচ্ছন্দ নন।

ইডলি

ইডলি বা দোসার ব্যাটার এক। যেদিন বানাবেন, তার এক দিন আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। তবে একবার ব্যাটার বানিয়ে নিলে দু’তিন দিন ফ্রিজে রেখে দেওয়া যায় অনায়াসে। পরিমাণটা এই রকম— এক কাপ ডাল হলে দু’কাপ চাল। ডাল বলতে বিউলির ডাল। ইডলির আলাদা চাল হয়। তবে, যে কোনও সিদ্ধ চাল দিয়েই বানানো যাবে। ইডলি নরম করার জন্য অনেকে চিড়ে যোগ করেন। সেক্ষেত্রে মোটা চিড়ে ১/৪ কাপ। ভাল করে চাল আর চিড়ে ধুয়ে নিয়ে জলে ভিজিয়ে রেখে দিন ৫-৬ ঘণ্টা। আর একটা বাটিতে বিউলির ডাল ভিজিয়ে দিন। সঙ্গে আধ চামচেরও কম মেথিদানা। এটাও কম করে ৫-৬ ঘণ্টা ভেজাতে হবে। এবার আলাদা আলাদা করে মিক্সিতে চাল আর ডালের পেস্ট বানিয়ে এক সঙ্গে মিশিয়ে ফেটিয়ে নিন। একটু নুন দিয়ে মিশ্রণটা ঢাকা রেখে দিন কম করে ৮-৯ ঘণ্টা। এই ফারমেন্টেশনটাই আসল। এই পর্ব চুকে গেলে কাজ আর বেশি নেই। খুব ভাল করে ফেটিয়ে নিতে হবে শুধু। মাইক্রোওভেন থাকলে সঙ্গে নিশ্চয়ই ইডলি বানানোর বাটি পেয়েছেন। প্রথমে মাইক্রোওভেনে বাটিতে জল গরম করে নিন। ইডলির স্ট্যান্ডে তেল মাখা হাত বুলিয়ে গ্রিজ করে নিন। ব্যাটার দিয়ে সর্বোচ্চ তাপে অর্থাৎ ১০০ পাওয়ারে মিনিট পাঁচেক (আমার ওভেনে সাড়ে চার মিনিট লাগে)। বন্ধ করে দেওয়ার পর বাটিটা কিছুক্ষণ রেখে দিতে হবে ওভেনে। মিনিট পাঁচেক পরে ওভেন থেকে ইডলি বার করে গরম গরম পরিবেশন করুন। ইডলি স্ট্যান্ড থাকলে স্টিমার বা প্রেশার কুকারেও বানানো যাবে। প্রেশার কুকার হলে, হুইসল খুলে দিয়ে মিনিট দশেক স্টিম করতে হবে।

সম্বর

দক্ষিণী খাবার মানেই সম্বর। আমরা যাকে বলি সব্জি ডাল। এক্ষেত্রে অড়হর ডালে। আর সম্বরের একটা বিশেষ মশলার মাপ আছে। যদিও এখন বাজারে রেডিমেড সম্বর মশলা কিনতে পাওয়া যায়, তাহলেও বাড়িতে বানালে স্বাদটা বেশি ভাল হয়। ৫টা শুকনো লঙ্কা, আধ চামচ ছোলার ডাল, আধ চামচ গোটা জিরে, আধ চামচ মেথি দানা, আধ চামচ গোলমরিচ আর দুই টেবিল চামচ গোটা ধনে নন- স্টিক প্যানে ২-৩ মিনিট নেড়ে নিতে হবে। নামিয়ে ঠান্ডা করে গুঁড়িয়ে নিতে হবে মিক্সিতে। একচিমটে হিং আর হলুদ দিয়ে ডাল প্রেশার কুকারে ভাল ভাবে সিদ্ধ করে নিন। ভাপ বেরিয়ে ঢাকনা খুলে যাওয়ার পর ডালটা ঘেঁটে নিতে হবে। কুমড়ো, আলু চৌকো করে কেটে নিন। ডাঁটা ছাড়িয়ে নিন। ডালের সঙ্গে প্রয়োজন মতো জল মিশিয়ে কুমড়ো, আলু, টোম্যাটো সিদ্ধ করুন মিনিট কুড়ি। তেঁতুল গুলে রাখুন। সব্জিগুলো সিদ্ধ হয়ে গেলে তেঁতুল আর সম্বর মশলা ঢেলে দিন ডালে। আর একটা পাত্র আঁচে বসিয়ে তেল গরম করুন। সর্ষে দিন। ফাটতে শুরু করলে কারি পাতা আর শুকনো লঙ্কা দিয়ে ফোড়নটা ঢেলে দিন ফুটন্ত ডালে।

নারকেলের চাটনি

নারকেলের চাটনি ছাড়া ইডলি ভাবা যায় না। মোটামুটি এক কাপ নারকেল কোরা হলে তার সঙ্গে দু’তিনটে কাঁচা লঙ্কা, একটু আদা আর এক টেবিল চামচ ছোলার ডাল (ভেজে নেবেন আগে) মিক্সিতে বেটে নিতে হবে মিহি করে। এবার ফোড়ন। তার জন্য পাত্রে তেল গরম করে আধ চামচ সর্ষে দিন। ফাটতে শুরু করলে শুকনো লঙ্কা আর কারি পাতা দিয়ে হাতাটা নাড়িয়ে চাটনির উপরে ফোড়ন ঢেলে দিন। মুখের স্বাদ মতো লঙ্কা কম-বেশি করবেন। একটু চটপটে করতে চাইলে তেঁতুল দিতে পারেন। কিংবা ধনে পাতা, পুদিনা।

ওটস দোসা

ইডলির মতোই দোসার ব্যাটার। তবে অত ঝামেলা না করে ওটস দিয়ে সহজে দোসার ব্যাটার বানিয়ে নিতে পারেন দিনের দিন, বাড়িতেই। এক কাপ ওটস, দুই টেবিল চামচ চাল গুঁড়ো, দুই টেবিল চামচ সুজি দইয়ে ফেটিয়ে রেখে দিন কম করে মিনিট পনেরো। প্রয়োজনে জল মেশান। চেখে নুন দিন। কাঁচা লঙ্কা, ধনে পাতা কুচি আর একটু জিরে গুঁড়ো দিয়ে কিছুক্ষণ ফেটিয়ে নিন। নন স্টিক তাবায় এক হাতা ব্যাটার দিয়ে গোল করে বুলিয়ে নিন। আকারে ছোটই বানাবেন। নয়তো ওল্টাতে পারবেন না। মাঝারি আঁচে দু’পিঠ ভেজে নিন। সম্বর আর চাটনি দিয়ে মজা করে খান।

খড়্গপুরে মোমো

অধুনা বিকেলের রেলশহরে ইডলি-দোসার চেয়ে মোমোর বিক্রিটাই বেশি। এক সময়ে শহরের অদূরে নেপালি জনজাতি অধ্যুষিত এলাকা সালুয়ায় শুধু মোমো পাওয়া যেত। বছর বারো আগে প্রেমবাজার ও তালবাগিচায় খোলে মোমোর দোকান। বছর তিনেক আগে পরিধিটা ছড়িয়ে যায় নিউ সেটলমেন্ট এলাকায়। স্থানীয় কিছু নেপালি পরিবার ট্রলিতে মোমো ব্যবসা শুরু করে। তাদের দোকানে ভিড়ের বহর দেখে এখন মালঞ্চ, গোলবাজার, ইন্দা, ঝাপেটাপুর-সহ শহরের চারদিকেই মোমো বিকোচ্ছে দেদার। নিউ সেটলমেন্ট এলাকায় খোলা আকাশের নীচে টেবিল-চেয়ার পেতে রমরমিয়ে মোমো বিক্রি হচ্ছে। ভিড়ের কারণ জানতে চাইলে এক মোমো বিক্রেতার জবাব, “মোমোর চাটনির স্বাদটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যে যত ভাল চাটনি বানাতে পারবে, তার মোমোর তত বিক্রি।”

সাধারণত টোম্যাটোর চাটনিই দেওয়া হয় মোমোর সঙ্গে। কড়ায় তেল গরম করে তাতে একে একে গোটা জিরে, রসুন, আদা আর কাঁচা লঙ্কা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এবার টোম্যাটো কুচি দিয়ে আরও মিনিট দশেক ফুটিয়ে নিন। নুন-মিষ্টি চেখে দিন স্বাদমতো। নামিয়ে ঠান্ডা করে মিক্সিতে পিষে নিলেই তৈরি চাটনি।

বাড়িতে মোমো

শুধু চাটনি কেন, বাড়িতে মোমোও বানিয়ে নেওয়া যায়। এর জন্য মুরগির কিমা কিনে আনুন বাজার থেকে। ভাল করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে নিন। এবার পেঁয়াজ, রসুন, আদা, কাঁচা লঙ্কা কুচি কুচি করে মাখান মাংসে। নুন-গোলমরিচ আর আধ চামচ সোয়া সস, ১/৪ চামচ ভিনিগার মাখিয়ে মাংসটা ফ্রিজে ঢুকিয়ে দিন। কম করে এক ঘণ্টা রেখে দিতে পারলে ভাল। ইতিমধ্যে ময়দায় ময়ান দিয়ে লুচির মাখা যেমন হয়, তেমনটা করে মেখে নিন। একটু শক্ত মাখা হলে ভাল হয়। খুব পাতলা করে বেলতে সুবিধা হয়। লেচির মাঝে ম্যারিনেট কিমার পুর ভরে পিঠের মতো মুড়ে নিন। নানা ভাবে মোড়া যায়। যেভাবেই মুড়ুন, কোনও প্রান্ত যেন খুলে না যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। স্টিমার থাকলে ভাল। নয়তো চওড়া মুখের হাঁড়ি থাকলে তাতে জল দিয়ে উপরে একটা পাতলা কাপড় বেঁধে নিন। একটু তেল-হাত বুলিয়ে নিয়ে মোমোগুলো সাজিয়ে রাখুন। মোটামুটি দশ মিনিট মতো স্টিম করতে হবে। আসলে কতক্ষণ লাগবে, সেটা পরিমাণের উপরে নির্ভর করে। চোখে দেখেই বুঝতে হবে মোমো তৈরি হয়ে গিয়েছে কি না। রান্নায় চোখের আন্দাজটাই সব।

food momo
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy