আধুনিক চিকিৎসা তো দুরের কথা, সামান্য ব্যথার ওষুধও তখন অধরা। এ দিকে বাড়ির মেয়েদের অনেকেই প্রতি মাসে ব্যথা আর যন্ত্রনায় শয্যাশায়ী। হিপোক্রিটিস ব্যথার উৎস অনুসন্ধান করে এন্ডোমেট্রিওসিস সম্পর্কে একটা অস্পষ্ট ধারনা দেন। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগেকার হিপোক্রিটিসের দেখানো পথে কার্ল ভন রকিট্যান্সকি ১৮৬০ সালে প্রথম মাইক্রোস্কোপের নীচে দেখে এই অসুখটির বিজ্ঞান সম্মত ব্যখ্যা করেন। কিন্তু রোগের উপশম জানতে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের সময় লাগে আরও অনেক বেশি। ইদানীং এন্ডোমেট্রিওসিস রোগটা মহামারির মত ছড়িয়ে পড়েছে। শহর, মফঃস্বল গ্রাম নির্বিশেষে অজস্র নারী এন্ডোমেট্রিওসিস নিয়ে কষ্ট পাচ্ছেন।
অসুখটা ঠিক কী
হিলারি ক্লিন্টন, সেলিনা জেটলি বা হালের ক্যাটরিনা কাইফের মত অনেক সেলিব্রিটিই পিরিয়ডের সময় তলপেটের অসহ্য যন্ত্রনায় কাবু হয়ে পড়তেন। এন্ডোমেট্রিওসিস নামক অসুখের এটাই বৈশিষ্ট্য। অবশ্য আধুনিক চিকিৎসায় এই কষ্টকর রোগটিকে কিছুটা জব্দ করা যায়। মেনার্কি থেকে সূত্রপাত এন্ডোমেট্রিওসিসের, চলতে পারে মেনোপজ পর্যন্ত। আসলে জরায়ু বা ইউটেরাসের এক প্রয়োজনীয় আবরণ হল এন্ডোমেট্রিয়াম। বয়ঃসন্ধির একটি মেয়ে যখন ঋতুমতী হয়, নানান হরমোনের প্রভাবে তার জরায়ু বা ইউটেরাসের অন্দরে ওলট পালট ও পুনর্গঠন চলতে থাকে। সন্তান ধারণ বা ঋতুনিবৃত্তি পর্যন্ত হরমোনের ওঠাপড়ায় ইউটেরাসের নানান পরিবর্তন হয়। প্রত্যেক মাসে পিরিয়ডের পর ইউটেরাসের মধ্যে থাকা এন্ডোমেট্রিয়াম লাইনিংটি ক্রমশ পরিণতি পায়। সেই পিরিয়ডে প্রেগনেন্ট না হলে এন্ডোমেট্রিয়াম লাইনিংটি ধীরে ধীরে খসে যায়। ২৮ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে এন্ডোমেট্রিয়াম ইউটেরাস থেকে খসে গেলেই শুরু হয় মাসিক ঋতুস্রাব। এই ব্যাপারটা স্বাভাবিক। জরায়ু থেকে ছিঁড়ে আসে বলে পিরিয়ডের দু তিনদিন আগে থেকে তলপেটে অল্পস্বল্প ব্যথা হয়। কিন্তু এন্ডোমেট্রিওসিস রোগ হলে তখন ব্যাপারটা বদলে যায়। ইউটেরাসের ভিতরে ছাড়াও এর বাইরের দিকে, ওভারিতে, ফ্যালোপিয়ান টিউবে এমনকী কখনও কখনও রেক্টাম বা মলাশয়েও এন্ডোমেট্রিয়াম লাইনিং তৈরি হয়। পিরিয়ডের আগে হরমোনের প্রভাবে এই সব অস্বাভাবিক এন্ডোমেট্রিয়াম টিস্যুগুলিও ছিঁড়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে এবং ব্লিডিং হয়। আর এই কারণেই পেটে প্রচন্ড ব্যথা করে।