Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
আমার কথা: রত্নাবলী রায়

হার মানতে দিব্যি পারেন, তাই জয় আসে সহজে

পিসিদের মনোরোগের ইতিহাস আছে, তা হলে... রত্নাবলীর অভিজ্ঞতা শুনলেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়পিসিদের মনোরোগের ইতিহাস আছে, তা হলে... রত্নাবলীর অভিজ্ঞতা শুনলেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৮ ১৬:১৭
Share: Save:

ওই কাজল কালো চোখে তাঁর লাল-নীল সব আগুন। ভাঙ্গা গড়ার তালে তালে ‘অঞ্জলি’-র প্রতিষ্ঠাত্রী, মনের অলিগলি খুঁজে টেনে আনেন অমূল্য রতন- রত্নাবলী রায়।

নাহ, কেউ বলেনি তাঁকে, “তুমি মেয়ে এটা কোরো না, ওটা সর্বদা মেনো”।

শিক্ষিত পরিবারের বোধ শক্তি তাঁকে খোলা আকাশ দেখিয়েছিল। ওই দেখার চোখে ছোট্ট রত্নাবলী হঠাত্ এক দিন দেখল তাঁর পিসিমাকে। কাঠের চেয়ারে বাঁধা মন কেমনের মানুষ। “ওকে খোলা উঠোনে জোর করে স্নান করান হত। কেন?”

আরও পড়ুন: নারী দিবসে ‘না’! এ বার নয়া চমক

‘কেন’ ঘুরপাক খেতে থাকল জীবনের পাতায়। মনের খাতায়। তার মাঝেই ঘরের পাশে আরশিনগর তৈরি করে ফেলল রত্নাবলী। “বাড়ির পাশের দামাল বস্তির ছেলেরা ছিল আমার বন্ধু। আমার শৈশব। ওদের সঙ্গে গুলি খেলতাম। ওদের নিয়ে একটা ছবি আঁকার প্রদর্শনীও করেছিলাম। সেটা দেখতে যদিও একজন এসেছিলেন!”

তাতে কি! হার মানতে দিব্যি পারেন তিনি। জয় আসে তাই সহজে। রত্নাবলী আসা-যাওয়ার হিসেব করেননি কোনও দিন। তাই অনেক পথ এগিয়ে গেছেন নির্দ্বিধায়।

আরও পড়ুন: সমাজের কঠিন মুখ দেখেও জয় ছিনিয়ে নিতে হবে

করতে পারতেন অধ্যাপনার মতো শান্ত চাকরি। করেননি। মনস্তত্বের অলিগলিতে ঢুকতে গিয়ে ছায়ার মতো তাড়া করেছে তাঁর ছোটবেলা- “পিসিমা! আমার দুই পিসিকে লোকে ‘পাগল’ বলে ডাকতো!”

করতে পারতেন অধ্যাপনার মতো শান্ত চাকরি। করেননি। মনস্তত্বের অলিগলিতে ঢুকতে গিয়ে ছায়ার মতো তাড়া করেছে তাঁর ছোটবেলা- “পিসিমা! আমার দুই পিসিকে লোকে ‘পাগল’ বলে ডাকতো!”

“আমি সরকারি হাসপাতালের মানসিক রুগীদের সঙ্গে কাজ করতে আরম্ভ করি। প্রথম ছ’মাস শুধু ওদের কথা শুনেছি। আমার সন্ধে তখন গাঢ় অন্ধকারে ঢাকা!”

আরম্ভ হল কাজ। ২০০০ সাল। আর এ ভাবেই হাজার মানুষ ঘরে ফিরেছেন আজ। জনা পঁয়তাল্লিশ কাজ করতে আরম্ভ করেছেন তাঁর সাহসে। চোদ্দ হাজার পরিবারের সঙ্গে কাজ হয়ে গেল তাঁর।

তবে এই কঠিন কাজের রাস্তা সহজ ছিল না। সরকারি হাসপাতালের হর্তাকর্তারা বলেছিলেন, “পিসিদের মনোরোগের ইতিহাস আছে তা হলে তো এই মহিলাও সেই পথে...”!

কেন কেউ এমন কাজ করবে? হয়তো ‘আমেরিকান স্পাই’, বা ‘হাইপমেনিক’ বা ‘ফ্রুট অ্যান্ড নাট’- মহিলাদের যা খুশি নাম দেওয়া যায়! থামিয়ে দেওয়ার জন্য।

লড়াই তবু চলে। আসলে আজও তো অনেক মহিলা ক্ষমতার আলো দেখেননি। হয়তো এখন উদযাপনের সময় নয়! প্রশ্ন করেন রত্নাবলী।

আদৌ মেয়েরা স্বাধীন হবে? তাঁদের ক্ষমতায়ন হবে? প্রতিবন্ধী মেয়ের জীবনে ক্ষমতায়ন তো একটা প্রক্রিয়া, একটু একটু করে ফুটবে হয়তো! সংশয়ের পথে লড়াই অনেক বাকি! জানেন রত্নাবলী।

তবুও বৃষ্টি আর রৌদ্র নিয়ে তাঁর পথ চলা। নিজেকে কথা দিয়েছেন রত্নাবলী। রক্ত প্লাবনের কালো রাত্রির পর মুক্ত শস্যের হলুদ খেত তৈরি করবেন।

নকল পৃথিবীর মুখোশ খুলে ভিজিয়ে দেবেন মন। তিনি যে আগুন নদী!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE