Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পাটের ন্যাপকিন মহিলা শ্রমিকদের

ছোটবেলায় ভাগলপুর থেকে স্বামীর সঙ্গে নৈহাটির চটকলের কুলি লাইনে এসেছিলেন কুসুম প্রসাদ। কাজ নিয়েছিলেন চটকলে। পাঁচ মেয়ের মধ্যে দু’জন এখন মায়ের সঙ্গেই কাজ করেন।

বিতান ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:২৫
Share: Save:

ছোটবেলায় ভাগলপুর থেকে স্বামীর সঙ্গে নৈহাটির চটকলের কুলি লাইনে এসেছিলেন কুসুম প্রসাদ। কাজ নিয়েছিলেন চটকলে। পাঁচ মেয়ের মধ্যে দু’জন এখন মায়ের সঙ্গেই কাজ করেন। কুসুম ও তাঁর মেয়েদের মতো চটকলগুলিতে রয়েছেন বহু মহিলা শ্রমিক। দেখা যাচ্ছে এঁদের একটি বড় অংশই ঋতুকালীন সমস্যা আর তা থেকে সংক্রমণের জেরে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। কলকাতা ঘেঁষা ঘিঞ্জি শিল্পাঞ্চলগুলিতে এ এখন নিত্যদিনের ঘটনা।

ইন্ডিয়ান জুট ইন্ডাস্ট্রিজ রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশনের (ইজিরা) একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছিল এই তথ্য। কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, হাড়ভাঙা খাটুনির সঙ্গে অস্বাস্থ্যকর জীবন, বিশেষত অজ্ঞতার কারণে ঋতুকালীন সমস্যা থেকেই সবচেয়ে বেশি অসুস্থ হচ্ছেন এই মহিলারা। আসলে দিন আনা-দিন খাওয়া এই মহিলা শ্রমিকদের কাছে স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনা বিলাসিতারই সামিল।

নিজেদের সমীক্ষার ভিত্তিতেই ইজিরা-র বিজ্ঞানীরা ২০১৪-র শেষের দিকে কম খরচে বিজ্ঞানসম্মত ও স্বাস্থ্যকর স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি এবং মহিলা শ্রমিকদের মধ্যে তা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ শুরু করেন। দু’বছরের মাথায় তাঁদের উদ্যোগ সফল হতে চলেছে। পাটকাঠির গুঁড়ো ও পাটের আঁশের মিশ্রণে তৈরি হয়েছে নতুন ধরনের স্যানিটারি ন্যাপকিন ‘সাথী’। ইতিমধ্যেই গুণমানের জন্য ন্যাশনাল টেস্ট হাউজের শংসাপত্র পেয়েছে সাথী। দামও বাজার চলতি ন্যাপকিনের অর্ধেক। এমনকী এর শোষণ ক্ষমতাও অনেক বেশি।

সম্প্রতি নৈহাটির হুকুমচাঁদ চটকলের মহিলা কর্মী ও শ্রমিকদের হাতে পাটজাত ন্যাপকিনের ও বাজার চলতি ন্যাপকিনের প্যাকেট তুলে দেন ইজিরার বিজ্ঞানীরা। দু’টির তুলনা করে দেখতে বলা হয় মহিলাদের। দেওয়া হয় ফিডব্যাক ফর্মও। আর যাঁরা ন্যাপকিন ব্যবহারে অভ্যস্ত নন, তাঁদের জন্য হয় একটি কর্মশালা। ডিসেম্বরের মধ্যে কলকাতা সংলগ্ন সব শিল্পাঞ্চলের কারখানাগুলিতেই এ ধরনের কর্মশালার পরিকল্পনা নিয়েছে ইজিরা। ইজিরা-র পরিচালন সমিতির সদস্য সমীরকুমার চন্দ্র বলেন, ‘‘পাটের উৎপাদনের তুলনায় ব্যবহার কম। কম খরচে পরিবেশবান্ধব এই ন্যাপকিন দিয়ে মহিলাদের স্বাস্থ্যসচেতন করতে পারি। সব কারখানায় আগে বিনামূল্যে ন্যাপকিন বিতরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’

বিজ্ঞানী সম্পূর্ণা চট্টোপাধ্যায় জানান, উপকারিতার পাশাপাশি কম দাম শুনে আগ্রহী অনেকেই। নৈহাটির চটকলের মহিলা আধিকারিকেরাও এ নিয়ে সচেতন করতে চাইছেন মহিলা শ্রমিকদের। এক আধিকারিক রূপা দে বলেন, ‘‘অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন, এটাই আশার।’’ সম্পূর্ণাদেবী বলেন, ‘‘পাট থেকে যে শুধু বস্তা নয় অনেক কিছুই তৈরি করা যায়, এ তারই উদাহরণ। সরকারি শংসাপত্রও পেয়েছি। এখন সব মহিলারাই পাটের তৈরি ন্যাপকিনের উপর নির্ভর করতে পারবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sanitary napkin
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE