Advertisement
E-Paper

ছেলে ডাক্তার হবে, জরিতে স্বপ্ন বোনেন রাবেয়া

রাবেয়া বেগমের স্বামী ফৈজুল রহমান চটকলে শ্রমিকের কাজ করতেন। সামান্য রোজগারেও টেনে নিয়ে চলতেন সংসার। স্বপ্ন ছিল তাঁরও— ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করবে, করবেই। তাই আল আমিন মিশনে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন সকলকে। কিন্তু স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আগেই এক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়। বছর চারেক আগে ফৈজুলের যখন মৃত্যু হয় বড় ছেলে হাসান তখনও দশম শ্রেণি পাশ করেনি। সেই ছেলে এখন শেখ মহম্মদ হাসানুর রহমান— সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। 

সুব্রত জানা

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৯ ০৫:১৬
মা: জরির কাজ করছেন রাবেয়া বেগম। নিজস্ব চিত্র

মা: জরির কাজ করছেন রাবেয়া বেগম। নিজস্ব চিত্র

নুন আনতে পান্তা ফুরোয়— তিন মেয়ে, দুই ছেলেকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম জামবেড়িয়ার রাবেয়া বেগম। তবু স্বপ্ন দেখেন বড় ছেলে একদিন ডাক্তার হবে ঠিক। পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াবে ছোট ছেলে, মেয়েরাও। দিনরাত এক করে তাই জরি বোনেন রাবেয়া। রঙিন শাড়ির উপর ঝলমলে কাজ— এক টুকরো আলো পড়লেই ঝিলিক দিয়ে ওঠে চারদিক। আশায় বাঁচেন রাবেয়া।

রাবেয়া বেগমের স্বামী ফৈজুল রহমান চটকলে শ্রমিকের কাজ করতেন। সামান্য রোজগারেও টেনে নিয়ে চলতেন সংসার। স্বপ্ন ছিল তাঁরও— ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করবে, করবেই। তাই আল আমিন মিশনে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন সকলকে। কিন্তু স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আগেই এক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়। বছর চারেক আগে ফৈজুলের যখন মৃত্যু হয় বড় ছেলে হাসান তখনও দশম শ্রেণি পাশ করেনি। সেই ছেলে এখন শেখ মহম্মদ হাসানুর রহমান— সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র।

‘‘ছেলের অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল ডাক্তারি পড়বে। বছর দেড়েক আগে স্বামীর জমানো সব টাকা খরচ করে বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। তারপরই ছেলে জয়েন্টে ভাল ফল করল,’’ বলেন রাবেয়া। ডাক্তারি পড়ার খরচ অনেক। তার উপর রয়েছে কলকাতার হস্টেলে থাকা-খাওয়ার খরচ। সে সব জোগাড় হবে কোথা থেকে? তাই নাওয়া-খাওয়া ভুলে কাজ করেন রাবেয়া। মায়ের উপর ভরসা রেখে একাদশ শ্রেণির পড়াশোনা চালাচ্ছে মেজো রুকসনা ইয়াসমিন, ছোট ছেলে তৃতীয় শ্রেণির হোসাইন রহমান আর নার্সারির পড়ুয়া ছোট মেয়ে হাকিমা ইয়াসমিন।

হাসানুর রহমান বলেন, ‘‘ব্যাঙ্ক থেকে শুধু পড়ার খরচটুকুর জন্য ঋণ পাওয়া যায়। কিন্তু থাকা-খাওয়ার জন্য ঋণ পাওয়া যায় না। মায়ের পক্ষে সে খরচ তোলা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে।’’ মা তবু হাল ছাড়তে নারাজ। নারী দিবসের কথা জানেন না রাবেয়া। শুধু জানেন, ‘‘যে ভাবেই হোক মেজো মেয়ের পড়ার ব্যবস্থাও করব। তারপর ছোট দু’টো। সব ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া শেখাব আমি। তার জন্য যদি আরও খাটতে হয়— খাটব।’’

স্বামীর পেনশনের দু’হাজার টাকা পান রাবেয়া। জরির কাজ করে জুটে যায় আরও হাজার দুই। তারপর? ‘‘সাহায্য করেন আত্মীয়রা কিছু কিছু। তা দিয়ে এখনও চলছে। ঠিক পারব,’’ আত্মবিশ্বাসী রাবেয়া। আশ্বাস দেন হাসানুরের কাকা হাফিজুল রহমানও, ‘‘আমাদের বাড়ির ছেলে ডাক্তার হবে, সাহায্য করি আমরাও।’’ কিন্তু হাফিজুল নিজেও জরির কাজ করে সংসার চালান। ফলে ভরসা রাখতে পারেন না হাসানুর।

ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও রাজ্যের মন্ত্রী চিকিৎসক নির্মল মাজি অবশ্য সব শুনে বলেছেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। কী ভাবে ওই ছাত্রের পাশে থাকা যায় সে চেষ্টা করব।’’

International Women's Day Jari Worker
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy