Advertisement
E-Paper

কে বলে উমা শুধু কৈলাসেই থাকেন

রবীন্দ্রভবনে ‘জাগো’ নামের অনুষ্ঠানে বাল্যবিবাহ রোধ, সামাজিক পরিষেবা, শিক্ষা, ক্রীড়া-সহ আটটি ক্ষেত্রে নজরকাড়া সাফল্যের জন্য ৫৬ জনের হাতে তুলে দেওয়া হল সম্মান।

প্রশান্ত পাল 

শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৪৬
স্বীকৃতি: পুরুলিয়ার রবীন্দ্রভবনে সমাজের নানা ক্ষেত্রে কৃতীদের সঙ্গে মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু। ছবি: সুজিত মাহাতো

স্বীকৃতি: পুরুলিয়ার রবীন্দ্রভবনে সমাজের নানা ক্ষেত্রে কৃতীদের সঙ্গে মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু। ছবি: সুজিত মাহাতো

ছোট্ট ছোট্ট জনপদে বড় বড় লড়াই জেতার গল্প। দেবীপক্ষের সূচনায় শনিবার পুরুলিয়া জেলার প্রত্যন্ত এলাকার সেই সব লড়াকু মহিলাদের জেলা সদরে এনে কুর্নিস জানাল প্রশাসন। এ দিন রবীন্দ্রভবনে ‘জাগো’ নামের অনুষ্ঠানে বাল্যবিবাহ রোধ, সামাজিক পরিষেবা, শিক্ষা, ক্রীড়া-সহ আটটি ক্ষেত্রে নজরকাড়া সাফল্যের জন্য ৫৬ জনের হাতে তুলে দেওয়া হল সম্মান।

প্রেক্ষাগৃহের মঞ্চের পিছনে বড় পর্দায় একের পরে এক বিস্ময় ছড়িয়ে ভেসে উঠছিল কিশোরী থেকে প্রৌঢ়াদের লড়াইয়ের ভিডিয়ো-চিত্র। যেমন, অযোধ্যা পাহাড়ের দুর্গম পথে হেঁটে ৩২ বছর ধরে গ্রামে গ্রামে চিঠি বিলি করছেন প্রৌঢ়া ডাককর্মী পুতনা মুড়া। এ ভাবেই একের পর লড়াইয়ের ছবি দেখিয়ে ডেকে নেওয়া হতে থাকে কৃতীদের। হাততালিতে ভরে উঠেছে চারপাশ।

বরাবাজারের গ্রামে নির্মল গ্রাম গড়ে তোলার লক্ষ্য সামনে রেখে যে মহিলা স্বনির্ভর দলের সদস্যেরা রাজমিস্ত্রির কাজ করে গড়ে তুলেছেন তেরোশোরও বেশি শৌচাগার, সেই দলের সদস্যদের সম্মানিত করতে গিয়ে জেলাশাসক রাহুল মজুমদার নিজের বিস্ময় লুকোননি। তিনি বলেন, ‘‘বরাবাজারে গিয়ে ওই দলটিকে যখন প্রথম দেখি, সে দিন তাঁদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, আপনারা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন? অসুবিধা হয় না? জবাব মিলেছিল, রাজমিস্ত্রির আবার পুরুষ-মহিলা ভেদাভেদ হয়?’’

ছেলেমেয়ের ভেদাভেদ মুছে এই জেলার কিছু তরুণী এখন পেশাদারিত্বের সঙ্গে ছৌ-নাচ পরিবেশন করেছেন। বলরামপুরের মালডি গ্রামের মহিলা ছৌ-শিল্পী মৌসুমী চৌধুরী বিদেশেও ছৌ প্রদর্শন করে এসেছেন। হাত ধরে তুলে আনছেন অন্য মেয়েদেরও। তাঁর মতোই সম্মান জানানো হয় শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে ফের পড়াশোনা শুরু করা মানবাজার ২ ব্লকের খড়িদুয়ারা গ্রামের রেণুকা মাঝিকেও।

গান্ধারি বাউরি, সুশীলা মুর্মু, সুমিতা সেনগুপ্তদের মতো যে আশাকর্মীরা রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে গ্রামে গ্রামে মানুষকে বুঝিয়ে একশো শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব নিশ্চিত করিয়েছেন, তাঁদের মুখও উজ্জ্বল হয়েছে মঞ্চের আলোয়।

নবীন প্রজন্মের সঙ্গেই জেলার সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াই জারি রেখে সম্মানিত হয়েছেন প্রবীণ ঝুমুর শিল্পী সরস্বতীদেবীও।

সম্মান তুলে দিতে গিয়ে জেলাশাসক বলেন, ‘‘চরিত্র কি কেবল ইতিহাস থেকে খুঁজে নিতে হবে? বর্তমানে কি আদর্শ পাওয়া যাবে না? কে বলে উমা শুধু কৈলাসেই থাকেন? সে কথা ভেবে যাঁরা দৈনন্দিন প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছেন, তাঁদের সম্মানিত করতেই এই উদ্যোগ।’’

জেলা সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করিয়ে দেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মহিলাদের ভূমিকা পাল্টে যায়। সেই সঙ্গে লড়াইয়ের ক্ষেত্রও। জেলা পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়ার মতে, দেবীপক্ষের সূচনায় এই লড়াকুদের সম্মান জানিয়েই নারীশক্তির আবাহন করা হল।

জেলার দুই মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো, সন্ধ্যারানি টুডু বলেন, ‘‘তাঁদের এই আত্মবিশ্বাস অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে।’’

জেলাশাসক জানান, লড়াই চলবে। একে একে সেই সব সংগ্রামীদের খুঁজে আগামী দিনে সম্মানিতও করা হবে।

Purulia Award Social Work Child Marriage
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy