কখনও পরিণীতি চোপড়া, কখনও ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন, সোনাক্ষী সিন্হা বা সেরেনা উইলিয়ামস। সাম্প্রতিক কালে বডি শেমিং-এর শিকার হয়েছেন এরা সকলেই। আর এ বার সেই বডি শেমিং নিয়েই যোগ্য জবাব দিলেন এম টিভি ভিজে বাণী।
এম টিভি রোডিজ-এর প্রথম মহিলা বিজয়ী বাণী নিজের পেশীবহুল চেহারা নিয়ে বডি শেমিংয়ের শিকার হয়েছিলেন আগেই। ওয়ার্কআউট করার ছবিও পোস্ট করেছিলেন ইনস্টাগ্রামে। এ বার এক জনপ্রিয় সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনে লিখলেন, ‘আমার পেশীবহুল চেহারা আমি স্বেচ্ছায় পরিশ্রম করে বানিয়েছি। আর তার জন্য আমাকে যে পরিমাণ বডি শেমিংয়ের শিকার হতে হয়েছে তা অবিশ্বাস্য। আমাদের দেশ এক বিশেষ ধরনের চেহারার সঙ্গেই সৌন্দর্যের সংজ্ঞা জুড়ে দিয়েছে। এক জন মহিলার শরীর ঠিক কেমন হওয়া উচিত তার একটা নির্দিষ্ট মাপকাঠি ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। তার থেকে যদি একটু এ দিক, ও দিক হয়— সেই মাপের তুলনায় রোগা, মোটা বা পেশীবহুল (যাকে তারা বলে পুরুষালি)— তা হলেই তাকে অনেক অপমানজনক কথা শুনতে হয়।
বেশির ভাগ মহিলার ক্ষেত্রেই এই বডি শেমিংয়ের ঘটনা শুরু হয় শৈশব বা কৈশোর থেকে। আমার এক বন্ধুর বাবা তাকে মুটি, মুটকি এই সব নামে ডাকতো। হয়তো ভালবেসেই বলতো। কিন্তু কেন? পরিবারই তো আমাদের সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা। গোটা দুনিয়া থেকে যা আমাদের রক্ষা করবে। সেখান থেকেই যদি আত্মবিশ্বাসে এমন আঘাত আসতে থাকে, তা হলে দুনিয়ার সঙ্গে যোঝার ক্ষমতা আসবে কোথা থেকে?
কিন্তু আমার মনে হয়, এঁরা নিজেরা বোঝেন না কী করছেন। ভাগ্যক্রমে, খুব রোগা চশমা পরা একটা মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও আমাকে এ সব কিছু শুনতে হয়নি। এর পর ১৮ বছর বয়সে এম টিভি রোডিজে অংশগ্রহণ করি। সহ প্রতিযোগীদের থেকে ক্রমাগত সমালোচনা উড়ে আসতো, ঝগড়া লেগে থাকত। তা সত্ত্বেও আমি শুধু ওই সিজনেই জিতিনি, তার পর আরও চার সিজনে সঞ্চালনা করেছি। নিজের কেরিয়ার দারুণ ভাবে লঞ্চ করেছি।
১৯ বছর বয়সে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ওয়ার্কআউট করব ও নিজেকে সতটা সম্ভব শক্তিশালী করে তুলব। কেন তুমি এত ওয়ার্ক আউট করছো? এক জন মহিলার পেশীর কী প্রয়োজন? তুমি ঠিক আছো তো? এই সব প্রশ্ন রোজ উড়ে আসত আমার দিকে। সবচেয়ে বেশি আঘাত এসেছে এই ইন্ডাস্ট্রি থেকেই। আমার এখনও মনে আছে এক স্বানামধন্য কাস্টিং ডিরেক্টর আমাকে বলেছিলেন, আমি পুরুষ হয়ে উঠেছি কিনা, আমার পুরুষাঙ্গ তৈরি হয়েছে কিনা।
এর পর অনেক দিন কেটে গিয়েছে। অনেক বার সেই মহিলার সঙ্গে দেখা হয়েছে। আমি কোনও প্রতিক্রিয়া দেখাইনি। এঁরা কোনও প্রতিক্রিয়া দেখানোরই যোগ্য নন। এটাই আমার রোডিজ থেকে শেখা সেরা শিক্ষা। শেষ কয়েক বছরে আমি বুঝে গিয়েছি যদি তুমি কী চাও, কী হতে চাও, কী ভাব, সে বিষয়ে তোমার নিজের স্বচ্ছ ধারণা না থাকে তা হলে তোমাকে এদের শিকার হতেই হবে।
আমি সারা জীবন যা সঠিক মনে করেছি তার জন্য লড়েছি। আমাকে কেউ ছোট করতে চাইলে আমি তা মেনে নেব না। আমি মানসিক ও শারীরিক ভাবে একজন শক্তিশালী মানুষ হতে চেয়েছিলাম। আমি ওয়ার্ক আউট করতে ভালবাসি, এটা করে আনন্দ পাই, নিরাপদ অনুভব করি।
আজ আমি ব্যক্তিগত ও পেশাদার জীবনে খুশি। আমি একজন মডেল, একজন ভিডিও জকি, একজন অভিনেত্রী। আমার শারীরিক গঠনের ওপর নির্ভর করেই ছবির প্রস্তাবও পাচ্ছি। এটা দারুণ ব্যাপার। হানি সিংয়ের সঙ্গে জোরাওয়ার ছবিতে অভিনয় করছি। এই ছবিতে এক গুপ্তঘাতকের চরিত্রে অভিনয় করছি আমি। এ রকম একটা চরিত্র দিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে লঞ্চ হতে পেরে আমি সত্যিই খুশি। একটা তেলেগু ছবিতেও আমি অভিনয় করছি।
একটা ফিটনেস অ্যাপের আমি ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর। নাইকির অ্যাড ক্যাম্পেনে ১২ জন সিনিয়র অ্যাথলিটের সঙ্গে কাজ করছি। তাই সকলকে বলবো, অন্য কে কী বলছে নয়, নিজের মনের কথা শোনো।’
আরও পড়ুন: বেবিকে চিঠিতে কী লিখলেন শ্বেতা?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy