Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আত্মরক্ষা করতে এ বার মেয়েদের কুস্তি শেখাচ্ছে পুলিশ

ছোটবেলা থেকেই আত্মরক্ষার এমন কৌশল শিখে নেওয়া যে জরুরি, তা মনে করে কলকাতা পুলিশও। লালবাজারের উদ্যোগে তাই ‘সুকন্যা’ নামে একটি প্রকল্পও চালু হয়েছে। তাতে আত্মরক্ষার জন্য পাঠ দেওয়া হয় মেয়েদের।

চলছে প্রতিযোগিতা। রবিবার, ভবানীপুরের কুণ্ডুপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র

চলছে প্রতিযোগিতা। রবিবার, ভবানীপুরের কুণ্ডুপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র

দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:১৬
Share: Save:

নির্জন রাস্তা দিয়ে একা ফিরছিল জিনিয়া। পিছন থেকে হঠাৎ এক জন এসে জাপটে ধরে। আরও এক জন চেপে ধরে গলা। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলে কুস্তির প্যাঁচে দুষ্কৃতীদের কুপোকাত করতে মাত্র মিনিট খানেক সময় লাগল তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীটির।

রবিবার বিকেলে ভবানীপুরের কুণ্ডুপাড়ার মাঠে আত্মরক্ষার এমন কিছু কৌশল দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দিল বছর আটেকের জিনিয়া এলিজা সর্দার এবং তার সহপাঠীরা। পথঘাটে মেয়েদের নিরাপত্তাহীনতার যে ছবি নিত্যদিন ফুটে উঠছে, তাতে অনেকেরই মনে হচ্ছে পড়াশোনার পাশাপাশি শুধু নাচ, গান, ছবি আঁকা নয়, প্রয়োজন আত্মরক্ষার পাঠও।

ছোটবেলা থেকেই আত্মরক্ষার এমন কৌশল শিখে নেওয়া যে জরুরি, তা মনে করে কলকাতা পুলিশও। লালবাজারের উদ্যোগে তাই ‘সুকন্যা’ নামে একটি প্রকল্পও চালু হয়েছে। তাতে আত্মরক্ষার জন্য পাঠ দেওয়া হয় মেয়েদের।

হাওড়ার দাশনগরের বাসিন্দা জিনিয়ার মা শবরী সর্দার যেমন বলেন, ‘‘এখন তো প্রতিদিনই বিভিন্ন স্কুলে বাচ্চা মেয়েদের উপরে নির্যাতনের খবর শুনছি। আমরা কি সে সব থেকে ওদের রক্ষা করতে পারছি? যা পরিস্থিতি, তাতে ছোটবেলা থেকেই শিখিয়ে দিতে হচ্ছে কী ভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা যাবে। আর সেই জন্যই মেয়েকে ভর্তি করিয়েছিলাম বেল্ট রেসলিংয়ে।’’

বেল্ট রেসলিং আসলে কী?

এটি আসলে জুডো ও কুস্তির মিশেল। আদতে এক ধরনের মার্শাল আর্টস। শুধুমাত্র কোমর ধরে প্রতিপক্ষকে ভূপতিত করার কৌশল শেখানো হয় বেল্ট রেসলিংয়ে। বাংলা বেল্ট রেসলিং অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক নিত্যানন্দ দত্ত জানান, সম্প্রতি এটি এশিয়ান গেমসেও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তিনি জানান, প্রথমে বেল্ট রেসলিংয় বেশি সাড়া না পেলেও এখন অনেক মেয়েরাই এই ট্রেনিং নিতে আসছে। এটা আশাব্যাঞ্জক।

এ দিন কুণ্ডুপাড়ায় ছিল সারা বাংলা বেল্ট রেসলিং প্রতিযোগিতা। পথঘাটে দুষ্কৃতী কিংবা বেয়াড়া লোকের পাল্লায় পড়লে কী ভাবে নিজেদের বাঁচাতে হবে, সেখানেই তার কৌশল দেখাল শিক্ষার্থীরা। স্রেফ নাকে আঘাত করে, কড়ে আঙুল মচকে দিয়েও যে বড় চেহারার পুরুষদের কাত করে দেওয়া যায়, তার হরেক রকম কায়দা দেখাল তারা।

সেখানে জিনিয়া, অনন্যা, জয়া, অস্মিতা, অন্বেষার মায়েরা জানালেন, নিয়ম করে স্কুল ফেরত মেয়েদের মার্শাল আর্টস প্রশিক্ষণে নিয়ে যান তাঁরা। তাঁদেরই এক জন বলেন, ‘‘কুস্তি করতে জানি না বলে অনেক সময়েই ভয় পেয়ে কিছু কাজ থেকে পিছিয়ে আসি। বেশি রাতে একা বেরোতেও ভয় পাই। আগামী প্রজন্ম যাতে সে ভাবে না থাকে, সেই চেষ্টাই করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE