অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মেরে ড্রেসিং রুমের পথে চেতেশ্বর পূজারা। ছবি: এএফপি।
চতুর্থ ইনিংসে ২৮৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রবল চাপে ভারত। সোমবার দ্বিতীয় টেস্টের চতুর্থ দিনের শেষে ১১২ রানে পড়ে গিয়েছে পাঁচ উইকেট। জেতার জন্য করতে হবে আরও ১৭৫ রান। ক্রিজে রয়েছেন হনুমা বিহারী (২৪) ও ঋষভ পন্থ (৯)। যা পরিস্থিতি, তাতে টেস্ট জিতে সিরিজে সমতা ফেরানোর গন্ধ পেয়ে গিয়েছে টিম পেনের অস্ট্রেলিয়া।
ভারতের ইনিংস কখনও স্বস্তিতে ছিল না। ইনিংসের শুরুতে চার ওভার পুরো হওয়ার আগেই এসেছিল জোড়া ধাক্কা। প্রথম ইনিংসে ২ রান করার পর দ্বিতীয়তেও ব্যর্থ হলেন ওপেনার কে এল রাহুল। জশ হেজ্লউডের বলে বোল্ড হয়ে শূন্য রানে ফিরে গিয়েছেন তিনি। চেতেশ্বর পূজারাও (৪ রান) বেশি ক্ষণ ক্রিজে টেকেননি। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মেরে তিনিও ড্রেসিং রুমে ফেরেন। এ বারও বোলার সেই হেজ্লউড।
বিরাট কোহালি, মুরলী বিজয়ও পরপর ফিরলেন । নেথান লিয়নের বলে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ১৭ রানে আউট হলেন ভারত অধিনায়ক কোহালি। আর লিয়নের পরের ওভারে ব্যাটের কানায় লাগিয়ে বোল্ড হলেন মুরলী বিজয়। ওপেনার করলেন ২০। তৃতীয় উইকেটে দু'জনে ৩৫ রান যোগ করেছিলেন। কিন্তু, সাত রানের ফারাকে দু'জনকেই হারাল ভারত। ৫৫ রানে পড়ে গেল চার উইকেট।
হনুমা বিহারীর সঙ্গে অজিঙ্ক রাহানে পঞ্চম উইকেটে ৪৩ রান যোগ করে আশার আলো জ্বালিয়েছিলেন। কিন্তু, হেজেলউডের বলে ক্যাচ দিয়ে আউট হন রাহানে। তিনি করলেন ৩০। ৯৮ রানে পড়ল পঞ্চম উইকেট। সেখান থেকে হনুমা-ঋষভ অবিচ্ছিন্ন ষষ্ঠ উইকেটে যোগ করেছেন ১৪ রান।
লাঞ্চের আগে পার্থ টেস্ট আরও জমিয়ে দেন মহম্মদ শামি। কখনও বাউন্সারে, কখনও বার গতিতে— অজিদের নাস্তানাবুদ করে ছাড়লেন। পুরনো বল বা নতুন, পার্থের পিচে দেখা গেল সেই চেনা শামিকেই। মূলত শামির আগুনে বোলিংয়ের সৌজন্যেই অজিদের লিড তিনশোর কোঠা পেরোতে পারেনি। জয়ের জন্য বিরাট কোহালিদের প্রয়োজন ২৮৭ রান।
সোমবার পুরনো বলে টানা দুই বলে অ্যারন ফিঞ্চ এবং টিম পেইনকে ফিরিয়ে দিয়ে প্রথমে ভারতকে সুবিধা করে দিলেন। তবে ওই দুই উইকেটেই থেমে থাকেননি। এর পর একটা আনপ্লেয়েবল ডেলিভারি-তে তুলে নেন উসমান খোয়াজাকেও। নতুন বল হাতে নিয়েও শামি ম্যাজিক চলল। শামির শর্ট বলে ঠকে গিয়ে ড্রেসিং রুমের রাস্তায় হাঁটতে শুরু করেন নেথান লায়ন।
শামির আগুনে বোলিংয়ের বিরুদ্ধে অজিদের ডিফেন্স যখন নড়বড়ে দেখাচ্ছে, তখনই তাঁদের আরও নাড়িয়ে দিলেন যশপ্রীত বুমরা। নতুন বল নেওয়ামাত্রই উইকেট এল তাঁর হাত থেকে। প্যাট কামিন্সের উইকেট ভেঙে দিয়ে ভারতের অ্যাডভান্টেজ আরও বাড়িয়ে দিলেন বুমরা।
সোমবার খেলা শুরু ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ১৩২-৪ থেকে পৌঁছে যায় ২১৪-৯।
(আজকের তারিখে গুরুত্বপূর্ণ কী কী ঘটেছিল অতীতে, তারই কয়েক ঝলক দেখতে ক্লিক করুন— ফিরে দেখা এই দিন।)
পাঁচ উইকেট তুলে নেওয়ার পরও থামেননি শামি। ছবি: এপি।
১৭৫ রান লিডের পুঁজি নিয়ে এ দিন মাঠে নেমেছিলেন অজি ব্যাটসম্যানেরা। সেই লিড বাড়তে বাড়তে ২৮৬ রান হয়েছে। এখনও দেড় দিনেরও বেশি খেলা বাকি। এরই মধ্যে পার্থের পিচের অসমান বাউন্স আরও বেহিসেবি আচরণ করতে শুরু করেছে। কখনও পিচে পড়ে ব্যাটসম্যানের মাথা ছাড়িয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, তো কখনও ক্রিজের ফাটলে পড়ার পর একেবারে নিচু হয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। শামির এ রকম একটা বলেই আউট হলেন কামিন্স। বল পিচ করার পর তাঁর হাঁটু পর্যন্তও ওঠেনি। ব্যাটের ডিফেন্স গলে তা নাড়িয়ে দেয় তাঁর স্টাম্পস। আবার শামি যে বলে উসমান খোয়াজাকে আউট করলেন, তাতে তাঁর বেশি কিছু করার সুযোগ ছিল না। বলের বাউন্সের সঙ্গে সঙ্গে খোয়াজাকে নাচিয়ে তাঁর গ্লাভস ছুঁয়ে তা ধরা পড়ল ঋষভ পন্থের তালুতে।
আরও পড়ুন: ব্যাট জবাব দেবে, বিরাটের অভিনব সেঞ্চুরি-উৎসব
কোহালিদের আদরে শামি। ছবি: এএফপি।
টিম পেইনকেও একটা শর্ট বলে আউট করলেন শামি। বা বলা ভাল করালেন! স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ওই বলে নাকাল হতে পারতেন বিশ্বের যে কোনও ব্যাটসম্যান।
আরও পড়ুন: কোহালির ইনিংসে যেন উদ্বুদ্ধ হন ব্যাটসম্যানরা
মিচেল স্টার্ক বা নেথান লায়নের জুটি আর একটু থিতু হতে না হতেই লায়নকেও তুলে নিয়েছেন শামি। এই নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ৬টি উইকেট তুলে নিলেন তিনি। টেস্টে কেরিয়ারে এই নিয়ে চার বার পাঁচ বা তার বেশি উইকেট হল তাঁর। সেই সঙ্গে এই ক্যালেন্ডার ইয়ারে ১০ টেস্টে এখনও পর্যন্ত ৪১ উইকেট সংগ্রহ করা হয়ে গেল শামির। আর অজিদের দ্বিতীয় ইনিংস শেষে শামির ফিগার, ৫৬ রান খরচ করে ৬ উইকেট।
(আইসিসি বিশ্বকাপ হোক বা আইপিএল টেস্ট ক্রিকেট, ওয়ান ডে কিংবা টি-টোয়েন্টি।ক্রিকেট খেলারসব আপডেট আমাদেরখেলাবিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy