পার্থে প্রথম টেস্টে দাঁড়াতে পারেনি ইংল্যান্ড। মাত্র দু’দিনে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছিল তারা। কিন্তু ব্রিসবেনে দিন-রাতের টেস্টের শুরুটা ভাল হল তাদের। গোটা দিন ধরে ব্যাট করল তারা। নজর কাড়লেন জো রুট। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথম শতরান করলেন তিনি। উল্টো দিকে অস্ট্রেলিয়ার পেসার মিচেল স্টার্ক নিলেন ৬ উইকেট। প্রথম দিনের শেষে ইংল্যান্ডের রান ৯ উইকেটে ৩২৫। রুট ১৩৫ ও জফ্রা আর্চার ৩২ রানে ব্যাট করছেন।
গোলাপি বলে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের বিরুদ্ধে জ্যাক ক্রলি ও রুটকেই সাবলীল দেখাল। বাকিরা বড় রান করতে পারেননি। কিন্তু রুট দেখিয়েছেন, কেন আইসিসি ক্রমতালিকায় বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট ব্যাটার তিনি। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তাঁর সর্বাধিক রান ছিল ৮৯। এই গাব্বাতেই ২০২১-২২ সিরিজ়ে করেছিলেন রুট। সেই মাঠেই এল শতরান। এটি টেস্টে রুটের ৪০তম শতরান। আর একটি শতরান করলেই রিকি পন্টিংকে ছুঁয়ে ফেলবেন তিনি। শীর্ষে রয়েছেন সচিন তেন্ডুলকর (৫১)। দ্বিতীয় স্থানে জাক কালিস (৪৫)।
ব্রিসবেনে দিন-রাতের টেস্টে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক স্টোকস। কিন্তু স্টার্কের শুরুটা দেখে হয়তো সাজঘরে বসে নিজেকেই গালাগাল দিচ্ছিলেন তিনি। স্টার্কের প্রথম ওভারেই আউট হন বেন ডাকেট। শূন্য রানে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। স্টার্কের পরের ওভারে শূন্য রানে বোল্ড হন ওলি পোপ। ৫ রানে ২ উইকেট পড়ে যায় ইংল্যান্ডের।
দেখে মনে হচ্ছিল, পার্থের মতো ব্রিসবেনেও ইংল্যান্ডের ব্যাটিং ভেঙে পড়বে। কিন্তু সেখান থেকে দলকে টানলেন ক্রলি ও রুট। ক্রলি নিজের শট খেললেন। যখনই অফ স্টাম্পের বাইরে বা শরীরে বল পেলেন, হাত খুললেন। রুট অন্য দিকে সাবধানে খেলছিলেন। কোনও তাড়াহুড়ো করেননি তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার বোলারেরা যে ভাল বল করছিলেন না তা নয়। মাঝে মাঝে ব্যাটের পাশ দিয়ে বল বেরিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু খোঁচা লাগছিল না। প্রথম সেশনেই নিজের অর্ধশতরান পূর্ণ করেন ক্রলি। কঠিন পরিস্থিতি থেকে দলকে বার করেছেন দুই ব্যাটার। সেশনের শেষ দিকে শট খেলা সহজ হয়ে যায়। দ্রুত রানও ওঠে।
ব্রিসবেনে পাঁচ পেসার খেলিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। স্টার্ক ছাড়া মাইকেল নেসের, স্কট বোলান্ড, ব্রেন্ডন ডগেট ও ক্যামেরন গ্রিন রয়েছেন। কিন্তু কেউ ইংল্যান্ডের দুই ব্যাটারকে খুব বেশি সমস্যায় ফেলতে পারেননি। চা বিরতিতে ইংল্যান্ডের রান ছিল ২ উইকেটে ৯৮।
আরও পড়ুন:
বিরতির পরেও ক্রলি দ্রুত রান করছিলেন। দেখে মনে হচ্ছিল, শতরান হবে তাঁর। কিন্তু সেই জুটি ভাঙলেন নেসের। ৭৬ রানের মাথায় ক্রলিকে আউট করলেন তিনি। শতরান হাতছাড়া হল ক্রলির। তিনি আউট হওয়ার পর জুটি বাঁধেন রুট ও হ্যারি ব্রুক। আইসিসি-র টেস্ট ক্রমতালিকায় থাকা এক ও দু’নম্বর ব্যাটার দলকে টানছিলেন। অর্ধশতরান করেন রুট। ব্রুক নিজের ছন্দে খেলছিলেন। কিন্তু স্টার্কের বলে ৩১ রান করে আউট হন তিনি।
ব্রুক আউট হওয়ার পর নামেন স্টোকস। শুরুতে সমস্যা হচ্ছিল তাঁর। ফলে রুটকে বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হচ্ছিল। সেই দায়িত্ব নেন তিনি। স্টার্ককে সামলান। নৈশভোজের বিরতি পর্যন্ত ক্রিজ়ে ছিলেন দু’জন। বিরতির পরেও ভালই খেলছিলেন দুই ব্যাটার। কিন্তু ১৯ রানের মাথায় ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হন স্টোকস। উইকেটরক্ষক জেমি স্মিথও শূন্য রানে আউট হয়েছেন।
অপর প্রান্তে পর পর উইকেট পড়লেও রুটকে সমস্যায় ফেলতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ার বোলারেরা। দু’বার তাঁর বিরুদ্ধে ডিআরএস নেন স্টিভ স্মিথ। দু’বারই সেই আবেদন খারিজ হয়। সব চাপ সামলে ১৮১ বলে শতরান করেন তিনি। শতরানের পর রুটের উচ্ছ্বাস বুঝিয়ে দিচ্ছিল, এই ইনিংসের গুরুত্ব তাঁর কাছে কতটা।
রুট টিকে থাকলেও গাস অ্যাটকিনসন ও ব্রাইডন কার্স তাড়াতাড়ি আউট হন। অ্যাটকিনসনের উইকেটের কৃতিত্ব উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারের। পিছন দিকে অন্তত ৩০ গজ দৌড়়ে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ ধরেন তিনি। দু’টি উইকেটই নেন স্টার্ক। পার্থে প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ব্রিসবেনেও প্রথম ইনিংসে নিলেন ৬ উইকেট। টেস্টে বাঁহাতি পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেটের মালিক হলেন স্টার্ক। ১০২ টেস্টে ৪১৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। এর আগে এই রেকর্ড ছিল পাকিস্তানের ওয়াসিম আক্রমের দখলে। ১০৪ টেস্টে ৪১৪ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। আক্রমকে ছাপিয়ে গেলেন স্টার্ক।
দেখে মনে হচ্ছিল, প্রথম দিনই অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাট করতে নামতে হবে। স্টোকসেরা তৈরিও ছিলেন। কিন্তু সব হিসাব গুলিয়ে দিলেন আর্চার। ১১ নম্বরে নেমে ঝোড়ো ইনিংস খেললেন তিনি। তাঁকে দেখে গিয়ার বদলালেন রুটও। দু’জনের মধ্যে ৪৪ বলে ৬১ রানের জুটি হল। সেই জুটি ভাঙতে পারল না অস্ট্রেলিয়া। ফলে দ্বিতীয় দিন আবার ব্যাট করতে নামবে ইংল্যান্ড।