Advertisement
E-Paper

কলকাতা, দিল্লি থেকে আইপিএল, মায়ান্তি-সঞ্জনাদের জগতে নতুন রানি হেডেন-কন্যা গ্রেস! ইংরেজ ব‍্যাটার রুট শুনলেন লাস‍্যময়ীর কথা

পিতার নাম ভাঙিয়ে নয়, বরাবরই নিজের পরিচয় তৈরি করতে চেয়েছিলেন গ্রেস হেডেন। ক্রিকেটার পিতা কখনও তাঁকে থামাননি। নিজের যোগ্যতায় এগিয়ে যেতে দিয়েছেন।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:১৮
cricket

গ্রেস হেডেন। ছবি: এক্স।

‘দয়া করে একটা শতরান করো!’ অ্যাশেজ় চলাকালীন ইংল্যান্ডের ব্যাটার জো রুটের কাছে আর্জি অস্ট্রেলিয়ার এক তরুণীর। কে তিনি? গ্রেস হেডেন। কে এই গ্রেস? অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার ম্যাথু হেডেনের কন্যা। গ্রেস অবশ্য হেডেন-কন্যা হিসাবে পরিচিত নন। তাঁর আলাদা পরিচয় আছে। তিনি একাধারে ক্রিকেট সঞ্চালক, ধারাভাষ্যকার, কন্টেন্ট প্রস্তুতকারক, এমনকি, মডেলও। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি সংস্থার প্রচারের মুখ তিনি। মায়ান্তি ল্যাঙ্গার, সঞ্জনা গণেশনদের ছাপিয়ে ক্রিকেটে নতুন রানির তকমা পেয়েছেন তিনি।

পিতার নাম ভাঙিয়ে নয়, বরাবরই নিজের পরিচয় তৈরি করতে চেয়েছিলেন গ্রেস। পিতা তাঁকে থামাননি। নিজের যোগ্যতায় এগিয়ে যেতে দিয়েছেন। তিনি চাইলেই ভারতীয় বোর্ডকে অনুরোধ করে সরাসরি আইপিএল বা আন্তর্জাতিক কোনও প্রতিযোগিতায় সঞ্চালক হিসাবে তাঁকে ঢুকিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। ফলে একেবারে শুরু থেকে শুরু করেছেন গ্রেস।

দু’বছর আগে যখন ইডেনে বেঙ্গল প্রো টি-টোয়েন্টি লিগ হয় তখন সেখানে সঞ্চালকের ভূমিকায় দেখা যায় গ্রেসকে। তখন খুব বেশি তাঁকে কেউ চিনতেন না। গ্রেস পরিচিতি পান দিল্লির টি-টোয়েন্টি লিগে। সেখানে শেফালি বগ্গার মতো ভারতীয় সঞ্চালক থাকলেও গ্রেস নজর কাড়েন। তাঁর বাচনভঙ্গী, ক্রিকেটীয় বোধ, ক্রিকেটারদের সঙ্গে সহজে মিশে যাওয়ার ক্ষমতা সকলকে মুগ্ধ করে। গ্রেস যখনই মাঠে নামতেন, দর্শকেরা চিৎকার করতেন। মোবাইলের ক্যামেরাবন্দি হতেন তিনি। আধুনিক পোশাক থেকে শুরু করে শাড়ি, সবেতেই সমান স্বচ্ছল দেখিয়েছে তাঁকে। ক্রিকেটারদের পাশাপাশি দর্শকদের সঙ্গেও কথা বলতেন গ্রেস। তাঁদের সঙ্গে মশকরা করতেন। ফলে তাঁর জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে। সমাজমাধ্যম ভরে গিয়েছে গ্রেসের ছবি ও ভিডিয়োয়।

cricket

ইডেনে বেঙ্গল প্রো টি-টোয়েন্টি লিগে শ্রীবৎস গোস্বামীর (বাঁ দিকে) সঙ্গে গ্রেস হেডেন। ছবি: এক্স।

অস্ট্রেলীয় গ্রেস ভারতের হর্ষিত রানা, নীতীশ রানা, বিরাট সিংহদের সঙ্গে এতটাই সখ্য হয়ে উঠেছিলেন যে, তাঁরা গ্রেসকে দেখলেই এগিয়ে যেতে কথা বলতে। পিতা বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটার হলেও গ্রেস কোনও দিন ক্রিকেটার হতে চাননি। ব্যাটের বদলে মাইক্রোফোন হাতে তুলে নিয়েছেন। সেটাই সজোরে চালিয়েছেন। নিজের জায়গা তৈরি করেছেন।

কলকাতা ও দিল্লির লিগ তাঁকে জনপ্রিয়তা দিয়েছে। সেই জনপ্রিয়তায় ভর করে আইপিএলেও সঞ্চালনার দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। ভারতীয় ক্রিকেটে এত দিন মহিলা সঞ্চালকদের ক্লাবে মন্দিরা বেদী, মায়ান্তি, সঞ্জনারা ছিলেন। সেখানে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন অ-ভারতীয় গ্রেস। বুঝিয়ে দিয়েছেন, সকলকে আপন করে নিলে তাঁরাও সম্মান দেবে। বিদেশী বলে কেউ দূরে সরিয়ে দেবে না। ভারতকে নিজের দ্বিতীয় বাড়ি মনে করেন গ্রেস। বছরের একটা বড় সময় এই দেশেই কাটান তিনি। সে কথা নিজেই এক সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন গ্রেস। বলেছেন, “ওখানে যে ভালবাসা পেয়েছি, তা অন্য কোথাও পাইনি। ভারত ক্রিকেটপাগল এক দেশ। তাই ওখানকার মাঠে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়। খুব মজা করি। ভারত আমার দ্বিতীয় বাড়ি।”

আপাতত অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছেন গ্রেস। সেখানে অ্যাশেজ় সিরিজ় চলছে। সেই সিরিজ়েও দায়িত্ব পেয়েছেন। কিছু দিন আগে হংকং সুপার সিক্সেস ও ভারতের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ়ে কাজ করেছেন। তার মাঝে দুবাইয়ে ছিলেন। সেখানে ইন্টারন্যাশনাল টি১০ লিগে সঞ্চালনা করেছেন। সামনে কানাডায় ৬০ বলের ক্রিকেট প্রতিযোগিতাতেও সঞ্চালক হিসাবে দেখা যাবে তাঁকে। বোঝা যাচ্ছে, কতটা ব্যস্ত তিনি। প্রায় প্রতিদিনই এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে হচ্ছে তাঁকে।

cricket

গ্রেস হেডেন। ছবি: এক্স।

সম্প্রতি পিতার জন্য আবার শিরোনামে এসেছেন গ্রেস। অ্যাশেজ় শুরুর আগে হেডেন দাবি করেছেন, এই সিরিজ়ে রুট যদি একটিও শতরান না করেন তা হলে তিনি নগ্ন হয়ে মেলবোর্নের মাঠে হাঁটবেন। বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট ব্যাটার রুট অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্টে এখনও পর্যন্ত শতরান করতে পারেননি। হেডেন নিশ্চিত, এ বার অন্তত একটি শতরান তিনি করবেনই। সে কথা জানার পরেই পিতার পাশে দাঁড়িয়ে রুটকে অন্তত একটি শতরান করার আর্জি জানিয়েছেন গ্রেস। সেই আর্জি শুনলেন রুট। ব্রিসবেনে দিন-রাতের টেস্টে শতরান করলেন তিনি। অর্থাৎ, হেডেনকে আর নগ্ন হয়ে মেলবোর্নের মাঠে হাঁটতে হবে না।

পেশার পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও কখনও কিছু লুকোননি গ্রেস। ২৩ বছর বয়সি গ্রেসের প্রেমিকের নাম উইসলসন স্ট্যাথাম। অস্ট্রেলিয়ার নামকরা ‘সানডাউন প্যাসটোরাল কটন’ সংস্থার মালিক তিনি। কুইন্সল্যান্ডে ৭০ হাজার হেক্টর জায়গার উপর তাঁদের বিশাল বাড়ি ও কারখানা। সেই বাড়ির ছেলে উইলসনের সঙ্গে গত বছর ধরে প্রেমের সম্পর্কে রয়েছেন গ্রেস। ব্যস্ততার মাঝেও প্রেমিকের সঙ্গে সময় কাটান তিনি। সম্প্রতি সমুদ্রসৈকতে একসঙ্গে দেখা গিয়েছে তাঁদের।

cricket

সঞ্চালকের ভূমিকায় গ্রেস হেডেন। ছবি: এক্স।

ভারতকে নিজের দ্বিতীয় বাড়ি মনে করলেও চলতি বছর একটি খারাপ অভিজ্ঞতাও হয়েছে তাঁর। সেপ্টেম্বর মাসে দিল্লির লিগ চলাকালীন এক যুবক তাঁর হোটেলে পৌঁছে গিয়েছিলেন। এক সাক্ষাৎকারে গ্রেস বলেন, “ও মনে মনে আমারে ওর স্ত্রী ভেবে ফেলেছিল। আমাকে নিয়ে যেতে এসেছিল। আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তবে ভাগ্য ভাল হোটেলের কর্মীরা ওকে ধরে ফেলে। তাই বাড়াবাড়ি কিছু হয়নি।” তার পরেও এই দেশকে ভালবাসেন তিনি। গ্রেস বলেন, “ভারতে আমার অনেক বন্ধু আছে। তাই ওখানে কোনও দিন ভয় লাগেনি। এ বারই প্রথম লেগেছে। এক-আধটা ঘটনা তো ঘটতেই পারে। তাতে ভারতের প্রতি ভালবাসা আমার কমবে না।”

ভারতীয় দর্শকেরাও গ্রেসকে আপন করে নিয়েছেন। নিজের সৌন্দর্য, ব্যবহার, বাচনভঙ্গী, ক্রিকেট বোধ, মশকরা, খুনসুটি দিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটে নিজের জায়গা প্রতিদিন আরও পাকা করে ফেলছেন তিনি। মায়ান্তি, সঞ্জনাদের ছাপিয়ে নতুন রানি হয়ে উঠছেন গ্রেস।

Grace Hayden Matthew Hayden Joe Root
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy