Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ওপেনারদের ব্যর্থতায় খোঁজ পড়েছে পৃথ্বীর

বিজয়কে ইংল্যান্ড সফরের মাঝপথে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। পৃথ্বী শ-কে তখনই অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ডাকা হয়েছিল। পৃথ্বী ইংল্যান্ডে না খেললেও দেশের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে অভিষেক টেস্টেই সেঞ্চুরি করেন।

চর্চায়: পার্‌থে ব্যাট হাতে অনুশীলন পৃথ্বীর। হেজলউডের বলে ছিটকে গিয়েছে কে এল রাহুলের স্টাম্প। শনিবার দ্বিতীয় দিনে। এএফপি

চর্চায়: পার্‌থে ব্যাট হাতে অনুশীলন পৃথ্বীর। হেজলউডের বলে ছিটকে গিয়েছে কে এল রাহুলের স্টাম্প। শনিবার দ্বিতীয় দিনে। এএফপি

সুমিত ঘোষ
পার্থ শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:৫৭
Share: Save:

বিরাট কোহালি এবং অজিঙ্ক রাহানের তৈরি করা প্রতিরোধের মধ্যেও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে ওপেনারদের ব্যর্থতা নিয়ে। সেই দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে একই জিনিস চলছে। কখনও শিখর ধওয়নকে চেষ্টা করা হয়েছে, কখনও কে এল রাহুলকে, আবার কখনও বা মুরলী বিজয়কে। কিন্তু কিছুতেই ওপেনিং জুটি যেন থিতু হচ্ছে না।

বিজয়কে ইংল্যান্ড সফরের মাঝপথে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। পৃথ্বী শ-কে তখনই অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ডাকা হয়েছিল। পৃথ্বী ইংল্যান্ডে না খেললেও দেশের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে অভিষেক টেস্টেই সেঞ্চুরি করেন। কথা উঠে গিয়েছে মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্টে তাঁকে ফেরানোর। চলতি সিরিজে প্রস্তুতি ম্যাচেও ভাল খেলেছিলেন পৃথ্বী। কিন্তু অ্যাডিলেড টেস্টের ঠিক আগে গোড়ালি মচকে ছিটকে যান।

এ দিন ভারতীয় শিবির থেকে যে রকম মেডিক্যাল বুলেটিন পাওয়া গেল তাতে পৃথ্বীকে মেলবোর্নে পাওয়া যাবে বলেই আশা করা হচ্ছে। যে-হেতু তাঁর বয়স কম, দ্রুত সুস্থ হতে পারবেন বলে অনুমান। তাঁর গোড়ালির অবস্থা এখন অনেক ভাল। পৃথ্বী ট্রেনিংও শুরু করেছেন। যা পরিস্থিতি, পার্‌থে দ্বিতীয় ইনিংসে বিজয় রান না করলে তাঁর টেস্ট কেরিয়ার এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারে। এই নিয়ে বিজয় তিনবার আউট হলেন মিচেল স্টার্কের বলে। কে এল রাহুলকে নিয়েও মোটেই কেউ খুশি নয়। ইংল্যান্ডে গোটা সিরিজে খেলেও একেবারে শেষে ওভাল টেস্টে গিয়ে রান করেন রাহুল। মনে করা হচ্ছে, ওপেনিং জুটির ব্যর্থতায় বারবার চাপ তৈরি হচ্ছে কোহালি-পূজারাদের উপর। কেউ কেউ এখন থেকেই বলছেন, ময়াঙ্ক আগরওয়ালকেও তৈরি করা হোক। সে রকম হলে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে পৃথ্বী-ময়াঙ্ককে খেলানো হবে। কেউ কেউ বলছেন, ‘‘শিখর পারেনি বলে বাদ গিয়েছে। বাকিদেরও বা তা হলে রাখা হবে কেন? অনেক সুযোগই তো পেল।’’ এখন যা পরিস্থিতি, পৃথ্বী শ যদি সত্যিই ফিট হয়ে যেতে পারেন এবং পার্‌থে দ্বিতীয় ইনিংসে দুই ওপেনার দুর্দান্ত কিছু করে না ফেললে মেলবোর্নে পৃথ্বীই খেলবেন। সেক্ষেত্রে বিদেশের মাটিতে স্বপ্নের মঞ্চ অপেক্ষা করে থাকবে মুম্বইয়ের নতুন প্রতিভার জন্য। বক্সিং ডে টেস্টের মেলবোর্নে বিদেশে প্রথম টেস্ট খেলতে নামাটা সারা জীবনের স্বপ্নপূরণ হওয়ার মতোই ব্যাপার।

এ দিকে, ইশান্ত শর্মা পাল্টা কটাক্ষ করে গেলেন অস্ট্রেলীয় মিডিয়াকে। অতিরিক্ত ‘নো বল’ করা নিয়ে সরব হয়েছিল অস্ট্রেলীয় প্রচারমাধ্যম। দিনের খেলা শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে ‘নো বল’ করা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ইশান্ত বলে দেন, ‘‘অস্ট্রেলীয় মিডিয়াই এর উত্তর ভাল দিতে পারবে।’’ তার পরে যোগ করেন, ‘‘মানুষ মাত্রেই ভুল হয়। কেউ ইচ্ছা করে নো বল করে না। তবু হয়ে যায় মাঝেমধ্যে। আমি মোটেও দুশ্চিন্তায় পড়ে যাইনি।’’

অ্যাডিলেডের ফুটেজে দেখা গিয়েছে, ইশান্ত প্রায় এক ডজন ‘নো বল’ করেছেন। যার অনেকগুলোই আম্পায়াররা দেখতে পাননি। তাঁরা সেই কারণে অনেক ক্ষেত্রে ‘নো’ ডাকেননি। তবে অ্যাডিলেডে ভারত জেতার পরে অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যমে ইশান্তের ‘নো বল’ করা নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়। যদিও এ দিন অস্ট্রেলীয় বোলাররা ক্রিজের বাইরে পা ফেলে বল করলেও আম্পায়াররা ডাকতে পারেননি।

ম্যাচের পরিস্থিতি কী রকম মনে হচ্ছে? ইশান্ত বললেন, ‘‘বিরাট আর অজিঙ্ক কাউন্টার অ্যাটাক করে খেলাটা অনেক ঘুরিয়ে দিয়েছে। শুরুতে দুই উইকেট চলে যাওয়ায় আমাদের উপর চাপ ছিল। সেখান থেকে পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এনেছে ওরা দু’জনে। বিরাট যখনই ব্যাট করে, আমরা খুবই আত্মবিশ্বাসী থাকি।’’ কোহালি-রাহানের পার্টনারশিপ নিয়ে আশাবাদী দেখাচ্ছে দেশের প্রাক্তন ক্রিকেটারদেরও। বীরেন্দ্র সহবাগ থেকে শুরু করে ভি ভি এস লক্ষ্মণ, অনেকেই টুইটারে ভারতের অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়কের জুটিকে অভিনন্দন জানিয়ে লিখেছেন, এ ভাবেই চালিয়ে যাও তোমরা। ইশান্ত মনে করছেন, রবিবার সকালে কোহালি-রাহানে চালিয়ে যেতে পারলে তাঁরা চালকের আসনে চলে আসতে পারেন। ‘‘যেখানে ছিলাম, তার থেকে আমরা এখন অনেক শক্তিশালী জায়গায়। ম্যাচটা এখনও সমান-সমান রয়েছে। আশা করছি, ওরা দু’জনে চালিয়ে যেতে পারবে,’’ বললেন ইশান্ত। পূজারার সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে ৭৪ রান যোগ করেন কোহালি। এর পরে রাহানের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন চতুর্থ উইকেটে এখনও পর্যন্ত তুলেছেন ৯০ রান। পূজারারও প্রশংসা করেন ইশান্ত। বলেন, ‘‘আমি পূজারার বিরুদ্ধে খেলেছি। জানি ওকে আউট করা কত কঠিন। যেখানে খেলবে, সেখানেই বল পড়ে থাকবে।’’

অস্ট্রেলিয়া আবার আশায় থাকছে যে, কোহালিকে রবিবার সকালে ক্রিজে নতুন করে থিতু হতে হবে। উসমান খোয়াজা বলে গেলেন, ‘‘কোহালি ভাল ব্যাটসম্যান। সুযোগ দিলে সেটা লুফে নেবে। ওকে আমরা ফুল লেংথ বল দিয়েছি। একই সঙ্গে আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে, উইকেটে বল রেখে বোলিং করে যেতে হবে। তার পর পিচ কতটা কী সাহায্য করে, সেটাই দেখার।’’ খোয়াজা মনে করছেন, ম্যাচে এখনও তাঁরা এগিয়ে। অনেকে যদিও একমত হচ্ছেন না। গরিষ্ঠ অংশের মত হচ্ছে, কিং কোহালি যত ক্ষণ আছেন, এগিয়ে ভারতই। কোহালিকে সরাতে না পারলে অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচে ফেরার আশা কম। এ দিন গোটা ক্রিকেট বিশ্বে কোহালির ইনিংস নিয়ে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। এমনকি, পাকিস্তান ক্রিকেট মহল থেকে সর্বোচ্চ প্রশংসা উপচে পড়তে থাকে। কেউ কেউ টুইটারে এমনও লেখেন যে, কোহালি এশিয়ার সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান। এক জন লেখেন, দুর্দান্ত এক টেস্ট ম্যাচ হচ্ছে। সেরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যাচ্ছে। আর আধুনিক যুগের শ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান দেখিয়ে দিচ্ছেন, কেন তিনি সেরা। যত সময় যাচ্ছে, চিরকালের বোলার-বন্ধু পার্‌থে ক্রমশ বড় হয়ে উঠছে ব্যাটসম্যান বিরাটের ছায়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE