আইএসএলের আগামী মরসুম কবে থেকে শুরু হবে, বা আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা এখনও কাটেনি। এই পরিস্থিতিতে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে প্রস্তাব দিয়েছিল দেশের ১২টি ক্লাব। সেই প্রস্তাবে প্রাথমিক ভাবে রাজি হয়েছে ফেডারেশন। ক্লাবগুলির সঙ্গে মিলে যৌথ ভাবে আইএসএল আয়োজন করতে চায় তারা।
জানা গিয়েছে, আগামী ২০ ডিসেম্বর সর্বভারতীয় ফুটবল সংস্থার এগজ়িকিউটিভ কমিটির বৈঠক রয়েছে। সেখানেই এই প্রস্তাব দেওয়া হবে। সবুজ সঙ্কেত পেলেই আগামী পদক্ষেপ করবেন কল্যাণ চৌবেরা।
কয়েক দিন আগে সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রক জানিয়েছিল যে, আইএসএলের জট কাটাতে উদ্যোগী তারা। কিন্তু তার পরেও সমাধান হয়নি। ফেডারেশনের মতে, রাতারাতি কোনও সমাধান বার হওয়া মুশকিল। কিন্তু এই জটে লিগ ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে। আর সময় নষ্ট করতে চাইছে না তারা। তাই যৌথ ভাবে লিগ আয়োজনে আগ্রহী ফেডারেশন।
সর্বভারতীয় ফুটবল সংস্থার সহ-সচিব এম সত্যানারায়ণ বুধবার ক্লাবগুলিকে একটি চিঠি লিখেছেন। সেখানে লেখা, “গত ১০-১৫ বছরে বিনিয়োগকারী ও ক্লাবগুলোর সঙ্গে মিলে ভারতীয় ফুটবলের উন্নতির চেষ্টা করেছে ফেডারেশন। সেই চেষ্টা যাতে বৃথা না যায়, তার জন্য যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করতে হবে। আমরা জানি, দীর্ঘকালীন একটা সমাধান হওয়া উচিত। কিন্তু ফুটবল যাতে কোনও ভাবেই থেমে না থাকে, তার জন্য প্রাথমিক ভাবে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।” তার জন্য ক্লাবগুলির সঙ্গে একটি বৈঠকও করতে চায় ফেডারেশন।
গত ৩ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী মনসুখ মান্ডবীয়ের সঙ্গে বৈঠক করে ক্লাবগুলি। সেখানে ক্রীড়ামন্ত্রী দ্রুত লিগ শুরু হবে বলে আশ্বাস দেন ক্লাবগুলিকে। প্রস্তুতি শুরু করে দিতে বলেন। তবে কী ভাবে লিগ আয়োজন হবে তা বলেননি। তাই ক্লাবগুলির অস্বস্তি কাটেনি। সে কারণেই ফেডারেশন সভাপতিকে চিঠি দেয় ১২টি ক্লাব।
৮ ডিসেম্বর আইএসএলের আয়োজক এফএসডিএল-এর সঙ্গে মাস্টার রাইটস এগ্রিমেন্ট শেষ হয়েছে ফেডারেশনের। এখনও বোঝা যাচ্ছে না পরের লিগের আয়োজক কে। ক্লাবগুলির আর্জি, দরকার পড়লে তারাই একটি সংস্থা তৈরি করে লিগ আয়োজন করতে রাজি। শুধু ফেডারেশনকে তার ব্যবস্থা করতে হবে কেন্দ্রীয় সরকার এবং দরকারে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে কথা বলে। চিঠিতে আইএসএলের ক্লাবগুলি জানিয়েছে, গত ১১ বছর ধরে ফুটবলের জন্য প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেছে তারা। ক্ষতির পরোয়া না করে সুষ্ঠু কাঠামো এবং কেন্দ্রীয় লভ্যাংশ তৈরি করতে চেয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক অনিশ্চয়তার কারণে ক্লাবগুলির অর্থ উপার্জনের সব রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। চুক্তি থাকা সত্ত্বেও স্পনসরেরাও একে একে সরে যাচ্ছে। ক্লাবগুলি লিখেছে, “বেশিরভাগ ক্লাবই ফুটবলারদের বেতন দিয়ে গিয়েছে এবং সম্পর্ক ভাল রেখেছে। তবে এই পরিস্থিতি শুধু কঠিনই নয়, এই ভাবে চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব।”
আরও পড়ুন:
ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে আইএসএলের ক্লাবগুলি অনুরোধ করেছে, যাতে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া সরিয়ে রেখে টেন্ডার ডাকা যায়। ফেডারেশনের সংবিধানের ১.২১, ১.৫৪ এবং ৬৩ নম্বর ধারা নিয়ে সমস্যা, যার ফলে কেউ আইএসএল আয়োজন করতে চেয়ে দর দিচ্ছে না। যাঁর অধীনে খসড়া সংবিধান তৈরি হয়েছে, সেই অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাও এবং পরামর্শদাতা সংস্থা কেপিএমজি-ও এই নিয়ে সহমত পোষণ করেছে বলে ফেডারেশনে জানিয়েছে ক্লাবগুলি।
ক্লাবগুলির আর্জি, সাংবিধানিক জটিলতা মিটিয়ে দ্রুত নতুন করে টেন্ডার ডাকা হোক। সময়সীমা তৈরি করা হোক, যা মেনে চলতেই হবে। এই মাসের মধ্যেই সমস্যা মেটানোর আর্জি জানিয়েছে তারা। পাশাপাশি স্পষ্ট করে দিয়েছে, লিগ আয়োজন করতে হলে দরকারে ক্লাবগুলি মিলে নিজেরাই একটি সংস্থা তৈরি করবে, যারা লিগ চালাবে। সেখানে প্রত্যেক ক্লাবেরই সদস্য থাকবে এবং প্রতিটি সিদ্ধান্ত সব ক্লাবের অনুমতিতেই নেওয়া হবে। ইউরোপে ইংল্যান্ড, ইটালি, স্পেন-সহ সব বড় দেশে এ ভাবেই ঘরোয়া লিগ চালানো হয়। সেখানে দেশের ফুটবল সংস্থার বিশেষ ভূমিকা থাকে না। তারা শুধু কিছু বিষয়ে মতামত দিতে পারে। ক্লাবগুলি জানিয়েছে, দরকারে যে কোনও বিষয়ে তারা ফেডারেশনকে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত। তার পরেই ফেডারেশনও সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হয়েছে। এখন দেখার, ক্লাব ও ফেডারেশনের বৈঠকে আইএসএলের কোনও সমাধান বার হয় কি না।