Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বিপর্যয়ের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া শিবিরে ছড়াচ্ছে গৃহযুদ্ধের শঙ্কা

একটা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় সামনে রেকর্ডার চালু থাকা কোনও এক সাংবাদিকের মোবাইল বেজে উঠল।

রসিকতা: সাংবাদিকের ফোন কানে টিম পেন। ছবি: টুইটার।

রসিকতা: সাংবাদিকের ফোন কানে টিম পেন। ছবি: টুইটার।

সুমিত ঘোষ
সিডনি শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৫১
Share: Save:

দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে দলের অধিনায়ক সাংবাদিক সম্মেলন করতে আসছেন, এমন দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না। মাঠে অস্ট্রেলিয়া টিমের পারফরম্যান্সের চেয়ে ধাঁধা তৈরি হল টিম পেন সাংবাদিকদের সামনে আসায়। এবং শুধু তাঁর উপস্থিতিতেই শেষ হল না চমক।

একটা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় সামনে রেকর্ডার চালু থাকা কোনও এক সাংবাদিকের মোবাইল বেজে উঠল। পেন সেই কলটা রিসিভ করে নিয়ে কথা বলতে শুরু করে দিলেন। এক মিনিটের সেই কথোপকথন চলল এ রকম:

ফোন বাজছে...

মোবাইল তুলে নিয়ে কল রিসিভ করে অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক: টিম পেন স্পিকিং। আপনি কে বলছেন?

ও আচ্ছা, হংকং থেকে কেসি।

কাকে খুঁজছেন আপনি?

ওহ্‌, মার্টিন। আচ্ছা, ও একটা সাংবাদিক সম্মেলনের মধ্যে আছে। আমি কি ওকে বলতে পারি আপনাকে কল ব্যাক করার জন্য?

ঠিক আছে, আমি ওকে বলে দিচ্ছি যাতে ই-মেল দেখে নেয়।

এর পর ফোন রেখে দিয়ে মার্টিন নামের সেই সাংবাদিকের দিকে তাকিয়ে বলে দিলেন, ‘‘ই-মেল চেক করে নিও।’’

টিম পেনের রসবোধের নানা নমুনা এই সিরিজে দেখা গিয়েছে। স্টাম্পের পিছন থেকে কালজয়ী সব মন্তব্য করেছেন ভারতীয় ক্রিকেটারদের উদ্দেশে। তার মধ্যে ঋষভ পন্থকে করা তাঁর স্লেজিং ‘‘তুমি বেবিসিট করতে পারো? তা হলে ডিনারে চলে এসো। আমি স্ত্রীকে নিয়ে সিনেমা দেখতে যাব, তুমি আমাদের বাচ্চাদের একটু সামলে দিও,’’ সিরিজের সেরা আখ্যা পেয়ে গিয়েছে।

আরও পড়ুন: ‘এ বার দেখতে চাই শামি-বুমরার যুগলবন্দি’

এ দিন সেই ঋষভই চুরমার করে দিয়ে গেলেন তাঁর দলকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে মন্তব্য করতে থাকেন, ‘‘তা হলে পেনের বাচ্চাদের সামলানোর পাশাপাশি ঋষভ ব্যাটও করতে পারে।’’ অস্ট্রেলীয় অধিনায়ককে দেখে মনে হল, তিনি প্রবল চাপের মধ্যে থেকেও সেটাকে মাথায় চড়তে দিচ্ছেন না। নজিরবিহীন সঙ্কটে আক্রান্ত তাঁদের ক্রিকেট। চারদিক থেকে সমালোচনার ঢেউ আছড়ে পড়ছে। একে তো টেস্ট টিম হারছে। সত্তর বছরে প্রথম বার ভারতের কাছে সিরিজ হারের আশঙ্কা তাড়া করছে। তার উপর এ দিন ওয়ান ডে টিম ঘোষণা করা হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার। তা নিয়েও বিতর্ক। শেন ওয়ার্ন তুলোধনা করে বলেছেন, ‘‘এটা কোনও টিম হয়েছে? নির্বাচকেরা যা খুশি-তাই করে যাচ্ছে।’’

আরও পড়ুন: তিন স্পিনার নিয়ে ক্লাস সাইরাজের

এর মধ্যেই গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে পেনের সংসারে। গত কাল অস্ট্রেলীয় পেসাররা প্রথমে ফুল লেংথ বল করছিলেন। কমেন্ট্রিতে রিকি পন্টিং যে রণনীতির তীব্র সমালোচনা করছিলেন। ঘণ্টা খানেক পরে দেখা যায়, পন্টিংয়ের কথা মতো মিচেল স্টার্ক, জশ হেজ্লউডরা শর্ট বল করতে শুরু করেন। বোলিং কোচ ডেভিড সাকের অস্ট্রেলিয়ার রেডিয়োর সামনে চাঞ্চল্যকর বিবৃতি দিয়ে যান, ‘‘বোলারদের রণনীতি নিয়ে মতভেদ তৈরি হয়েছিল টিমের মধ্যে। বোলাররা এক রকম চাইছিল, পেন আর এক রকম।’’ বোলিং কোচ এবং কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার বেশ উত্তপ্ত আলোচনায় জড়িয়ে পড়েছিলেন বলেও দাবি করেন সাকের। এর পর নেথান লায়ন এসে কার্যত অধিনায়কের দিকে আঙুল তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘বোলিং স্ট্র্যাটেজি পরিবর্তন করায় আমার সায় ছিল না। পিচে ভিজে ভাব ছিল। সেটার ফায়দা তোলার জন্য ফুল লেংথ বল করা উচিত ছিল। কিন্তু হঠাৎই স্ট্র্যাটেজি পাল্টে শর্ট বল করা শুরু হয়। আমার মতে, ভিজে ভাবকে কাজে লাগানোর জন্য উপরে-উপরে বল করাই উচিত ছিল।’’ বোলিং কোচ এবং প্রধান স্পিনারের কথায় দলের মধ্যে স্পষ্টতই অশান্তির কালো মেঘ। সেই কারণেই তড়িঘড়ি এ দিন পেন নিজে সাংবাদিক সম্মেলন করতে এলেন কি না, বোঝা গেল না। বোলিং কোচের বিবৃতিকে খণ্ডনও করে গেলেন তিনি। বললেন, ‘‘টিমের মধ্যে কোনও মতান্তর হয়নি। টেস্টের মাঝে প্রত্যেক দিনই আমরা আলোচনা করি কিন্তু এমন নয় যে, সকলে একসূত্রে গাঁথা ছিলাম না।’’ আরও বললেন, ‘‘বোলারদের সঙ্গে সব সময়ই কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরিকল্পনা ব্যর্থ হতে পারে। কিন্তু মতান্তর হয়েছে, কথাটা ঠিক নয়।’’ যদিও প্রশ্ন থেকেই গেল, তা হলে লায়ন এমন কথা বলে গেলেন কেন?

পিচের চরিত্রকেও কার্যত এক হাত নিলেন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক। চেতেশ্বর পূজারার ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করেও বললেন, ‘‘পার্‌থে গতি ও বাউন্স ছিল। দুই ইনিংসেই পূজারাকে বাউন্স করিয়ে আউট করা গিয়েছিল। পার্‌থে কিন্তু রান পায়নি ও। এটা ঠিক এখানে আমাদের সব পরিকল্পনাই ও ভেস্তে দিয়েছে কিন্তু পিচে বেশি গতি আর বাউন্স থাকলে ওকে আউট করার রাস্তা বার করা যায়।’’ নিজেদের দেশে খেলা হলেও তাঁদের যে পিচের উপরে কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই, সেটা পরিষ্কার করে দিয়ে যান পেন। বলে দেন, ‘‘আমাদের যা দেওয়া হবে, তার উপরে নিজেদের সেরাটাই শুধু দিতে পারি।’’

কখনও কিউরেটর বনাম অধিনায়ক। কখনও অধিনায়ক বনাম বোলিং কোচ। কখনও অধিনায়ক বনাম তাঁর প্রধান স্পিনার। আভাস, ইঙ্গিতে হলেও সিডনিতে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে। দু’দিন ধরে মাঠের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে দৌড়ে বেড়ানোর পরে ফাটল আরও বেরিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই টেস্ট হেরে গেলে অশান্তি চরমে উঠতে পারে। তখন সাংবাদিক সম্মেলনে এসে হংকং থেকে আসা সাংবাদিকের ফোন এ ভাবে ধরার মতো অবস্থায় থাকবেন টিম পেন? সিডনির ফলাফলই ঠিক করে দেবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE