Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
India U19

কাপ জিতবই, বাবাকে কথা দিয়েছেন ভারত অধিনায়ক

প্রিয়ম এখন বিশ্বকাপে জাতীয় দলের অধিনায়ক। ছেলেকে বিশ্বজয়ী দেখতে চাইছেন বাবা। কিন্তু, এমনই পরিস্থিতি যে, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনাল পুরোটা দেখতে পারবেন না। বড় মেয়ের সদ্য অস্ত্রোপচার হয়েছে।

ট্রফি হাতে প্রিয়মকে কি এ ভাবেই হাসতে দেখা যাবে? ছবি টুইটার থেকে নেওয়া।

ট্রফি হাতে প্রিয়মকে কি এ ভাবেই হাসতে দেখা যাবে? ছবি টুইটার থেকে নেওয়া।

সৌরাংশু দেবনাথ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১০:৪৯
Share: Save:

কাপ জিতে ফিরবই! বাবা নরেশ গর্গকে আগাম প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রিয়ম। ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দলের অধিনায়ক।

পোচেস্ট্রুমে পাঁচ বার যুব বিশ্বকাপ জেতার অনন্য নজিরের সামনে দাঁড়িয়ে টিম ইন্ডিয়া। আর একটা ম্যাচ জিতলেই তৈরি হবে নতুন ইতিহাস। ঐতিহাসিক এই সন্ধিক্ষণে উল্টোদিকে রয়েছে প্রথম বার বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা বাংলাদেশ। কোয়ার্টার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া ও সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফুটছেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। ফাইনালে ওঠার পর বাবা নরেশ গর্গের সঙ্গে ভারতের যুব দলের অধিনায়ক প্রিয়মের কথায় যেন সেই আত্মবিশ্বাসেরই ঝলক।

আনন্দবাজার ডিজিটালকে নরেশ বললেন, “প্রিয়মকে ফোনে আত্মবিশ্বাসী লেগেছে আমার। ও বলল, আমরা দারুণ খেলছি, পাপাজি। প্রত্যেকেই ছন্দে। বোলাররা, ব্যাটসম্যানরা নিজের কাজ করছে। কোনও দিকে চিন্তা বা উদ্বেগের কিছু নেই। আমরা বিশ্বকাপ জিতেই দেশে ফিরব। আমি তখন বললাম, বেটা, তোমরা তো এর মধ্যেই বড় বড় দলগুলোকে হারিয়ে দিয়েছো, তাদের দেশে ফেরত পাঠিয়েছো। সেই সব দলগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ তো কিছুই নয়। অস্ট্রেলিয়াকেই তোমরা যখন ছিটকে দিয়েছো, প্রচণ্ড চাপের পাকিস্তান ম্যাচেও যখন একতরফা দাপটে জিতেছো, তখন ভাবনার কিছু নেই। বললাম, তোমরা পরিশ্রম করো, মনপ্রাণ দিয়ে ফাইনালে খেলো। জিতবে তোমরাই। আমি বিশ্বাস করি, ছেলের হাতেই উঠছে কাপ।”

আরও পড়ুন: বিশ্বকাপ-স্বপ্নে ডুবে যশস্বীরা, বাংলাদেশকে বার্তা হাসিনার

আরও পড়ুন: মায়ের মৃত্যু, তীব্র অনটন, দেশের অনূর্ধ্ব ১৯ ক্যাপ্টেন যেন জীবনকে হারিয়ে দেওয়া ক্রিকেটার​

শুধু বিশ্বাসই নয়, সঙ্গী হচ্ছে প্রার্থনাও। নরেশ বললেন, “প্রিয়মকে বললাম যে চেষ্টায় ফাঁকি রেখো না। কিন্তু কোনও রকম টেনশন করো না। মন দিয়ে খেলো। আমাদের গ্রামে বলা হয় যে, ‘ডরনা নেহি হ্যায়’। একদম ঝাঁপিয়ে পড়ো। তার পর দেখা যাবে কী হয়। সেটাই করতে বলেছি। বললাম, ভগবান তোমাদের সঙ্গে রয়েছে। আমাদের সবার হৃদয়ের প্রার্থনাও সঙ্গী হচ্ছে তোমাদের।”

প্রিয়মের উঠে আসার কাহিনি শোনালেন নরেশ। যে পথ একেবারেই মসৃণ ছিল না। উত্তরপ্রদেশের মেরঠের কাছে ছোট্ট শহর পরীক্ষিৎগড়ে বাবা-মা আর পাঁচ ভাইবোনের সংসার। কিন্তু, ২০১২ সালের মার্চে মায়ের মৃত্যু বয়ে এনেছিল মারাত্মক ট্র্যাজেডি। ছারখার হয়ে গিয়েছিল সাজানো সংসার। বাবার পরিশ্রমে আর জেদে প্রিয়ম হয়ে উঠেছেন ক্রিকেটার। ছেলেকে ব্যাট হাতে প্রতিষ্ঠিত করতে একাই লড়ে গিয়েছেন নরেশ। কখনও দুধ বিক্রি, কখনও ট্রাকে মাল তোলা, স্কুল ভ্যান চালানো, সংসার টানার জন্য পিছিয়ে আসেননি কোনও কাজ থেকে। সন্তানদের মুখে অন্ন জোগানো বা পড়াশোনা চালানোর ব্যবস্থাতেই তো শেষ নয় দায়িত্ব। প্রিয়মকে ক্রিকেটার করে তোলার স্বপ্নকেও তো বাঁচিয়ে রাখা জরুরি ছিল।

ফাইনালে প্রিয়মের ব্যাটে বড় রান দেখতে চাইছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। ছবি টুইটার থেকে নেওয়া।

প্রিয়ম এখন বিশ্বকাপে জাতীয় দলের অধিনায়ক। ছেলেকে বিশ্বজয়ী দেখতে চাইছেন বাবা। কিন্তু, এমনই পরিস্থিতি যে, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনাল পুরোটা দেখতে পারবেন না। বড় মেয়ের সদ্য অস্ত্রোপচার হয়েছে। পাঁচ দিন পর হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন প্রিয়মের বড়দিদি। বিয়ে হয়ে গেলেও আপাতত বাপের বাড়িতেই থাকেন। প্রিয়মের মেজদির বিয়ে আবার ২০ ফেব্রুয়ারি। হাতে খুব বেশি সময় নেই। বড় মেয়ের চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যাপার ছাড়াও বিয়ের আয়োজনের ব্যাপার রয়েছে। ফলে, দিনভর ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে নরেশকে।

নরেশ তাই বললেন, “কিছু করার নেই, সকালেই বেরিয়ে পড়েছি। ইচ্ছে তো করে বাড়িতে সবার সঙ্গে বসে খেলাটা দেখি। কিন্তু, ম্যাচের শেষ দিকটাই হয়ত দেখতে পাব। সারা দিনে অনেক কাজ সারতে হবে। তবে মোবাইলে স্কোরের দিকে খেয়াল রাখব, লাইভও যতটা পারি দেখার চেষ্টা করব।” ব্যস্ত থাকবেন কাজে, কিন্তু মন পড়ে থাকবে প্রিয়মের পাশে, সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকায়।

বাড়ির ছোট ছেলের হাতে বিশ্বকাপ উঠলে অবশ্য সারা জীবনের পরিশ্রমই সার্থক মনে হবে নরেশের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE