Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
India Lockdown

সিকিমে আটকে পড়া শ্রমিকদের বাড়ির দরজা খুলে দিলেন ভাইচুং

ভাইচুং নিজেও আটকে রয়েছেন শিলিগুড়িতে। গত সপ্তাহে কলকাতা থেকে গ্যাংটকে গিয়েছিলেন তিনি।

সচেতন: ব্যস্ততার মধ্যেও শিলিগুড়ির বাড়িতে শারীরচর্চা ভাইচুংয়ের। ফেসবুক

সচেতন: ব্যস্ততার মধ্যেও শিলিগুড়ির বাড়িতে শারীরচর্চা ভাইচুংয়ের। ফেসবুক

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২০ ০৩:৩২
Share: Save:

রুটি-রুজির টানে তাঁদের কেউ এসেছেন পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা থেকে। কেউ কেউ আবার উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা। লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পরে কাজ বন্ধ হয়ে গেলেও বাড়ি ফেরার উপায় নেই। সিকিমের বিভিন্ন অঞ্চলে আটকে থাকা হাজারখানেক পরিযায়ী শ্রমিকদের সাহায্যে এগিয়ে এলেন ভাইচুং ভুটিয়া। গ্যাংটকের কাছে লুমসে-তে নিজের অসমাপ্ত বাড়িতেই আটকে পড়া শ্রমিকদের থাকা ও খাদ্যের ব্যবস্থা করলেন ভারতীয় ফুটবল দলের প্রাক্তন অধিনায়ক।

ভাইচুং নিজেও আটকে রয়েছেন শিলিগুড়িতে। গত সপ্তাহে কলকাতা থেকে গ্যাংটকে গিয়েছিলেন তিনি। পরিকল্পনা ছিল, দ্রুত কাজ শেষ করে কলকাতায় ফিরে যাবেন সন্তানদের কাছে। কিন্তু শিলিগুড়ি পৌঁছনোর রাতেই প্রধানমন্ত্রী দেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষণা করেন। তার পর থেকে শিলিগুড়িতেই গৃহবন্দি ভাইচুং। না ফিরতে পারছেন কলকাতায়। না যেতে পারছেন সিকিমে। এই পরিস্থিতিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার খবর আরও অস্থির করে তুলেছে পাহাড়ি বিছেকে। সোমবার বিকেলে আনন্দবাজারকে ফোনে ভাইচুং বললেন, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকদের অবস্থাই এখন সব চেয়ে শোচনীয়। থাকার জায়গা নেই। খাবার নেই। পরিবার নিয়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে নিজেদের বাড়িতে ফেরার চেষ্টা করছেন। এই দৃশ্য দেখা যায় না।’’ তিনি যোগ করলেন, ‘‘সিকিমেও ভিনরাজ্যের অনেক শ্রমিক আটকে রয়েছেন। দিন দু’য়েক আগে অনেকেই পায়ে হেঁটে সিকিম ছেড়ে বেরোনোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ওঁদের সীমান্তে আটকে দেওয়া হয়েছে। খুব খারাপ পরিস্থিতি।’’

নিজের বাড়িতে আটকে পড়া শ্রমিকদের রাখার সিদ্ধান্ত কবে নিলেন? ভাইচুং বললেন, ‘‘আমার একটা বাড়ি তৈরি হচ্ছে, সেখানে কয়েক জন ভিনরাজ্যের শ্রমিক যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা বললেন, ওঁদের কয়েক জন বন্ধুও আটকে রয়েছেন। কারও থাকার জায়গা নেই। খাবারও পাচ্ছেন না। তখন ওঁদের বললাম, আমার বাড়িতে সবাইকে আসতে বলুন। পরিস্থিতি যত দিন না স্বাভাবিক হচ্ছে, এখানেই থাকবেন সবাই। সিকিম সরকারকেও বলেছি, আমার বাড়িতে পরিযায়ী শ্রমিকদের পাঠিয়ে দিতে।’’ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেও ভাইচুং আবেদন করেছেন আটকে পড়া শ্রমিকদের কাছে। নিজে যে-হেতু আটকে রয়েছেন শিলিগুড়িতে, তাই ইউনাইটেড সিকিম এফসির সিনিয়র ম্যানেজার অর্জুন রাইয়ের ফোন নম্বর দিয়েছেন। রাতে সিকিম থেকে ফোনে ভাইচুংয়ের সহকারী বললেন, ‘‘উত্তর সিকিমে বেশ কিছু শ্রমিক একটা স্কুল বাড়িতে আশ্রয় পেয়েছেন। কিন্তু ওখানে খাবারদাবার কিছু পাচ্ছেন না। ভাইচুং সরকারের সঙ্গে কথা বলেছেন, যাতে দ্রুত ওঁদের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়া যায়।’’

শুধু আশ্রয় দেওয়াই নয়, সমস্যায় পড়া শ্রমিকদের খাওয়া-দাওয়ার দায়িত্বও নিয়েছেন ভাইচুং। বলছিলেন, ‘‘আমার বাড়িতে শ’খানেক মানুষ থাকতে পারবেন। এই মুহূর্তে ১৫ জন রয়েছেন। এখন ওঁদের পক্ষে খাবার জোগাড় করা সম্ভব নয়। আমিই সব ব্যবস্থা করেছি।’’

ভাইচুং চিন্তিত শিলিগুড়িতে আটকে পড়া সিকিমের শ্রমিকদের নিয়েও। বলছিলেন, ‘‘লকডাউনের জেরে অনেকেই সিকিমে ফিরতে পারছেন না। শিলিগুড়ি আটকে আছেন। স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সঙ্গে কথা বলছি, ওঁদের সাহায্য করার ব্যাপারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

India Lockdown Baichung Bhutia Migrant Labours
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE