মরিয়া: নিউজিল্যান্ডের রক্ষণে এ ভাবেই হানা দিয়েছেন সুনীল। ছবি: এপি।
বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার সাত দিন আগে ভারতীয় ফুটবলে নতুন এক উৎসবের ভঙ্গি হাজির। বৃহস্পতিবার মুম্বইয়ে আন্তঃমহাদেশীয় কাপে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে হারের পরে দেখা গেল, গ্যালারির সামনে দাঁড়িয়ে তালে তালে হাততালি দিচ্ছেন সুনীল ছেত্রী, প্রণয় হালদার, উদান্ত সিংহরা! তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন দর্শকরাও। ঠিক যেন ২০১৬ ইউরো কাপের প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ড বনাম আইসল্যান্ড ম্যাচের দৃশ্য।
ফ্রান্সের নিস শহরে সেই ম্যাচে ওয়েন রুনিদের হারিয়ে গিফি সিরগুডসন-রা চলে গিয়েছিলেন গ্যালারির সামনে। তাঁদের ‘ভাইকিং চ্যান্ট’-এ মেতে উঠেছিল বিশ্ব। সুনীলদের সৌজন্যে ভারতীয় ফুটবলেও দেখা যাচ্ছে সেই দৃশ্য। তবে হেরে যাওয়ার পরেও যে ভাবে দর্শকেরা সুনীলদের সঙ্গত করলেন, ভারতীয় ফুটবলে তা বিরল।
আন্তঃমহাদেশীয় কাপের প্রথম ম্যাচ প্রায় দর্শক শূন্য গ্যালারির সামনে খেলার পরে হতাশ ভারত অধিনায়ক সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইটে ক্রীড়াপ্রেমীদের মাঠে আসার অনুরোধ করেছিলেন। তাঁকে সমর্থন করে ভিডিয়ো বার্তা দেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বিরাট কোহালিও। মুহূর্তের মধ্যে বদলে যায় ছবি। কেনিয়ার বিরুদ্ধে আগের ম্যাচেই ভরে উঠেছিল গ্যালারি। ফাইনালে উঠে যাওয়া ভারত এ দিন নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে নিয়মক্ষার ম্যাচে নামলেও গ্যালারি ফাঁকা ছিল না। সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের দাবি, ফাইনালের সব টিকিট ইতিমধ্যে শেষ।
রবিবার ফাইনাল বলেই হয়তো গোলকিপার-সহ প্রথম দলের কয়েক জন ফুটবলারকে বিশ্রাম দিয়েছিলেন কোচ স্টিভন কনস্ট্যান্টাইন। আকর্ষণের কেন্দ্রে ছিল জাতীয় দলের জার্সিতে জেজে লালপেখলুয়ার পঞ্চাশতম ম্যাচ। যদিও জাতীয় দলের পতাকা আর নীল জার্সি পরে মাঠে আসা দর্শকরা সারাক্ষণ চিৎকার করে গেলেন সুনীলের জন্য! ১-২ পিছিয়ে যাওয়ার পরেও তাঁদের সমর্থনে ভাটা পড়েনি।
দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হওয়ার তিন মিনিটের মধ্যে নিউজিল্যান্ড গোলরক্ষকের ভুলে সুনীল গোল করে এগিয়ে দেন ভারতকে। ঘরের মাঠে টানা সাত ম্যাচে গোল করলেন ভারত অধিনায়ক। বৃহস্পতিবার ছিল, সুনীলের ১০১ তম ম্যাচ। ৬১ গোল হয়ে গেল তাঁর। তবুও ভারত জিততে পারল না মাঝমাঠ ও রক্ষণের ব্যর্থতায়। সুনীলের গোলের এক মিনিটের মধ্যেই নিউজিল্যান্ডকে সমতায় ফেরান আন্দ্রে দে জং। খেলা শেষ হওয়ার চার মিনিট আগে গোল শোধ করেন মোজেস ডায়ার। ম্যাচের সেরা হন নিউজিল্যান্ডের একমাত্র ভারতীয় বংশোদ্ভূত ফুটবলার সরপ্রীত সিংহ। দলের দুটি গোলের নেপথ্যেই তিনি। এই নিউজিল্যান্ডই বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে পেরুর কাছে প্লে-অফ ম্যাচে হেরে ছিটকে গিয়েছিল।
সরপ্রীতের বাবা, মা দু’জনেরই পঞ্জাবে জন্ম। ভারতীয় দলের বিরুদ্ধে জয়ের পর সরপ্রীতের উচ্ছ্বাস তাই ছিল দেখার মতো। উল্টোদিকে জেজের মুখে ছিল হতাশার ছবি। সহজ দু’টি সুযোগ নষ্ট করে স্মরণীয় করে রাখতে পারলেন না নিজের ৫০তম ম্যাচ। ম্যাচের পরে জেজে বলেছেন, ‘‘রবিবার ফাইনাল। চ্যাম্পিয়ন হওয়াই আমাদের লক্ষ্য।’’ ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ অবশ্য এখনও চূড়ান্ত হয়নি। কেনিয়া বনাম নিউজিল্যান্ডের ম্যাচের ফলের উপরেই তা নির্ভর করছে।
তবে হেরে যাওয়ার পরেও এ দিন যে ভাবে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছেন দর্শকেরা, রবিবারও যে স্টেডিয়াম উপচে পড়বে তা নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy