Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
কোচ-ক্যাপ্টেন-নায়কের আড্ডার রায়

বাগানে ৪৪ এলেই বসন্ত

দীর্ঘ তেরো বছর পর আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দিকে বড় পা ফেলেছে মোহনবাগান। নববর্ষের বিকেলে শুরু হচ্ছে সনি-বোয়াদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ল্যাপ। টানা পাঁচটা অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে ভারত সফরে বেরোনোর আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে সোমবার সবুজ-মেরুনের চূড়ান্ত লক্ষ্য নিয়ে আড্ডায় বসলেন কোচ সঞ্জয় সেন, অধিনায়ক শিল্টন পাল এবং টিমের এক নম্বর তারকা সনি নর্ডি। যেখানে হাজির আনন্দবাজার। দীর্ঘ তেরো বছর পর আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দিকে বড় পা ফেলেছে মোহনবাগান। নববর্ষের বিকেলে শুরু হচ্ছে সনি-বোয়াদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ল্যাপ। টানা পাঁচটা অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে ভারত সফরে বেরোনোর আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে সোমবার সবুজ-মেরুনের চূড়ান্ত লক্ষ্য নিয়ে আড্ডায় বসলেন কোচ সঞ্জয় সেন, অধিনায়ক শিল্টন পাল এবং টিমের এক নম্বর তারকা সনি নর্ডি। যেখানে হাজির আনন্দবাজার।

চায়ের টেবিেলও ফুটবল মাঠ! ক্লাব তাঁবুতে সনি নর্ডি ও শিল্টন পালকে নিয়ে ফুরফুরে মেজাজে কোচ সঞ্জয় সেন। ছবি: উৎপল সরকার।

চায়ের টেবিেলও ফুটবল মাঠ! ক্লাব তাঁবুতে সনি নর্ডি ও শিল্টন পালকে নিয়ে ফুরফুরে মেজাজে কোচ সঞ্জয় সেন। ছবি: উৎপল সরকার।

রতন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪৬
Share: Save:

দীর্ঘ তেরো বছর পর আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দিকে বড় পা ফেলেছে মোহনবাগান। নববর্ষের বিকেলে শুরু হচ্ছে সনি-বোয়াদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ল্যাপ। টানা পাঁচটা অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে ভারত সফরে বেরোনোর আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে সোমবার সবুজ-মেরুনের চূড়ান্ত লক্ষ্য নিয়ে আড্ডায় বসলেন কোচ সঞ্জয় সেন, অধিনায়ক শিল্টন পাল এবং টিমের এক নম্বর তারকা সনি নর্ডি। যেখানে হাজির আনন্দবাজার।

সঞ্জয়: সবাই ধরে নিচ্ছে আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েই গিয়েছি। কেউ বুঝছে না বাকি আটটা ম্যাচের পাঁচটায় এখনও আমাদের জিততেই হবে। না হলে সব শেষ। যদিও কাজটা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। তবে এই মুহূর্তে আমি মনে করি আমাদের আই লিগ জেতার সম্ভাবনা এখনও জিরো পার্সেন্ট।

শিল্টন: ২০০৮-০৯ মরসুমে করিমস্যরের সময় খুব কাছে পৌঁছেও আই লিগ পাইনি। এ বার তাই চ্যাম্পিয়ন শব্দটাই মাথায় রাখছি না। ম্যাচ বাই ম্যাচ ভেবে এগোচ্ছি।

সনি: আমার কিন্তু মনে হচ্ছে ট্রফির দিকে আমরা সত্তর ভাগ এগিয়ে গিয়েছি। পরের পাঁচটা অ্যাওয়ে ম্যাচ জিতলেই ট্রফি। সহজ রাস্তা।

আনন্দবাজার: করিম বেঞ্চারিফার সময় চার্চিল ব্রাদার্স ঘাড়ের উপর ছিল সব সময়। এ বারের মতো এত সুবিধেজনক অবস্থায় ছিল না মোহনবাগান। বহু দিন টানা লিগ শীর্ষে রয়েছে টিম। তাও আবার দু’টো ম্যাচ কম খেলে লিগের দু’নম্বরের তুলনায় পাঁচ পয়েন্টে এগিয়ে। তবুও এত টেনশনে কোচ, ক্যাপ্টেন?

সঞ্জয়: আই লিগে দু’বার ইস্টবেঙ্গল আর এক বার মোহনবাগানের শেষ ল্যাপে মুখ থুবড়ে পড়া দেখেছি। সেটা আমাকে আরও সতর্ক করছে। সে জন্যই চ্যাম্পিয়ন কথাটা এখনও মাথায় আনা উচিত হবে না। চেষ্টা করতে হবে যত তাড়াতাড়ি যত বেশি পয়েন্ট তোলা যায়।

সনি: বোয়া, কাতসুমি, ডেনসন, আমি সবাই গোল পাচ্ছি। কারও একার উপর নির্ভর করে টিম জিতছে না। এটাই আমাদের শক্তি। আমাদের টিমে কোনও মেসি বা রোনাল্ডো নেই। আমরা একটা টিম। বিশ্বের কোনও টিম সব ম্যাচে জেতে না। তবু আমার কিন্তু মনে হচ্ছে বাকি সব বাইরের ম্যাচই জিতব।

শিল্টন: আমি চোটের জন্য খেলছি না। তাতে কী? দেবজিৎ ভাল কিপ করছে। সনি ঠিকই বলেছে। কে খেলল, কে খেলল না সেটা বড় কথা নয়। লিগ জিততে হবে এটাই আসল কথা। নয় বছর খেলছি এখানে। সব ট্রফি জিতেছি। আই লিগটাই শুধু পাইনি।

আনন্দবাজার: কত পয়েন্টে পৌঁছলে চ্যাম্পিয়ন হওয়া সম্ভব? কোনও টার্গেট রয়েছে ড্রেসিংরুমের?

সঞ্জয়: কোনও টার্গেট রাখিনি। তবে লিগ জেতার অঙ্কটা আমরা কষে রেখেছি। এখন আমাদের ২৮ পয়েন্ট। ৪৪-এ পৌঁছতে পারলেই কেউ আমাদের আর ধরতে পারবে না। বেঙ্গালুরু, ওয়াহিংডো, ইস্টবেঙ্গল ওদের বাকি সব ম্যাচ জিতলেও তখন আমাদের ধরতে পারবে না।

শিল্টন: টার্গেট রাখলে চাপ বাড়ে। মরসুমের শুরু থেকেই আমরা ঠিক করেছিলাম এক-একটা করে ম্যাচ জিততে হবে। এখনও সেটাই ভাবতে হবে।

সনি: ভারতে আসার পর ট্রফির স্বাদ পাইনি। ফেড কাপে ভাল খেলেও ছিটকে গিয়েছি। নিজে গোল পাইনি। আই লিগে আমরা যা খেলছি তাতে দু’ম্যাচ আগেই চ্যাম্পিয়ন হতে পারি (হাসি)।

আনন্দবাজার: বাকি আট ম্যাচের ছ’টা বাইরে। সবার ধারণা অ্যাওয়ে ম্যাচ জেতা কঠিন!

সঞ্জয়: আমাদের কাছে হোম-অ্যাওয়ে সব ম্যাচই সমান। কখনও এ নিয়ে মাথা ঘামাইনি।

সনি: স্ত্রীকে নিয়ে মলে গিয়েছিলাম। যে দেখছে, বলছে বাইরের ম্যাচ জিততে হবে। ট্রফি চাই। সবাই কেন বাইরের ম্যাচ কঠিন বলছে বুঝছি না। আমরা কি বাইরের ম্যাচ জিতিনি?

শিল্টন: আমার অভিজ্ঞতা বলছে, যে টিম চ্যাম্পিয়ন হতে চাইবে তাকে হোম-অ্যাওয়ে ভেবে খেললে চলবে না। সব ম্যাচই জেতার চেষ্টা করতে হবে।

সঞ্জয়: লাজং ম্যাচে পয়েন্ট নষ্টের পর আমাদের কী সমালোচনাই না হল! ভারত এফ সি ম্যাচ জেতা সত্ত্বেও বলা হচ্ছে টিম খারাপ খেলেছে। আরে বাবা, আসল কথা তো তিন পয়েন্ট। ভাল না খেলে যদি তিন পয়েন্ট পাই তাতেও আমি খুশি। ইপিএলে চেলসির সাত ম্যাচ বাকি। শেষ ম্যাচে তো কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্সের সঙ্গে ওরা জঘন্য খেলল। ওদের কোচ মোরিনহোকে কেউ কিছু বলছে?

সনি: কোচ একেবারে ঠিক বলেছেন। আসল হল তিন পয়েন্ট। কোনও টিম সব দিন ভাল খেলে না। তার উপর যা রেফারিং হচ্ছে? বেশ ভয় পাচ্ছি। গোয়ার ম্যাচটা তো জিততেই দিল না। তবে রেফারিও মানুষ। ভুল হতেই পারে।

শিল্টন: সালগাওকর ম্যাচের কথা বলছে সনি। সে দিন বলবন্তের গোলটা বাতিল হয় কী করে? বারাসতেও তো সালগাওকর ম্যাচে পেনাল্টিটা দিল না রেফারি। ভাগ্যিস পরে গোল করে জিতেছিলাম আমরা।

সঞ্জয়: সালগাওকর কেন বলছ? লাজং ম্যাচেও তো খারাপ রেফারিংয়ের শিকার আমরা। ম্যাচ কমিশনারকে বলতে গেলাম, এখন শুনছি দশ হাজার টাকা ফাইন করেছে ফেডারেশন।

আনন্দবাজার: তবে লাক ফ্যাক্টর মোহনবাগানের সঙ্গে। আপনারা জিতছেন। চ্যাম্পিয়নশিপ লড়াইয়ে থাকা অন্যরা হয় হারছে বা ড্র করছে।

সঞ্জয়: আরে পরিশ্রম না করলে শুধু লাক ফ্যাক্টর দিয়ে ট্রফি জেতা যায়? আমার মতে জেতার ব্যাপারে লাক কাজ করে এক পার্সেন্ট, পরিশ্রম ৯৯ পার্সেন্ট।

শিল্টন: লাক তখনই ফেভার করে যখন সেই টিমটা লড়াইয়ে থাকে।

সনি: যে কোনও পারফর্মারেরই সাফল্যের জন্য লাক দরকার মানি। তবে তাকে তো পারফর্মও করতে হবে। ভাগ্য সাহসীদেরই সঙ্গে থাকে।

সঞ্জয়: পাঁচ বছর পর মোহনবাগানের সামনে ট্রফি জয়ের সুযোগ। মিথ্যে বলব না, মানতে বাধা একটা চাপ তো আমাদের উপর আছেই। অসংখ্য সমর্থকের প্রত্যাশার চাপ।

শিল্টন: স্যর, আমি তো এত দিন এখানে খেলছি। অনেক সময়ই টিমে একটা গা ছাড়া মনোভাব দেখেছি। এ বার কিন্তু সেটা নেই। সবাই সিরিয়াস।

সঞ্জয়: আমি কিন্তু কাউকে তারকা হিসেবে আলাদা খাতির করি না। সবার দিকেই সমান নজর দিই। আমার কাছে বোয়া যা, বিক্রমজিৎও তাই। দেখবেন, সনি লাল কার্ড দেখে ম্যাচের বাইরে থাকলেও জেতার পর দৌড়ে এসে টিমমেটদের শুভেচ্ছা জানায়। দেবজিৎ ভাল খেললে শিল্টন হাততালি দেয়। কাউকে কোনও পজিশন আমি চাপিয়ে দিই না। কি সনি, কখনও করেছি?

সনি: না, না। স্ট্র্যাটেজি পাল্টাতে হলে স্যর আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেন সব সময়।

আনন্দবাজার: সামনের প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়াহিংডো, স্পোর্টিং ক্লুব, পুণে, ভারত এফসি, বেঙ্গালুরুর মধ্যে কঠিন কাকে কাকে মনে করছেন?

সঞ্জয়: ওয়াহিংডো, স্পোর্টিং। ওদের সঙ্গে এখনও খেলিনি। দু’টো করে ম্যাচই বাকি। বেঙ্গালুরু তো শেষ ম্যাচ। পুণে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে।

সনি: আমি সবার খেলা দেখিনি। তবে আমার মতে সব টিমকেই হারানো সম্ভব।

শিল্টন: ওয়াহিংডো চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে আছে। সবার শেষে থাকা স্পোর্টিংয়ের হারানোর কিছু নেই। ওই দুটো ম্যাচ কিন্তু ভাইটাল।

আনন্দবাজার: ম্যারাথন আই লিগের শেষের দিকে এসে কোন স্লোগান পছন্দ টিমের জন্য।

সঞ্জয়: লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলো।

শিল্টন: শেষ পর্যন্ত ফোকাস ঠিক রাখো।

সনি: উইন, উইন অ্যান্ড উইন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE