Advertisement
E-Paper

অভিজিৎ গোল করুক, চান মা

দুপুর বারোটা নাগাদ বাড়ি ফিরেই বসে পড়তে হয় জামাকাপড় সেলাই করতে। তিনি— হরেন সরকার। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের স্ট্রাইকার অভিজিৎ সরকারের বাবা। শৈশবেই যাঁর ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছিল দারিদ্রের কারণে। কিন্তু ছেলেকে ফুটবলার করতে মরিয়া ছিলেন তিনি।

শুভজিৎ মজুমদার

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৩৯
স্বপ্ন: অভিজিতের বাড়িতে তার মা ও বাবা। প্রার্থনা চলছে। —নিজস্ব চিত্র ।

স্বপ্ন: অভিজিতের বাড়িতে তার মা ও বাবা। প্রার্থনা চলছে। —নিজস্ব চিত্র ।

রাত তিনটে বাজলেই সাইকেল ভ্যান নিয়ে বেরিয়ে পড়তে হয় তাঁকে।

চুঁচুড়ার চকবাজারে মাছের আড়ত থেকে মাছ নিয়ে ভ্যানে করে পৌঁছে দেন বিভিন্ন বাজারে।

দুপুর বারোটা নাগাদ বাড়ি ফিরেই বসে পড়তে হয় জামাকাপড় সেলাই করতে। তিনি— হরেন সরকার। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের স্ট্রাইকার অভিজিৎ সরকারের বাবা। শৈশবেই যাঁর ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছিল দারিদ্রের কারণে। কিন্তু ছেলেকে ফুটবলার করতে মরিয়া ছিলেন তিনি।

ফুটবলের প্রথম পাঠ অভিজিৎ নিয়েছিল বাবার কাছেই। কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরেই প্লাস্টিকের বল নিয়ে ছেলের সঙ্গে খেলতে নেমে পড়তেন তিনি। অভিজিতের বয়স তখন মাত্র চার। বছরখানেক পরে ছেলেকে তিনি ভর্তি করে দেন কাছেই লেনিন পল্লীর বাণীচক্র ক্লাবে অশোক মণ্ডলের কোচিংয়ে। বছর দু’য়েক আগে কল্যাণীতে ভারতীয় দলের ট্রায়ালে ছেলে কেমন খেলছে তা দেখতে বারো কিলোমিটার সাইকেল চালিয়েই চলে গিয়েছিলেন!

ভারতীয় দলের স্ট্রাইকারের প্রথম কোচেরও ফুটবলার হওয়ার পূরণ হয়নি সংসারের আর্থিক সংকটের কারণে। ফুটবল কোচিংয়ের ফাঁকেই টোটো চালান!

হুগলির ব্যান্ডেলে হেমন্ত বসু কলোনি। শেরশাহের তৈরি ঐতিহাসিক গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড থেকে অভিজিতের বাড়ির দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। পুরো রাস্তাটাই সাজানো জাতীয় পতাকা ও ভারতীয় স্ট্রাইকারের ছবিতে। পাড়ার মাঠে আজ, শুক্রবার সকালে টাঙানো হবে জায়ান্ট স্ক্রিন। স্ত্রী অলকা-কে নিয়ে সেখানেই অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ভারতের ম্যাচ দেখবেন হরেনবাবু। যদিও সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের তরফে তাঁদের নয়াদিল্লি যাওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু স্ত্রী অসুস্থ বলে বাতিল করেন দিল্লিযাত্রা।

বাড়ির সামনেই এ দিন বিকেলে পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে বসেছিলেন হরেনবাবু। বাড়ি বলতে ছোট্ট একটা ঘর। যার এক দিকের দেওয়ালে পর্তগাল জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ক্রিশ্চিয়ানোর বিশাল পোস্টার। তার পাশেই লিওনেল মেসি পোস্টার। তবে আয়তনে অনেকটাই ছোট। ভারতীয় স্ট্রাইকারের বাবা হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘অভিজিতের আদর্শ রোনাল্ডো। পাড়ায় মাঠে ও সাত নম্বর জার্সি পরেই খেলত। তাই রোনাল্ডোর ছবিটা বড়।’’ অন্য দিকের দেওয়ালে জাতীয় দলের সতীর্থদের সঙ্গে অভিজিতের ছবি। এ দিন ছোট্ট ঘরেই লক্ষ্মীপুজোর আয়োজনে ব্যস্ত ছিলেন অলকাদেবী।

বছরখানেক আগে মেরুদণ্ডে অস্ত্রোপচার হয়েছিল তাঁর। এখনও পুরোপুরি সুস্থ নন। অসুস্থ শরীর নিয়েও ছেলের জন্য উপোস করেছেন। বছর দু’য়েক আগে এই অলকাদেবীই ছেলেকে গোয়ায় এআইএফএফ অ্যাকাডেমিতে যেতে দিতে চাননি। কিন্তু স্ত্রীকে বোঝান হরেনবাবু। তিনি বললেন, ‘‘আত্মীয়স্বজনরাও বলেছিলেন, এক মাত্র ছেলেকে বাইরে পাঠানো ঠিক নয়। কিন্তু আমি কারও কথা শুনিনি।’’ আর এখন ম্যাচের আগের দিন অভিজিৎ ফোন করলে অলকাদেবী বলেন, ‘‘গোল কিন্তু করতেই হবে!’’

Football FIFA U-17 World Cup Abhijit Sarkar India Parents Goal অভিজিৎ সরকার
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy