Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

টপ্‌স তালিকায় ঢুকে অচিন্ত্যের চোখ প্যারিসে

বাংলা ও দেশের অন্যতম সেরা সেই ভারোত্তোলক অচিন্ত্য শিউলির সংগ্রামের জীবনে হঠাৎই আলো এসে পড়ল।

পরীক্ষা: দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে অলিম্পিক্সের স্বপ্ন অচিন্ত্যের।

পরীক্ষা: দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে অলিম্পিক্সের স্বপ্ন অচিন্ত্যের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৬:৪৬
Share: Save:

হাওড়ার দেউলপুরে তাদের মাটির দেওয়ালের বাড়িতে টিনের ছাদ।

মা জরির কাজ করে সংসার চালান কোনওক্রমে। সাপ্তাহিক রোজগার পাঁচশো টাকা। তা-ও নিয়মিত নয় সেই কাজ। দাদা দমকল দফতরের অস্থায়ী কর্মী।

কমনওয়েলথ গেমসের দু’টি বিভাগে জোড়া সোনা, যুব এশিয়ান চ্যাম্পিনশিপে রুপো, বাংলার হয়ে জেতা তিনটি-সোনা সহ আটটি পদক ঝুলছে ঘরের কোণের পেরেকে। আলমারি নেই পদক সাজিয়ে রাখার।

বাংলা ও দেশের অন্যতম সেরা সেই ভারোত্তোলক অচিন্ত্য শিউলির সংগ্রামের জীবনে হঠাৎই আলো এসে পড়ল। ২০২৪-এর প্যারিস অলিম্পিক্সের সম্ভাব্য পদকজয়ী হিসেবে টার্গেট অলিম্পিক্স পোডিয়ামে (টপ্‌স) তালিকায় নাম উঠে গেল তাঁর। সাই থেকে আসা সেই ই-মেল দেখে আপ্লুত আঠারো বছরের অচিন্ত্য বলে দিলেন, ‘‘এ বার আমার আর কোনও সমস্যা হবে না। টাকা পাব। পুষ্টিকর খাবার কিনে খেতে পারব। তা ছাড়া সার্ভিসেসের চাকরিটাও পাচ্ছি। এ বারের অলিম্পিক্সে তো হল না। তাই আমার লক্ষ্য ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিক্স পদক।’’

মঙ্গলবার ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে পুরুষদের ৭৩ কেজি বিভাগে অল্পের জন্য সোনা হাতছাড়া হয়েছিল অচিন্ত্যের। রাজ্য সরকার, সর্বভারতীয় ও রাজ্য সংস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘‘বাংলার জন্য এতগুলো পদক এনেও কোনও সাহায্য পাইনি কারও কাছ থেকে। তা হলে বাংলার হয়ে নেমে কী লাভ।’’ সেই ক্ষোভের কথা প্রকাশ্যে আশার পরেই নানা মহল থেকে তাঁকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এ দিন জাতীয় কোচ বিজয় শর্মার পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘বাংলায় আমার জন্ম, বাংলা থেকে যদি সাহায্য পাই তা হলে নিজের রাজ্যের হয়েই নামব।’’

টপ্‌স তালিকায় ঢুকে পড়ার সঙ্গে এ দিনই নানা প্রতিশ্রুতি পেয়ে অচিন্ত্যের ক্ষোভ সাময়িক ভাবে কমেছে। তবে আরও একটা বিষয় প্রকাশ্যে এসে পড়েছে, তা হল বঙ্গ খেলাধুলোর মানচিত্রে প্রকৃত সফল মুখেরা অনেক ক্ষেত্রেই সাহায্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রতিশ্রতিমান খেলোয়াড়দের তুলে আনার কোনও চেষ্টাই করেন না বেশিরভাগ সংস্থার কর্তারা। রাজ্য সংস্থার কর্তারা গোষ্ঠী কোন্দল, বছরের পর বছর কোনও কাজ না করে ক্ষমতা ধরে রাখাতেই যেন বেশি আগ্রহী। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়েও অনেক প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও তা কাজে লাগানো হয় না। দু’-তিনটে খেলায় কয়েকজন তারকা মাঝেমধ্যে উঠে এলেও অচিন্ত্যদের মতো প্রতিশ্রতিমান সফল ক্রীড়াবিদদের তুলে আনা এবং সাহায্য করার কেউ নেই। অচিন্ত্য টপ্‌স তালিকায় ঢুকে পড়ায় কাজ়াখস্তানের দলে ঢোকার সম্ভবনা রয়েছে। তিনি বলছিলেন, ‘‘ওখানে সুযোগ পেলে তামিলনাড়ুর যে ছেলেটা আমাকে হারাল, তার চেয়ে বেশি ওজন তুলে প্রমাণ করে দেব, আমি কে!’’

খেলা নিয়ে উদাসীন রাজ্যে জেদই যে সম্বল অচিন্ত্যদের!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE