ছবি: রিকি রেন্থলেই।
শুধু মাঠে নয়, মাঠের বাইরেও অন্য এক ট্রফি জিতে নিল আইজল। উত্তর-পূর্বের প্রথম দল হিসেবে গত কাল আই লিগ জিতেছে মিজোরামের আইজল এফসি। আর আইজলের সমর্থকেরা খেলা শেষের পরেও স্টেডিয়াম ছেড়ে না বেরিয়ে গ্যালারি সাফ করার যে বিরল নজির রাখলেন- তা দেখে কুর্নিশ জানান মেঘালয়বাসী।
কলকাতা ময়দানে বছরের পর বছর তুখোড় ফুটবলার সরবরাহ করা পাহাড়ি রাজ্যে পাঁচ বছর আগে পর্যন্ত বলার মতো ভাল ফুটবল মাঠ ছিল না। মুয়ালপুইতে রাজীব গাঁধী স্টেডিয়াম ২০১২ সালে তৈরি হলেও তার একটি দিকে মাত্র গ্যালারি হয়েছে। নেই আলোর ব্যবস্থা। অথচ নেই রাজ্যের সেই ফুটবলাররাই বল পায়ে ফুট ফোটান, আগুন ঝরার দেশের অন্য সব মাঠে। গত বছর অবনমনে চলে যাওয়া দলটা কোনওমতে এ বারের আইলিগে জায়গা পেয়েই যে চ্যাম্পিয়ান হয়ে যাবে- তা কেউ ভাবতেই পারেননি। কিন্তু তা বলে সমর্থকের ঢেউ কমেনি শিলংয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে। বাস ভরে মিজোরাম থেকে লাল জার্সি পরা এএফসি সমর্থকেরা এসে ছেয়ে ফেলেছিলেন শিলংয়ের পথঘাট। তাঁদের উদ্দীপনা ছিল ২০০ শতাংশ কিন্তু বিশৃঙ্খলা ছিল না। ঠিক যেমনটা আইজল শহরে দেখা যায়। যে খানে ‘নো-হর্ন’ মানে সত্যিই কেউ হর্ন বাজান না। এমন কী যানজটে দাঁড়িয়ে থাকলও নষ্ট হয় না শৃঙ্খলা। মানুষ রেশন কার্ডে মদ কেনেন। দোকানদার দোকান ফেলে অন্যত্র চলে গেলেও অন্য কেউ সেখান থেকে কোনও জিনিস তুলে নেওয়ার কথা ভাবেন না। সরু গলি ভরা শহরটায় পরিচ্ছনতা চোখে পড়ার মতো। যেখানে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে শিলং।
আরও পড়ুন: ওয়ান ডে র্যাঙ্কিংয়ে এক ধাপ উঠল ভারত
গত কাল স্বপ্নের ফাইনালের পরে ঘরের খেলোয়াড়রা যখন ট্রফি নিয়ে বাঁধনহারা হয়ে মাঠ ছাড়েন, তখনও কিন্তু মাঠে থেকে গিয়েছিলেন আইজল এফ সির সমর্থকরা। মোচ্ছব করা বা কাগজ পুড়িয়ে ছাই ছড়াতে নয়। তাঁরা থেকে যান গ্যালারির আবর্জনা পরিষ্কার করার জন্য। জমে থাকা সব কাগজ, কাপ, প্লাস্টিকের প্যাকেট, বোতল একত্র করে ফেলে দিয়ে তবে স্টেডিয়াম ছাড়েন তাঁরা। জানান, অন্যের রাজ্যে এসে মাঠ নোংরা করে যাওয়াটা মোটেই ভাল কথা নয়।
আইজল সমর্থকদের এই কাণ্ড দেখে অবাক শিলংবাসী। প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী আর জে লিংডো বলেন, “আইজল সমর্থকদের ধন্যবাদ। শুধু গ্যালারি পরিষ্কার করার জন্য নয়। আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর জন্য। আমাদের এ থেকে শেখা উচিত।” প্রাক্তন আমলা, সমাজকর্মী টোকি ব্লা বলেন, “স্পোর্টসম্যানশিপের পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতাতেও ওঁরা উদাহরণস্বরূপ। এ দেখে আস্বস্ত হওয়া যায় যে মিজোরামের ভবিষ্যত নিরাপদ হাতে রয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy