Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

হাফডজন গোল খেয়ে বাগান কোচ বললেন, অলীক স্বপ্ন দেখেছিলাম

বিদেশের মাঠে এ রকম অবস্থায় মাত্র এক দিনের অনুশীলনে কিছুই করা সম্ভব নয়। ওই ঠান্ডায় আউটডোরে প্লেয়ারদের মানিয়ে নেওয়া শুধু কঠিন নয়, প্রায় অসম্ভব। ভারতে ওরা এসে এই ম্যাচটা খেললে আমরা হয়তো দু’গোলে হারতাম।চিনের মাঠে গিয়ে কলকাতার ক্লাবের বিশ্রী হারের পরম্পরা থেকে গেল। কোনও রকম প্রতিরোধ গড়া দূরে থাক, উল্টে হাফডজন গোল খেয়ে এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দৌড় শেষ করে ফিরছে মোহনবাগান।

মলা-ঝড়ে বিপর্যয়। তারদেলির আরও একটা চেষ্টা আটকে গেল পোস্টে।–টুইটার

মলা-ঝড়ে বিপর্যয়। তারদেলির আরও একটা চেষ্টা আটকে গেল পোস্টে।–টুইটার

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:১৯
Share: Save:

শেনডং এফসি- : মোহনবাগান-

(ইয়াংজু-২, ওয়াং, জেং, তারদেলি, মন্টিলো)

চিনের মাঠে গিয়ে কলকাতার ক্লাবের বিশ্রী হারের পরম্পরা থেকে গেল। কোনও রকম প্রতিরোধ গড়া দূরে থাক, উল্টে হাফডজন গোল খেয়ে এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দৌড় শেষ করে ফিরছে মোহনবাগান।

ভারতীয় টাকার হিসেবে আড়াইশো কোটির দল শেনডংয়ের ধাক্কায় সবুজ-মেরুন কোচ এতটাই হতচকিত যে ম্যাচের তিন ঘণ্টা পরেও জিনানের টিম হোটেলে ফোনে ধরালে সঞ্জয় সেনের গলা থেকে বেরিয়ে এল, ‘‘বলতে পারেন, আমি অলীক স্বপ্ন দেখেছিলাম। এই টিমকে হারানো অসম্ভব ব্যাপার আমাদের কাছে। ছয় গোল খাওয়াকেও আমি লজ্জা হিসেবে দেখছি না। সে তো বিশ্বকাপে ব্রাজিলও সাত গোল খেয়েছে। আমি আসলে বলছি, চিনের ফুটবলের সঙ্গে ভারতের ফুটবলের পার্থক্য কতটা সেটা বুঝতে পারলাম।’’

বিরতির আগেই ০-৩। পরের অর্ধে সেটা বেড়ে দ্বিগুণ। ৬-০। সনি-শৌভিক-কাতসুমিদের পকেটে পুরে নিয়ে চিনা ক্লাবের গোলের পর গোল। কমলা ঝড়ের শুরুটাই যা একটু দেরিতে। ম্যাচের চব্বিশ মিনিটে প্রথম গোল। যা শেষ হল, ম্যাচ শেষ হওয়ার এক মিনিট আগে। সঞ্জয়ের গলায় হতাশা যেন উপচে পড়ছিল। ‘‘শুরুর পনেরো মিনিট ছাড়া আমরা খেলতেই পারিনি। আমি কখনও অজুহাত দিই না। তবে আমার ছেলেরা হোটেলে ফিরে বলল, ঠান্ডায় হাফটাইমের পর ওদের পা ভারি হয়ে গিয়েছিল। বল চলে যাচ্ছিল সামনে দিয়ে। অথচ পা বাড়ানোর শক্তি পায়নি সেটা ধরার জন্য।’’

লুনেন স্টেডিয়ামে দর্শক ধরে ষাট হাজারের মতো। সেটাও ভর্তি হয়ে গিয়েছিল। গ্যালারি জুড়ে কাতারে কাতারে শেনডং ক্লাবের পতাকা। হোম ম্যাচে সেটাই স্বাভাবিক। তবে এক চিনা দম্পতি একটা সবুজ-মেরুন পতাকা আর পুস্পস্তবক নিয়ে এসে ম্যাচের আগে শুভেচ্ছা জানিয়ে গিয়েছিলেন লুসিয়ানো-দেবজিৎদের। মোহনবাগানের সেই পতাকাটাই শুধু উড়ছিল খেলার সময়। তবুও তো কলকাতার ক্লাবের একটা পতাকা দেখতে পাওয়া গেছে। কিন্তু ব্রাজিলের প্রাক্তন জাতীয় কোচ মানো মেনেজেসের স্ট্র্যাটেজির সামনে পড়ে বাগানের হাল এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, সঞ্জয় অনেক ভেবেও নিজের টিমের এ দিন ভাল খেলা একজন ফুটবলারের নামও বলতে পারেননি। ‘‘আমাদের টিমের কেউ খেলতে পারেনি। ওদের গতি, পাওয়ার, ফিটনেস, পাসিং এতটাই ভাল যে তার সামনে আমাদের কেউ কিছুই করতে পারেনি। গোলকিপার দেবজিতকে একটাও কঠিন সেভ করতে হয়নি। সব গোল হয়ে গিয়েছে। ভীষণ কড়া টিম। কী আর বলব,’’ ফোনে বিষণ্ণ গলা তেরো বছর পর মোহনবাগানকে দেশের সেরা ক্লাবের সম্মান এনে দেওয়া বঙ্গসন্তান কোচ।

শেনডং সম্পর্কে কোনও ধারণা ছিল না বাগানের। ফলে বিপক্ষের দুই ফরোয়ার্ড, সাড়ে ছয় ফুটের ইয়াংজু আর প্রাক্তন ব্রাজিল দলের তারকা দিয়েগো তারদেলিকে চূড়ান্ত রক্ষণাত্মক স্ট্র্যাটেজি প্রয়োগ করেও থামাতে পারেননি কিংশুক-ধনচন্দ্রদের কোচ। ৪-৫-১ অর্থাৎ নয় জনের জমাট রক্ষণের কৌশলও উড়ে গিয়েছে খড়কুটোর মতো। বাগানের পক্ষে বলার মতো দু’টো মাত্র ঘটনা। এক) প্রথমার্ধে সনির একটা শট শেনডং পোস্ট ছুঁয়ে গিয়েছে। দুই) কেন লুইসের একটা শট অবিশ্বাস্য দক্ষতায় বাঁচিয়েছেন চিনা দলের কিপার।

মঙ্গলবার দুপুরেও জিনানের তাপমাত্রা ছিল চার-পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মেঘলা। ফলে আরও বেশি হাড়কাঁপানো পরিস্থিতির সামনে পড়েছিলেন প্রণয়, জেজেরা। সঞ্জয় বলছিলেন, ‘‘বিদেশের মাঠে এ রকম অবস্থায় মাত্র এক দিনের অনুশীলনে কিছুই করা সম্ভব নয়। ওই ঠান্ডায় আউটডোরে প্লেয়ারদের মানিয়ে নেওয়া শুধু কঠিন নয়, প্রায় অসম্ভব। ভারতে ওরা এসে এই ম্যাচটা খেললে আমরা হয়তো দু’গোলে হারতাম।’’

ছয় গোলে হেরে বুধবার ভোরেই কলকাতায় ফেরার জন্য জিনান থেকে এয়ারপোর্টের দিকে বাসে রওনা হবেন সনিরা। আবার সেই লম্বা বিমান যাত্রা। তবে সঞ্জয়ের টিমের জন্য ভাল খবর, বৃহস্পতিবার কলকাতায় ফিরেই শনিবার আই লিগের ম্যাচ খেলতে হবে না তাদের। ৬ ফেব্রুয়ারি বাগানের ম্যাচ স্থগিত করে দিল ফে়ডারেশন। ম্যাচটা হবে ১৭ ফেব্রুয়ারি। এরই মধ্যে আবার এএফসি কাপে খেলতে হবে বাগানকে। এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে হেরে গেলে এশিয়ার দ্বিতীয় পর্যায়ের টুনার্মেন্ট এটা। সেখানে সনি-লুসিয়ানোদের প্রথম ম্যাচ ২৪ ফেব্রুয়ারি মায়নমারের ক্লাবের বিরুদ্ধে। লুসিয়ানোর অবশ্য এ দিন ঘাড়ে চোট লেগেছে। তবে সেটা গুরুতর নয় বলে জানা যাচ্ছে।

যদিও সঞ্জয় এখন ঠিক করেছেন, আই লিগ খেতাব অটুট রাখাকেই পাখির চোখ করবেন। বাগান কোচ চিনে গিয়ে যেন বুঝে গিয়েছেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাফল্য পাওয়ার অলীক স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দেশের দিকে নজর দেওয়াই ভাল।

মোহনবাগান: দেবজিৎ, রাজু, কিংশুক, লুসিয়ানো, ধনচন্দ্র (শৌভিক ঘোষ), লুসিয়ানো, প্রবীর (কেন), কাতসুমি, শৌভিক চক্রবর্তী (সঞ্জয়), প্রণয়, জেজে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mohanbagan shendong fc MostReadStories
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE