Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
পাহাড়েই ধাক্কা খেল কাতসুমিদের আই লিগ জয়ের আশা
Sony Norde

আতঙ্কের আইজলে খেতাবের স্বপ্ন শেষ

শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে দু’হাতে মুখ ঢেকে মাটিতে শুয়ে পড়লেন সনি নর্দে, কাতসুমি ইউসা-রা। রাজীব গাঁধী স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে তখন বাঁধনহারা উচ্ছ্বাস। প্রবল বৃষ্টি। ঠান্ডা হাওয়া উপেক্ষা করেই আইজল এফসি-র পতাকা ও স্কার্ফ বুকে জড়িয়ে কেউ শিশুর মতো কাঁদছেন।

শুভজিৎ মজুমদার
আইজল শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:৩৮
Share: Save:

আই লিগ// আইজল এফসি ১ : মোহনবাগান ০

শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে দু’হাতে মুখ ঢেকে মাটিতে শুয়ে পড়লেন সনি নর্দে, কাতসুমি ইউসা-রা। রাজীব গাঁধী স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে তখন বাঁধনহারা উচ্ছ্বাস। প্রবল বৃষ্টি। ঠান্ডা হাওয়া উপেক্ষা করেই আইজল এফসি-র পতাকা ও স্কার্ফ বুকে জড়িয়ে কেউ শিশুর মতো কাঁদছেন। কেউ কেউ আবার ক্লাবের থিম সংগ ‘ট্রালালালা...আইজল এফসি’ গাইতে গাইতে নাচছেন। আইজলে মেঘের মধ্যেও আলো। বাগানে তখন ঘন অন্ধকার।

শনিবার সকাল থেকেই আইজল ভিজছে। খেলা শুরু হওয়ার পরে মাঝেমধ্যেই মেঘের আড়ালে চলে যাচ্ছে মাঠ। ম্যাচ শেষ হবে কি না তা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছিল। বার দু’য়েক তো কয়েক মিনিটের জন্য ম্যাচ বন্ধও রেখেছিলেন রেফারি।

ম্যাচ শুরু হওয়ার কথা দুপুর দু’টোয়। তার ঘণ্টা তিনেক আগে থেকেই ভর্তি হয়ে গিয়েছিল স্টেডিয়াম। আইজলবাসী না হয় এই আবহাওয়ার অভ্যস্থ। কিন্তু কলকাতা থেকে আসা মোহনবাগান সমর্থকদের উৎসাহ কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ার কারণ কী? সনি-ভক্তরা বলছিলেন, ‘‘দু’বছর আগে এরকমই আবহাওয়া ছিল বেঙ্গালুরুতে। শেষ পর্যন্ত আমরাই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। এ বারও যখন প্রকৃতি আমাদের সঙ্গে আছে কেউ আটকাতে পারবে না।’’

বেঙ্গালুরুর সঙ্গে শনিবারের আইজলের আবহাওয়ায় মিল থাকলেও যেটা ছিল না, সেটা হচ্ছে মোহনবাগান মাঝমাঠে পিয়ের বোয়া-র মতো কেউ এ দিন ছিলেন না। দু’বছর আগে যিনি কার্যত একাই সুনীল ছেত্রীদের কাছ থেকে আই লিগ ছিনিয়ে এনেছিলেন।

এ দিন বারবার মেঘের দাপটে মাঠ হারিয়ে যাওয়ার মতোই সবুজ-মেরুন মাঝমাঠে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কেউ। অথচ অঙ্কের বিচারে মোহনবাগানই ছিল সুবিধেজনক অবস্থায়। জিতলেই চ্যাম্পিয়ন। আর ড্র করলে অপেক্ষা করতে হতো ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। কোচ সঞ্জয় সেন জানিয়েছিলেন, শেষ ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান না। আইজলেই খেতাব নিশ্চিত করা তাঁর প্রধান লক্ষ্য। তার প্রতিফলন যদিও ম্যাচে দেখা যায়নি। উল্টে কোচের স্ট্র্যাটেজি নিয়েই প্রশ্ন উঠছে সবুজ-মেরুন অন্দরমহলে।

শুক্রবার অনুশীলনে কুঁচকিতে চোট পেয়েছিলেন ড্যারেল ডাফি। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সুস্থ করে মাঠে নামানো হয় তাঁকে। গোলের সহজতম সুযোগ ডাফি-ই নষ্ট করেন। ম্যাচের বয়স তখন সবে মাত্র তিন মিনিট। ফাঁকা গোল পেয়েও আইজল গোলরক্ষক অ্যালবিনো গোমেজের গায়ে মারেন তিনি। চোটের জন্য দৌড়তে সমস্যা হচ্ছিল বলে প্রথমার্ধের মিনিট পনেরোর মধ্যেই খোঁড়াতে খোঁড়াতে ডাফি নেমে এসেছিলেন মাঝমাঠে। তা সত্ত্বেও পুরো নব্বই মিনিট মাঠে থাকলেন তিনি। কেন? ম্যাচের পর মোহনবাগান কোচ বললেন, ‘‘ছোট-খাটো চোট সকলেরই থাকে। সেটা নিয়েই খেলতে হয়। তা ছাড়া বিরতির সময় ডাফির কাছে জানতে চেয়েছিলাম, খেলতে পারবে কি না। ও নিজেই তো খেলতে চেয়েছিল।’’ বেশি রাতে ক্ষুব্ধ ডাফির টুইট ভেসে ওঠে, ‘‘আমার যা মান, তাতে তিন মিনিটে গোলটা করা উচিত ছিল। কিন্তু আরও সাতাশি মিনিট সময় তো ছিল ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য...।’’

ক্ষোভ বাড়ছে আজহারউদ্দিন মল্লিক-কে প্রায় ৬৪ মিনিট পর্যন্ত মাঠে রাখা নিয়েও। ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে বিস্ময় গোলের নায়ককে আইজলের ফুটবলাররা কার্যত বল ধরতেই দেননি। বাধ্য হয়ে কাতসুমি ও সনি নর্দে কোচকে বলেন আজহার-কে তুলে প্রবীর দাসকে নামাতে। সোদপুরের মিডিও নামার পরেই আক্রমণে ঝাঁঝ কিছুটা বাড়ে মোহনবাগানের। কিন্তু আহত ডাফি আর ছন্দে না থাকা জেজে লালপেখলুয়া-র জন্য আইজল ডিফেন্ডারদের কখনওই সমস্যায় পড়তে হয়নি। যদিও মোহনবাগান কোচ তা মানতে নারাজ। সঞ্জয় বললেন, ‘‘ম্যাচে আধিপত্য তো আমাদেরই ছিল।’’ আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ? সঞ্জয় বলছেন, ‘‘মেঘে মাঠ ঢেকে যাওয়ায় সমস্যা দু’দলের ফুটবলারদেরই হয়েছে। ’’ পাশাপাশি রেফারির বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দিলেন দিলেন তিনি। বললেন, ‘‘জেজে-কে পেনাল্টি বক্সের মধ্যে ফাউল করেছিল আইজলের ডিফেন্ডাররা। অথচ রেফারি পেনাল্টি দিলেন না।’’ আর হতাশ সনি বলছিলেন, ‘‘কী আর করা যাবে। আসলে দিনটা আমাদের ছিল না।’’ সঞ্জয়ের পেনাল্টির দাবি নিয়ে আইজল কোচ খালিদ জামিল বললেন, ‘‘রিজার্ভ বেঞ্চে বসে আমি দেখতে পাইনি কী হয়েছে।’’ হারের জন্য মোহনবাগান কোচ ভাগ্যকে দায়ী করলেও মানছেন না জহর দাস।

সবুজ-মেরুনের প্রাক্তন কোচ এই মুহূর্তে আইজল অ্যাকাডেমির দায়িত্বে। ভবিষ্যতের জোমিংলানা রালতে-দের তুলে আনতে ব্যস্ত জহর বললেন, ‘‘মোহনবাগান হেরেছে ফিটনেসের অভাবে। দ্বিতীয়ার্ধে তো ওরা খেলতেই পারেনি।’’আইজল সেই আতঙ্ক হয়েই থেকে গেল মোহনবাগানের কাছে!

মোহনবাগান: দেবজিৎ মজুমদার, প্রীতম কোটাল, আনাস এডাথোডিকা, এদুয়ার্দো পেরেইরা, রাজু গায়কোয়াড়, আজহারউদ্দিন মল্লিক (প্রবীর দাস), কাতসুমি ইউসা, শেহনাজ হোসেন, সনি নর্দে, জেজে লালপেখলুয়া (বলবন্ত সিংহ) ও ড্যারেল ডাফি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Aizawl FC Mohun Bagan I League Football
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE