Advertisement
E-Paper

‘ব্যতিক্রমী ওপেনার প্রেরণা হয়েই থাকবেন’

কুকের শুরু এবং সারার মধ্যে অদ্ভুত একটা মিল পাওয়া যায়। টেস্ট অভিষেক হয়েছিল ভারতের বিরুদ্ধে নাগপুরে, ২০০৬ সালে। সেখানে প্রথম ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি এবং দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছিলেন কুক। জীবনের শেষ টেস্টে এসেও একই ঘটনা ঘটল। প্রথম ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি, দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি! প্রতিপক্ষের নামও একই! 

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:১৭
শেষ টেস্টে তেমনই কোহালির উদ্বেগ হয়ে থাকলেন কুক। ছবি: রয়টার্স।

শেষ টেস্টে তেমনই কোহালির উদ্বেগ হয়ে থাকলেন কুক। ছবি: রয়টার্স।

ডিস্কোথেকের যুগে ধ্রুপদী সঙ্গীত শুনিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন অ্যালেস্টেয়ার কুক। কালজয়ী যে সঙ্গীত শুনে গোটা ওভাল উঠে দাঁড়িয়ে অভিনন্দনে ডুবিয়ে দিল ইংল্যান্ড ওপেনারকে। মঙ্গলবারের পরে যাঁর নামের পাশে প্রাক্তন শব্দটি বসে যাবে।

কুকের শুরু এবং সারার মধ্যে অদ্ভুত একটা মিল পাওয়া যায়। টেস্ট অভিষেক হয়েছিল ভারতের বিরুদ্ধে নাগপুরে, ২০০৬ সালে। সেখানে প্রথম ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি এবং দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছিলেন কুক। জীবনের শেষ টেস্টে এসেও একই ঘটনা ঘটল। প্রথম ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি, দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি! প্রতিপক্ষের নামও একই!

সাড়ে তেত্রিশ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত নিলেন কুক। এই বয়সে সাধারণত অনেকেই এ রকম সিদ্ধান্ত নেন না। বিশেষ করে ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু কুক যে ব্যতিক্রমী। অধুনা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের যুগেও নিজেকে এই খেলাটার সঙ্গে খুব বেশি জড়াননি। যে ক্রিকেটে কভার ড্রাইভ মারতে গিয়ে বল ডিপ ফাইন লেগ বাউন্ডারিতে চলে গেলেও দর্শকেরা হাততালি দেয়, সেই ক্রিকেট থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন। টেস্ট ক্রিকেটকে ভালবেসেছেন এবং টেস্টের অন্যতম সেরা বাঁ-হাতি ওপেনার হিসেবেই অবসর নিলেন।

নিজের শেষ টেস্ট ইনিংসে কুক যে সেঞ্চুরিটা করলেন, তার পরে প্রশ্ন উঠবেই— কুক, কেন খেলা ছাড়ছ? অনেকের ক্ষেত্রে কিন্তু প্রশ্ন ওঠে, এখনও কেন খেলে যাচ্ছ? সেই প্রশ্নটা ওঠার সুযোগ দিলেন না বিশ্বের অন্যতম সুদর্শন এই ক্রিকেটার।

সোমবার ওভালে সেঞ্চুরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখলাম, পুরো মাঠ উঠে দাঁড়িয়ে কুককে অভিনন্দন জানাচ্ছে। সেখানে ব্রিটিশ দর্শকদের পাশে ভারতীয় দর্শকও ছিলেন। কুকের শেষ ইনিংসটাও বুঝিয়ে দিয়ে গেল, কেন ইংল্যান্ড ওপেনারের ব্যাটিংকে ধ্রুপদী অ্যাখ্যা দেওয়া চলে। উইকেটের চারদিকে স্ট্রোক খেলেছেন। স্ট্রেট ড্রাইভ থেকে ফ্লিক— সবই দেখা গিয়েছে তাঁর ব্যাটিংয়ে। আরও একটা জিনিস দেখা গেল। সেটা হল, কিছু করে দেখানোর মানসিকতা। জীবনের শেষ ইনিংস খেলছি, কিছু একটা করে দেখাতেই হবে। এই ছিল কুকের মন্ত্র। কুক যে শুধু ব্যাটিং দিয়েই বাকিদের অনুপ্রাণিত করে এসেছেন, তা কিন্তু নয়। একটা উদাহরণ দিই। বেশির ভাগ দলের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, দলের সব চেয়ে তরুণ ক্রিকেটার বা সদ্য সুযোগ পাওয়া ক্রিকেটারদেরই ক্যাপ্টেন পাঠিয়ে দিচ্ছেন ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে ফিল্ডিং করতে। সিনিয়র ক্রিকেটার, বিশেষ করে তিনি যদি ওপেনার হন, তা হলে তো ওই জায়গা থেকে একশো হাত দূরে থাকবেন। কিন্তু এখানেও কুক ব্যতিক্রম। তিনি ক্রিকেট জীবনের সায়াহ্নে এসেও ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে ফিল্ড করতে দ্বিধা বোধ করেননি। পরে আবার ইনিংস ওপেন করতেও নেমেছেন। দলের সিনিয়র ক্রিকেটার যদি এতটা স্বার্থত্যাগ করতে পারেন, তা হলে জুনিয়ররা তো অনুপ্রাণিত হবেনই।

কাঁটা: জীবনের প্রথম টেস্টে হয়ে উঠেছিলেন রাহুল দ্রাবিড়ের দুশ্চিন্তা। ফাইল চিত্র।

কুকের ১২ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনের সময়কালে অনেক কিংবদন্তি ব্যাটসম্যানই উঠে এসেছেন। যে তালিকায় থাকবেন ম্যাথু হেডেন, রিকি পন্টিং, স্টিভ স্মিথ, জাক কালিস, এ বি ডিভিলিয়ার্স, সচিন তেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড়, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, বিরাট কোহালি, কুমার সঙ্গকারারা। যে তালিকায় কুকের নামটাও অনায়সে রেখে দেওয়া যায়। টেস্টে ১২ হাজার চারশোর ওপর রান। ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ। ৩৩টা সেঞ্চুরি। শুধু পরিসংখ্যানের বিচারেই সেরাদের মধ্যে জায়গা করে নিতে পারবেন কুক।

এই ওভালেই ডন ব্র্যাডম্যানকে আউট করেছিলেন এরিক হলিস। যে কারণে বোলার হিসেবে তাঁর নামটা এখনও উচ্চারিত হয়। হনুমা বিহারীর নামটাও বোধহয় ক্রিকেট ইতিহাসে জড়িয়ে গেল কুককে শেষ ইনিংসে আউট করার জন্য।

লাল বল, সাদা পোশাকের টেস্ট ক্রিকেটের কোনও মৃত্যু নেই। অ্যালেস্টেয়ার কুক নিজের শেষ টেস্টে সেটা আবারও বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন।

Cricket Test India England India vs England Alastair Cook
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy