Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
লড়াই এ বার আদালতে

অনুরাগের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ শ্রীনিবাসনের

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের অভ্যন্তরীণ কোন্দল আরও এক বার প্রকাশ্যে এসে পড়ল। বর্তমান বোর্ড সচিব জালিয়াত, সবার সামনে আঙুল তুলে বলে দিলেন প্রাক্তন বোর্ড প্রেসিডেন্ট। বর্তমান বোর্ড প্রশাসনের তিন জনকে তাঁদেরই সচিবের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিলেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। সচিবের বিরুদ্ধে মামলা করে তাঁর সাত বছরের কারাদণ্ডের ব্যবস্থার হুমকি? সেটাও বাদ গেল না।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৫ ০৪:০৬
Share: Save:

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের অভ্যন্তরীণ কোন্দল আরও এক বার প্রকাশ্যে এসে পড়ল। বর্তমান বোর্ড সচিব জালিয়াত, সবার সামনে আঙুল তুলে বলে দিলেন প্রাক্তন বোর্ড প্রেসিডেন্ট। বর্তমান বোর্ড প্রশাসনের তিন জনকে তাঁদেরই সচিবের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিলেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট।
সচিবের বিরুদ্ধে মামলা করে তাঁর সাত বছরের কারাদণ্ডের ব্যবস্থার হুমকি? সেটাও বাদ গেল না।
বোর্ড নাটকের নবতম অঙ্কের দুই নায়ক অনুরাগ ঠাকুর এবং অবশ্যই নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন।
নাটকের উৎস্য— প্রাক্তন বোর্ড প্রেসিডেন্ট শ্রীনি সম্পর্কে আদালতে পেশ করা বোর্ডের একটি আবেদন। যে আবেদনে বোর্ড জানতে চেয়েছিল, তামিলনাড়ু ক্রিকেট সংস্থার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শ্রীনি বোর্ডের গভর্নিং ব়ডির বৈঠকে যোগ দিতে পারেন কি না। এবং যে আবেদনের সমর্থনে একটি হলফনামা সই করেছিলেন অনুরাগ ঠাকুর।
কী ছিল সেই হলফনামায়?
অনুরাগ ঠাকুর সাফ ঘোষণা করে দিয়েছিলেন যে, গত ২৮শে অগস্ট কলকাতায় বোর্ডের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে জোর করে ঢুকে পড়েছিলেন শ্রীনিবাসন। এবং বারবার করে জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, তাঁকে মিটিংয়ে উপস্থিত থাকতে দিতেই হবে। শুধু তাই নয়, আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংগস ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক ইন্ডিয়া সিমেন্টস শেয়ারহোল্ডার্স ট্রাস্টের এক ট্রাস্টি হিসেবে শ্রীনির বিরুদ্ধে স্বার্থ-সংঘাতের অভিযোগও তোলা হয়। সবশেষে অনুরাগ ঠাকুর শপথ-সহ বলেন যে, হলফনামা তাঁর নির্দেশেই তৈরি হয়েছে। এবং তাতে উল্লিখিত যাবতীয় তথ্য সত্য। শপথ নিয়ে করা অনুরাগের দুটো বক্তব্যই নাকচ করে দিয়েছেন শ্রীনি। আর এখানেই থেমে না থেকে আদালতের কাছে করা নতুন একটি আবেদনে তিনি পরিষ্কার বলেছেন যে, অনুরাগের বিবৃতি ‘সর্বৈব মিথ্যে’। এবং তা প্রমাণ করতে তিনি বোর্ডেরই অন্য তিন সদস্যের নতুন হলফনামা পেশ করেছেন। এই তিন জন— বোর্ড কোষাধ্যক্ষ অনিরুদ্ধ চৌধুরি, ভাইস প্রেসিডেন্ট টিসি ম্যাথু ও কেরল ক্রিকেট সংস্থার যুগ্ম-সচিব জয়েশ জর্জ।
এই তিন জন হলফনামায় বলে দিয়েছেন যে, কলকাতায় গত অগস্টে বৈঠক শুরু হওয়ার আগেই সেখানে বসে ছিলেন শ্রীনি। এবং কেউই তাঁর উপস্থিতি নিয়ে আপত্তি তোলেননি। শুধু তাই নয়, কোনও আলোচনা ছাড়াই অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত বৈঠকটি মুলতবি করে দেওয়া হয়। আর তাই স্বার্থ-সংঘাত প্রসঙ্গে শ্রীনির কোনও রকম বক্তব্য রাখার উপলক্ষও তৈরি হয়নি। শ্রীনির দাবি, ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের কোনও লিখিত মিনিট্‌স নেই যাতে বলা হয়েছে যে তিনি জোর করে বৈঠকে ঢুকে পড়েন। বা বৈঠকে উপস্থিত থাকার দাবি জানান। তিনি বলছেন, ‘‘বোর্ডের মিথ্যে আবেদনের বিবৃতি তা হলে একমাত্র অনুরাগ ঠাকুরেরই ব্যক্তিগত। যিনি বোর্ডের হলফনামার পোশাকে নিজস্ব এবং ব্যক্তিগত মিথ্যে হলফনামা পেশ করে আদালতের অবমাননা করেছেন।’’

ইন্ডিয়া সিমেন্টসের ট্রাস্টি হওয়া নিয়ে শ্রীনির বক্তব্য, তাঁর বিরুদ্ধে স্বার্থ-সংঘাতের প্রশ্ন তুলে অনুরাগই নিজের পদকে অপমান করছেন। চেন্নাইয়ের এক অন্য সংস্থার কর্মী আর এক এন শ্রীনিবাসনের সঙ্গে অনুরাগ প্রাক্তন বোর্ড প্রেসিডেন্টকে গুলিয়ে ফেলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছেন। অনুরাগ নিজেও অবশ্য এই ‘তথ্যগত ভুল’ ঠিক করার আবেদন করেছেন। কিন্তু শ্রীনির বক্তব্য, এখানে বিভ্রান্তির কোনও অবকাশই নেই। তিনি জানিয়েছেন, এই শ্রীনিবাসন যে ভিন্ন লোক, সে ব্যাপরটা বোর্ড জানত, বোর্ডের কাছে রেকর্ডও ছিল।

অনুরাগ বলেছিলেন, শ্রীনির কাজ সহজ করে দিতেই বিতর্কিত ৬.২.৪ নিয়মের আমদানি। যার জোরে যে কোনও ক্রিকেট প্রশাসক আইপিএল বা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টি টিমের মালিক হতে পারেন। যে বক্তব্যকে ‘স্পষ্ট মিথ্যে’ আখ্যা দিয়ে শ্রীনি বলেছেন, ২০০৮-এর যে বৈঠকে এই নিয়ম পাশ হয়, সেখানে অনুরাগও সশরীরে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর আরও যুক্তি, বোর্ডের সব সদস্য যদি এই ‘প্রতারণার’ এক্তিয়ারে পড়ে থাকেন, সেই তালিকায় থাকবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। গুজরাত ক্রিকেট সংস্থার প্রেসি়ডেন্ট হিসেবে যিনি ২০০৯-এর বার্ষিক সাধারণ সভায় ৬.২.৪ নিয়মের সংশোধিত সংস্করণ পাশের সাক্ষী ছিলেন। শ্রীনির দাবি, অনুরাগ ইচ্ছাকৃত মিথ্যে প্রমাণ দিয়েছেন। বোর্ড সচিব তাঁর হলফনামায় প্রাক্তন বোর্ড প্রেসিডেন্টকে বোর্ড-বিরোধী ‘ভিলেন’ চিত্রিত করেছেন।

অভিযোগ সত্যি প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ সাত বছরের জেল হতে পারে বোর্ড সচিবের। এ বার কী পাল্টা দেবেন অনুরাগ? অপেক্ষায় দেশের ক্রিকেট প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE