Advertisement
E-Paper

সানির মনঃসংযোগ এখন কোথায় যে, ৯৬ হবে!

বেঙ্গালুরুতে চলতি ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্টের ঘূর্ণি পিচ দেখে মনে পড়ে যাবে ১৯৮৭ সালের মার্চ। তখন ছিল ব্যাঙ্গালোর। সুনীল গাওস্করের সেই অমর ৯৬। প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের এক বাঁ হাতি স্পিনার গাওস্কর-কে আউট করে হারিয়ে দেন ভারতকে। কোথায় গেল স্পিন খেলার সেই গাওস্করীয় শিল্প? কোহালি নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশের মধ্যেই ইকবাল কাশিম পাকিস্তান থেকে ফোনে কথা বললেন আনন্দবাজারের সঙ্গে।বেঙ্গালুরুতে চলতি ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্টের ঘূর্ণি পিচ দেখে মনে পড়ে যাবে ১৯৮৭ সালের মার্চ। তখন ছিল ব্যাঙ্গালোর। সুনীল গাওস্করের সেই অমর ৯৬।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৭ ০৩:৫৯
নিশ্ছিদ্র: বিষাক্ত স্পিন-পেস, গাওস্কর সামলেছেন সব।

নিশ্ছিদ্র: বিষাক্ত স্পিন-পেস, গাওস্কর সামলেছেন সব।

প্রশ্ন: সাতাশির সেই বিখ্যাত বেঙ্গালুরু টেস্ট কতটা মনে আছে?

ইকবাল কাশিম: ওটা স্বপ্নের টেস্ট ম্যাচ। সব কিছুই মনে আছে। আমরা জিতেছিলাম সম্ভবত ১৬-১৭ রানে (পাকিস্তান জেতে ১৬ রানে)। অবশ্য ওই টেস্ট ম্যাচের কথা উঠলে সকলে সানির (সুনীল গাওস্কর) অসাধারণ ৯৬-এর কথাই বলবে।

প্র: গাওস্করের ৯৬-ই কি আপনার দেখা সেরা ইনিংস?

কাশিম: সম্পূর্ণ টার্নিং পিচ, যেখানে অন্য ব্যাটসম্যানরা কেউ দাঁড়াতেই পারছে না, সেখানে সানির ৯৬ ছিল মহাকাব্য। ঘূর্ণি পিচে এমন ইনিংস আর কখনও দেখিনি।

প্র: আপনিই সানির উইকেট নিয়ে ভারতকে হারিয়েছিলেন?

কাশিম: (হাসি) নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি যে, সানির ব্যাটের কোণ পেয়ে গিয়েছিল ওই বলটা। সে দিন সানি যা খেলছিল, বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল আমরা জিতব।

প্র: ক্যাপ্টেন ইমরানের সঙ্গে কী আলোচনা হচ্ছিল?

কাশিম: ইমরান এক বার জিজ্ঞেস করল, কী বুঝছ? আমি বললাম, প্রত্যেকটা বল শেষ পর্যন্ত দেখছে। ব্যাটের একেবারে কাছে গিয়ে বল টার্ন করছে। সেই বলও শেষ পর্যন্ত দেখে ছেড়ে দিচ্ছে। একে আউট করব কী ভাবে? আমরা ঠিক করলাম, একই জায়গায় বল করে যাব।

প্র: বেঙ্গালুরুতে এই টেস্টে চেতেশ্বর পূজারাও ভাল ব্যাট...

কাশিম: (থামিয়ে দিয়ে) কাউকে খারাপ বলাটা আমার স্বভাব নয়। তবে প্লিজ, সানির ৯৬ নিয়ে আলোচনার মধ্যে আর অন্য কারও নাম টানবেন না। সানির ইনিংসটা জাদুঘরে রাখা আছে। শান্তিতে ওখানেই থাকতে দিন।

প্র: স্পিনের বিরুদ্ধে সানির ব্যাটিংয়ের বিশেষত্ব কী ছিল?

কাশিম: বোলার রান-আপ শুরু করা থেকে তার হাতে ধরা বলটায় ফোকাস করত সানি। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বলকে এ ভাবে অনুসরণ করতে আর কোনও ব্যাটসম্যানকে দেখিনি। স্পিনের বিরুদ্ধে ভাল ব্যাট করতে গেলে মনঃসংযোগ লাগে। টেকনিক লাগে। শৃঙ্খলা লাগে। তিনটে ব্যাপারেই সানি ছিল এক নম্বর।

প্র: আর কী বলবেন গাওস্করের ব্যাটিং নিয়ে?

কাশিম: সানির ক্ষেত্রে শুধু স্পিনের বিরুদ্ধে ভাল খেলার কথাটাই তো ওঠে না। ও পেস-স্পিন দু’টোকেই দারুণ খেলত। ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে তখনকার দুর্ধর্ষ সব ফাস্ট বোলারকে খেলে দিনের পর দিন রান করে গিয়েছে। এখন ভাল ব্যাটসম্যানদের নিয়ে কথা হলে শুনি, অমুক বাউন্সি উইকেটে ভাল খেলে বা তমুক স্পিনিং পিচে ভাল খেলে। সমস্ত ধরনের পিচে ভাল খেলা ব্যাটসম্যান এখন কোথায়!

প্র: স্পিনের বিরুদ্ধে সানির মতো ব্যাটিং দেখা যায় না...

কাশিম: কী করে হবে? ওই যে বললাম, সানির মনঃসংযোগ আর ফোকাসের কথা। কী দুর্ভেদ্য ডিফেন্স! ব্যাট-প্যাডে ফাঁক পাওয়া মানে লটারি জেতা গেল। সানি শুধু নিজে সফল হতো না, সঙ্গীদেরও উন্নত করত।

আরও পড়ুন:

লিয়েন্ডারকে আমি যতটা চিনি, কেউ তা চেনে না

প্র: এখনকার ক্রিকেট নিয়ে আপনার ধারণা কী?

কাশিম: এখন তো ক্রিকেটের জগৎটাই পাল্টে গিয়েছে। টি-টোয়েন্টি লিগগুলোর দৌলতে সকলেই দেখি সকলের বন্ধু। এই দেখছি দল বেঁধে সব অস্ট্রেলিয়াতে খেলতে চলল, তার পর সেখান থেকে দুবাই, সেখান থেকে ভারত ঘুরে আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দেখে ক্রিকেট-ভবঘুরে মনে হয়। এরা কি আর টেস্ট ম্যাচের সেই পুরনো রোম্যান্টিকতায় ভাসবে? মনে হয় না। ভাই, একটা ছক্কায় যদি কোটি কোটি টাকা কামিয়ে ফেলা যায়, টার্নিং পিচে ফরোয়ার্ড ডিফেন্সিভ শট নিয়ে ভাবতে বয়ে গিয়েছে আপনার!

প্র: আর কাদের বড় ব্যাটসম্যান মনে হয়েছে আপনার?

কাশিম: গ্রেগ চ্যাপেল। আমাদের জাহির আব্বাস, জাভেদ মিয়াঁদাদ। ভারতের সানি ছাড়া বিশ্বনাথ, মোহিন্দর অমরনাথ। পরের দিকে আপনাদের সচিন তেন্ডুলকর। আমাদের ইনজামাম-উল-হক। পা বাড়িয়ে খেলত।

প্র: এখনকার স্পিনার, অশ্বিন-লায়নদের কেমন লাগে?

কাশিম: ঠিক আছে। আমি খারাপ বলি না কাউকেই। তবে আমার দেখে বেশ খারাপই লাগছে যে, অস্ট্রেলিয়ার স্পিনাররাও এখন ভারতে এসে আট উইকেট নিচ্ছে! সানি, জাহির, জাভেদ-রা যত দিন খেলেছে, এটা ভাবাই যায়নি।

প্র: এখনকার কোনও ব্যাটসম্যানকেই কি ভাল লাগে না?

কাশিম: আপনাদের কোহালি ছেলেটা ভাল। ওর মনঃসংযোগ আছে। যত দিন যাচ্ছে, দায়িত্বশীল হচ্ছে। ছেলেটা শট খেলতে পারে, আবার ডিফেন্সও ভাল।

প্র: এই সিরিজে চারটি ইনিংসে কোহালি রান পাননি। ।

কাশিম: তাতে কী হয়েছে? কোহালি ভাল ব্যাটসম্যান। সাময়িক রান না পাওয়া জীবনের অঙ্গ। এগুলো থাকবেই।

প্র: ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ বন্ধ। আপনার কী মত?

কাশিম: আমি সব সময় দু’দেশের ক্রিকেটের পক্ষে। দু’দেশের মাঠের প্রতিদ্বন্দ্বিতাটাই শুধু মানুষ দেখতে পেয়েছে। মাঠের বাইরে আমরা অনেকে কিন্তু দারুণ বন্ধুও ছিলাম। বিষাণ বেদী আমার প্রিয় বোলার। কত বার টিপ্‌স নিয়েছি। আমি প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের ক্রিকেটার। তবুও খোলা মনে, কোনও রকম ব্যবধান না রেখে আমাকে পরামর্শ দিয়েছিল। আমি বিষাণ ভাইয়ের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। আর আশা করব আবার বিষাণ ভাই আসবে পাকিস্তানে দু’দেশের ক্রিকেট দেখতে। আমাদের মেহমান হয়ে।

Iqbal Qasim Interview former Pakistani cricketer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy