শনিবার সকাল ন’টায় ইস্টবেঙ্গলের অনুশীলন শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু তিনি মাঠে নেমে পড়লেন মিনিট পনেরো আগেই। সতীর্থদের জন্য অপেক্ষা না করে একাই দৌড়তে শুরু করে দিলেন। মোহনবাগানের উপেক্ষা থেকে সনি নর্দের ছিটকে যাওয়া— অনুশীলনের পরে অকপট লাল-হলুদ ডিফেন্ডার ডুডু ওমাগবেমি।
প্রশ্ন: মোহনবাগানের বিরুদ্ধে আই লিগের ফিরতি ডার্বির প্রস্তুতি কেমন হল?
ডুডু ওমাগবেমি: আমাদের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ। এ দিনও খুব ভাল অনুশীলন হয়েছে। আমরা মাঠে নামার জন্য মুখিয়ে রয়েছি।
প্র: ডার্বিতে আপনি নিজের জন্য কী লক্ষ্য স্থির করেছেন?
ডু়ডু: সব ফুটবলারই এই ম্যাচে ভাল কিছু করতে চাইবে। আমারও লক্ষ্য গোল করা। কিন্তু তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, দলের জয়ের ক্ষেত্রে নিজের অবদান রাখা। ইস্টবেঙ্গলেকে আই লিগে চ্যাম্পিয়ন করতে পারলে সব চেয়ে খুশি হব।
প্র: সত্যিই কি আর কোনও লক্ষ্য নেই?
ডু়ডু: মানে?
প্র: বছর তিনেক আগে মোহনবাগানের হয়ে অভিষেক ম্যাচে হ্যাটট্রিকের পরেও আই লিগের আগে আপনাকে ছে়ড়ে দেওয়া হয়েছিল। উপেক্ষার যন্ত্রণা কি ভুলতে পেরেছেন?
ডু়ডু: ভুলিনি কিছুই। কিন্তু আমার মনের মধ্যে কী চলছে, তা প্রকাশ করতে চাই না। কারণ, জানি এক দিন আমারও সময় আসবে। তা ছাড়া আমি কখনওই বেশি কথায় বিশ্বাস করি না। পারফরম্যান্সই হবে আমার জবাব। রবিবার নিজেকে উজাড় করে দিতে চাই। তাই ডার্বি জেতা ছাড়া অন্য কোনও ভাবনা নেই।
প্র: সনি নর্দে ছিটকে গিয়েছেন। শিল্টন পাল এবং ইউতা কিনোয়াকি অনিশ্চিত। মোহনবাগান কোচ নিজেই ইস্টবেঙ্গলকে এগিয়ে রাখছেন। লাল-হলুদ ড্রেসিংরুমে নিশ্চয়ই খুশির হাওয়া বইছে?
ডু়ডু: ফুটবল শুধু মজার নয়, অনিশ্চয়তার খেলাও। মোহনবাগান অন্য দলগুলোর বিরুদ্ধে হয়তো খুব একটা ভাল খেলতে পারবে না। কিন্তু ডার্বিতে ওরা মরিয়া হয়ে ঝাঁপাবে। এই ম্যাচটায় ওদের ফুটবলাররা অনেক বেশি উজ্জীবিত হয়ে নামবে। কারণ, মোহনবাগানের হারানোর কিছু নেই। চ্যাম্পিয়নও হতে পারবে না। ওদের প্রধান লক্ষ্য থাকবে সমর্থকদের কাছে নিজেদের প্রমাণ করা। বোঝানো— দেখো, আমরাও পারি। তা ছাড়া সনি নর্দে ছাড়াও তো মোহনবাগানে অনেক ভাল ফুটবলার আছে। আমাদের দলের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। আমার অভাব পূরণ করার মতো ফুটবলারের সংখ্যাও কম নেই। ডার্বিতে লড়াইটা ডুডুর সঙ্গে সনির নয়। ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগানের। ২০১৪-১৫ মরসুমে আই লিগের ডার্বির কথা মনে পড়ছে। সেই ম্যাচ ইস্টবেঙ্গল দুর্ধর্ষ খেলেছিল। কিন্তু মোহনবাগান গোলরক্ষক দেবজিৎ মজুমদার কার্যত একা আমাদের রুখে দিয়েছিল। বলবন্ত সিংহের একমাত্র গোলে আমরা হেরে গিয়েছিলাম। অথচ, ম্যাচের আগে কেউ মোহনবাগানকে গুরুত্ব দেয়নি। ইস্টবেঙ্গলকেই ফেভারিট বলা হচ্ছিল। সে বার মোহনবাগানই চ্যাম্পিয়ন হয়। সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েই বলছি, ডার্বি নিয়ে কখনও ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না।
প্র: চার বছর পরে ইস্টবেঙ্গলে ফিরলেন। সেই দলের সঙ্গে এ বারের দলের পার্থক্য কী?
ডু়ডু: এ বারের দলে যারা খেলছে, তাদের অনেকের সঙ্গেই আগে কখনও খেলিনি। মাত্র তিন দিন অনুশীলন করে আমার উপলব্ধি— এই মুহূর্তে দলটা খুব ভাল জায়গায় রয়েছে।
প্র: র্যান্টি মার্টিন্স, মেহতাব হোসেন-সহ একঝাঁক তারকা আপনার পাশে ছিলেন চার বছর আগে। এ বারের দলে তারকার সংখ্যা অনেক কম হওয়ায় কি লড়াইটা একটু কঠিন?
ডু়ডু: যে কোনও দলে তারকার সংখ্যা বেশি হলে অনেক রকম সমস্যা হয়। বরং তারকা কম থাকলে কোচের কাজটা সহজ হয়ে যায়। তিনি পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলাতে পারেন। এটা আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই উপলব্ধি করেছি আগের বার।
প্র: কী রকম?
ডু়ডু: আগের বার আমাদের দলে একঝাঁক তারকা ছিল। কোচও খুব ভাল ছিলেন। তা সত্ত্বেও আমরা সাফল্য পাইনি। কারণ, দলের অন্দরমহলে কিছু সমস্যা ছিল না। তবে ডার্বির আগে তা নিয়ে আলোচনা করতে চাই না। একটাই কথা বলতে চাই, আমি এখনকার পরিবেশেই বেশি স্বচ্ছন্দ।
প্র: অনেকেই মনে করেন, সেই সময়ে ইস্টবেঙ্গলের কোচ এলকো সাতোরি আপনাকে অন্য পজিশনে খেলিয়েছিলেন বলেই দল ব্যর্থ হয়েছিল?
ডু়ডু: এলকো খুব ভাল কোচ। কিন্তু সব কোচেরই নিজস্ব কিছু ভাবনা থাকে। পরিকল্পনা থাকে। কোচ দলের প্রধান। ফুটবলার হিসেবে আমাদের কর্তব্য তাঁর নির্দেশ পালন করা। আমি স্ট্রাইকার হওয়া সত্ত্বেও এলকোর কথায় ডান প্রান্তে খেলেছিলাম। তবুও চেষ্টা করেছিলাম নিজের সেরাটা দেওয়ার।
প্র: আপনার জীবনের দর্শন কী?
ডু়ডু: শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপন। ফিটনেসের ব্যাপারে আমি ভীষণ খুঁতখুঁতে। আমি জানি, ফুটবলপ্রেমীরা আমার কাছে কী প্রত্যাশা করেন। আমি কখনওই তাঁদের হতাশ করতে চাই না। সেটা করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিজেকে ফিট রাখা। কখনও শুনতে চাই না, ‘এ আর আগের ডুডু নেই।’ এই আই লিগেই লাল-হলুদ জার্সি গায়ে বোঝাতে চাই— আই অ্যাম ব্যাক।
প্র: ডার্বির জন্য কী ভাবে নিজেকে উদ্বুদ্ধ করছেন? কোনও বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে।
ডুডু: প্রথমেই বলতে চাই, ডার্বি নিয়ে আমি একেবারেই চাপে নেই। সব ম্যাচের আগেই নিজেকে চনমনে রাখতে সিনেমা দেখি। এ বারও দেখব।
প্র: কী ধরনের সিনেমা দেখেন?
ডুডু: আফ্রিকান অ্যাকশন সিনেমা আমার দারুণ পছন্দ।
প্র: এই কারণেই কি মাঠে আপনাকে এত ভয়ঙ্কর দেখায়?
ডু়ডু: (হাসি) আমি একেবারেই ভয়ঙ্কর নই। মাঠের মধ্যে যে ডুডুকে দেখেন, সেটা কিন্তু আমার আসল রূপ নয়!
প্র: এ তো ডক্টর জেকিল অ্যান্ড মিস্টার হাইডের কাহিনি!
ডুডু: হয়তো তাই। আমি এমনিতে লোকজন এড়িয়ে চলি। কারণ, জানি সবাইকে খুশি করা সম্ভব নয়। তাই একা থাকতে ভালবাসি। শুনলে হয়তো অবাক হবেন, একাকিত্ব আমার কাছে অভিশাপ নয়। উপভোগ্য। কিন্তু মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গেই আমার মধ্যে অদ্ভুত পরিবর্তন ঘটতে থাকে। অদৃশ্য কোনও শক্তি যেন আমাকে চালনা করে। সতীর্থরাও বলে— ‘মাঠে নামলে তোমার মধ্যে এত প্রাণশক্তি কোথা থেকে আসে? মাঠের বাইরে তো তুমি একেবারে অন্য মানুষ।’
প্র: লিওনেল মেসি না ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো— কে আদর্শ?
ডু়ডু: (হাসি) দু’জনের কেউ-ই নয়। আমি ব্রাজিলের রোনাল্ডোর ভক্ত। ওর মতো স্ট্রাইকার বিশ্ব ফুটবলে আর দ্বিতীয় বার আসবে না।
প্র: ডার্বির আগে লাল-হলুদ সমর্থকদের উদ্দেশে আপনার বার্তা কী?
ডু়ডু: সমস্ত রকম পরিস্থিতিতে দলের পাশে থাকুন। আপনাদের উৎসাহ আমাদের ভাল খেলতে অনুপ্রাণিত করে। ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করে।