Advertisement
E-Paper

‘কেউ ইট ছুড়লে তাকে তো পাটকেল খেতেই হবে’

বিরাটদের হেড কোচ রবি শাস্ত্রী একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজার-কে। বলে দিলেন, গত সিরিজের সেই পুরনো বিতর্ক ‘ডিআরএসগেট’ কেউ মনে রাখছে না। তবে স্মিথরা স্লেজিং করলে তাঁরাও ফিরিয়ে দেবেন!

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৪২
হেড কোচ রবি শাস্ত্রী।

হেড কোচ রবি শাস্ত্রী।

বীরেন্দ্র সহবাগের তৈরি করা কোচ-বিতর্ক নিয়ে কোনও কথা বলবেন না। টুকরো প্রতিক্রিয়া দিতেও নারাজ। কিন্তু নয়া টিম ইন্ডিয়ার লক্ষ্য, বিশ্বকাপের রোডম্যাপ, মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভবিষ্যৎ, অশ্বিন নিয়ে অবস্থান, বিরাট কোহালির আগ্রাসী মনোভাব, কঠোর ফিটনেস মন্ত্রের সূচনা— নানা বিষয় নিয়ে খোলামেলা তিনি। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে নতুন সিরিজের শিঙা ফোঁকাফুঁকির মধ্যে বিরাটদের হেড কোচ রবি শাস্ত্রী একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজার-কে। বলে দিলেন, গত সিরিজের সেই পুরনো বিতর্ক ‘ডিআরএসগেট’ কেউ মনে রাখছে না। তবে স্মিথরা স্লেজিং করলে তাঁরাও ফিরিয়ে দেবেন!

প্রশ্ন: শ্রীলঙ্কার পর সামনে এ বার অস্ট্রেলিয়া। কী লক্ষ্য থাকছে?

রবি শাস্ত্রী: বৃহত্তর লক্ষ্যের জন্য টিমকে তৈরি করার প্রক্রিয়া চলছে। তার জন্য তরুণ এবং নতুন রক্তকে সুযোগ দিতে হবে। নতুন ছেলেদের দেখে নেওয়ার ভাবনাটা এই সিরিজেও আমাদের মাথায় থাকবে। তবে পরীক্ষা-নীরিক্ষা বেশি করা হবে টি-টোয়েন্টি ম্যাচগুলোতে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হবে ২০২০ সালে। অনেকটা সময় আছে। ওয়ান ডে সিরিজে অবশ্যই জেতার উপর জোর দিতে হবে।

প্র: ২০১৯ বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে ঠিক কী করতে চাইছেন?

শাস্ত্রী: আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ১৮ জনের নিউক্লিয়াস ঠিক করে ফেলা। আর সেটা করতে হবে ২০১৯ বিশ্বকাপের আট-নয় মাস আগেই। যাতে নির্বাচিত গ্রুপটাকে একসঙ্গে নিয়ে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত প্রস্তুতি সারা যায়।

প্র: দল নির্বাচনে কী প্রাধান্য পাবে?

শাস্ত্রী: এক নম্বর শর্ত হবে ফিটনেস। এ ব্যাপারে কোনও আপস করা হবে না। ফিটনেসের মানদণ্ড ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। সকলকে বার্তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, বেধে দেওয়া মানদণ্ডে পৌঁছতে না পারলে নির্বাচিত হবে না।

প্র: ইতিমধ্যেই ক্রিকেটারদের সেটা পরিষ্কার বলে দেওয়া হয়েছে?

শাস্ত্রী: ইয়েস। বার্তাটা পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে। বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, আমরা কী চাইছি। যারা ভারতের হয়ে ওয়ান ডে খেলতে চায়, তাদের এই ফিটনেস মানে পৌঁছতে হবে।

প্র: ফিটনেস নিয়ে এই কড়াকড়ির পিছনে নির্দিষ্ট কোনও কারণ আছে?

শাস্ত্রী: আমরা বিশ্বের সেরা ফিল্ডিং টিম হতে চাই। এটা আমাদের প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য। ফিটনেস সক্ষমতাকে সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে যেতে না পারলে সেটা সম্ভব নয়। ওয়ান ডে ক্রিকেট এখন যেভাবে খেলা হচ্ছে, তাতে এনার্জি চাই, শক্তি চাই। ফিটনেস নিয়ে আপস করলে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ভাল ফল পাওয়া কঠিন।

প্র: এই ফিটনেস মানদণ্ড কি সকলের জন্যই প্রথম শর্ত হবে?

শাস্ত্রী: ফিটনেস টেস্ট পাশ করা বাধ্যতামূলক। ওটাই আগে দেখা হবে। ফিটনেসের লক্ষ্যে পৌঁছলে তবেই স্কিল বা অন্যান্য জিনিস দেখা হবে।

প্র: হেড কোচ হিসেবে ফিরে দ্বিতীয় ইনিংসে এত কঠোর মনোভাব নেওয়ার কি কোনও কারণ আছে?

শাস্ত্রী: ক্রিকেট খেলাটা পাল্টাচ্ছে। ফিটনেস, ফিল্ডিংয়ের মান দ্রুত উন্নত হচ্ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিতে হলে কয়েকটা ব্যাপারে কঠোর হতেই হবে। আর টিম হিসেবে এগোতে গেলে দলবদ্ধ ভাবে সেই আপসহীন নীতি অনুসরণ করতে হবে।

প্র: সাধারণ ক্রীড়াপ্রেমীদের বোঝার সুবিধার্থে একটা ধারণা দিন। ফিল্ডিংয়ের এই মান কতটা উঁচুতে?

শাস্ত্রী: এক কথায় বুঝিয়ে দিচ্ছি। সর্বোচ্চ স্তরের ফিটনেস পেতে চাইছি আমরা। সেটা না করলে আমরা সেরা ফিল্ডিং দল হতে পারব না।

প্র: জানতে ইচ্ছা করছে, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি কি এই ফিটনেস স্তরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ২০১৯ বিশ্বকাপের রাস্তায় টিকে থাকতে পারবেন?

শাস্ত্রী: শ্রীলঙ্কায় দেখে কী মনে হল? ধোনি এখনও সবচেয়ে ফিট ক্রিকেটারদের এক জন। এখনও উইকেটকিপার হিসেবে দারুণ সক্রিয়। আমি তো বলব, উইকেটের পিছনে বিদ্যুৎ-গতিতে কাজ সারে ধোনি। ওয়ান ডে-তে এখনও বিশ্বের সেরা উইকেটকিপার। প্লাস, ব্যাট হাতে এখনও জেতাচ্ছে। শ্রীলঙ্কায় ওয়ান ডে সিরিজটাতে সেটা আবার প্রমাণ করে দিয়েছে। টিম ওর উপর আস্থা রাখছে।

প্র: ২০১৯ বিশ্বকাপের এখনও ২০ মাস বাকি। আপনি কি ধোনিকে ভারতীয় দলে দেখতে পাচ্ছেন?

শাস্ত্রী: যদি ধোনি এই ফর্ম আর ফিটনেস ধরে রাখতে পারে, তা হলে এই প্রশ্নটা নিয়ে ভাবার দুঃসাহসটাই বা কে দেখাতে পারবে!

প্র: মানে ধোনি আছেন ধরে নিয়েই ২০১৯ বিশ্বকাপের নকশা শুরু হয়েছে, বলা যায়।

শাস্ত্রী: একদমই তাই। আর শ্রীলঙ্কায় ও দেখিয়েছে, এখনও সফলভাবে ম্যাচ ‘ফিনিশ’ করার ব্যাপারটা ও কত টেনশনহীন ভাবে করতে পারে।

প্র: ধোনিকে কি নির্দিষ্ট কোনও ভূমিকা দেওয়া হচ্ছে?

শাস্ত্রী: আমাদের কিছু পরিকল্পনা আছে। সেগুলো এখনই খোলাখুলি প্রকাশ করতে চাই না। এটুকু বলতে পারি, ধোনির এখনও অনেক কিছু দেওয়া বাকি।

প্র: ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া মানেই তো বাড়তি উত্তেজনা, স্লেজিং আর তিক্ততার ইতিহাস।

শাস্ত্রী: (থামিয়ে দিয়ে) দাঁড়ান। সবার আগে বলতে হবে, ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক একটা দ্বৈরথ। দু’টো দল মুখোমুখি হলে দারুণ উপভোগ্য ক্রিকেটও দেখা যায়! ভারত-পাক ক্রিকেট এখন হচ্ছে না। ভারত আর অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ভক্তরা তাঁদের দেশের লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। এটাই এখন ‘মার্কি সিরিজ’। সেরা দ্বৈরথ। দু’দেশের ক্রিকেটারদের সেরাটাও বেরিয়ে আসে এই দ্বৈরথে। পুরো ক্রিকেট দুনিয়া সেই লড়াই উপভোগ করছে।

প্র: পাশাপাশি প্রচুর বিতর্কও হয়েছে। শেষ বার অস্ট্রেলিয়ার ভারত সফরে তুলকালাম হল ‘ডিআরএসগেট’ নিয়ে!

শাস্ত্রী: সেটা উত্তপ্ত একটা মুহূর্তে হয়তো ঘটে গিয়েছিল। আমি ওই সিরিজে কমেন্ট্রি বক্সে ছিলাম। এ রকম ঘটনা খেলার মাঠে ঘটে থাকে। সেটাকে কেউ মনে রাখে না। জীবন এগিয়ে গিয়েছে। ওই ঘটনার পর অনেক ক্রিকেট খেলা হয়ে গিয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, দু’দলের অনেক ক্রিকেটার একসঙ্গে আইপিএলে খেলেছে। আমার মনে হয় না, কেউ পুরনো ঘটনাকে মনে রেখে এ বারের সিরিজ খেলতে নামবে।

প্র: তাহলে কি অস্ট্রেলিয়া স্লেজিং করলে ভারতীয় দল চুপ থাকবে?

শাস্ত্রী: এটা কে বলল? শুনুন, আমি তো বলেছি, পুরনো ঘটনা কেউ মনে রেখে মাঠে নামব না। তার মানে এই নয় যে, ওরা কিচিরমিচির শুরু করলে আমরা চুপ থাকব। আমাদের দিকে যা ছোড়া হবে, সেটাই আমরা ফেরত দেব। ‘গিভ অ্যাজ গুড অ্যাজ ইউ গেট’— এটাই আমাদের মনোভাব। কেউ ইট ছুড়লে তাকে তো পাটকেল খেতেই হবে।

প্র: ক্যাপ্টেন কোহালির আগ্রাসী ভঙ্গি নিয়ে নানা মুনির নানা মত। অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগে ক্যাপ্টেনের জন্য আপনার উপদেশ কী?

শাস্ত্রী: কী আবার, একই ভঙ্গিতে চালিয়ে যেতে বলব! আগ্রাসন বিরাটের ডিএনএ-তে রয়েছে। এই আক্রমণাত্মক মেজাজ দেখিয়েই ও নিজে দুরন্ত খেলে চলেছে, দলও জিতছে। সামনে থেকে দাঁড়িয়ে আগ্রাসী ভঙ্গিতেই নেতৃত্ব দিচ্ছে বিরাট। পাল্টাতে যাবে কেন? আর কোন আহাম্মকই বা পাল্টাতে বলে!

প্র: অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলাটাই কি সেরা মন্ত্র?

শাস্ত্রী: সকলের সঙ্গেই আমাদের মন্ত্র তাই। প্রতিপক্ষ যে-ই হোক। আগ্রাসী ক্রিকেট খেলব, সর্বোচ্চ তীব্রতা থাকবে আমাদের ক্রিকেটে। অস্ট্রেলিয়া ভাল দল। এটা বোঝার জন্য কোনও রকেট সায়েন্স দরকার হয় না। ওদের বিরুদ্ধে সেরা ক্রিকেট খেলতে হবে।

প্র: ছেলেদের কী বললেন?

শাস্ত্রী: বললাম, সেরা লড়াইটা দাও। নাছোড় মনোভাব দেখাও। ধারাবাহিকতার উপর জোর দাও।

প্র: শ্রীলঙ্কায় ৯-০ জেতার পরে একটা প্রশ্ন, অস্ট্রেলিয়াকেও কি দেশের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ করা সম্ভব?

শাস্ত্রী: একটা জিনিস মাথায় রাখা দরকার। সব সময় সব ম্যাচ আমরা জিতব না। কেউ জেতে না। লক্ষ্যটা থাকা উচিত যে, ধারাবাহিক ভাবে আমরা তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মেজাজটা দেখাব। কাউকে সহজে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়ব না। তার পর দেখা যাবে।

প্র: অশ্বিন, জাডেজাকে ওয়ান ডে দলে রাখা হয়নি। (রাতের দিকে ডাকা হয়েছে জাডেজাকে) তাঁদের নিয়ে দলের অবস্থানটা ঠিক কী?

শাস্ত্রী: আগামী এক-দেড় বছরে ২৫টা টেস্ট খেলতে হবে আমাদের। তাই বোলারদের ক্ষেত্রে রোটেশন চালু করতেই হবে। এটাও বুঝতে হবে যে, কোন বোলার কোন ফর্ম্যাটের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তার এনার্জিটাকে সেই ফর্ম্যাটের জন্য বাঁচিয়ে রাখতে হবে। টানা সব ধরনের ফর্ম্যাটে খেলার ধকল সকলে নিতে পারবে না। তাদের নিঃশেষ করে দিলে টিমেরই ক্ষতি।

প্র: মানে অশ্বিনদের ওয়ান ডে কেরিয়ার শেষ হয়ে যাচ্ছে না?

শাস্ত্রী: একেবারেই নয়। বিশ্বকাপের ১২ মাস আগে থেকে তো আবার ওরা ওয়ান ডে ফর্ম্যাটের নকশায় ফিরতেই পারবে। আমাদের কাছে দু’টো জিনিস খুব গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৯ বিশ্বকাপ এবং টেস্ট ক্রিকেট। দু’টোর কথাই ভাবতে হবে, দু’টোতেই ভাল করতে হবে।

প্র: ব্যাটিংয়ে চার নম্বর নিয়ে সমস্যা আছে। এই জায়গাটায় কাকে ভাবছেন?

শাস্ত্রী: চার নম্বর জায়গায় ফিট করার জন্য মণীশ পান্ডে খুব ভাল নাম। ওর মধ্যে সেই মশলা রয়েছে। প্রথাগত ব্যাটসম্যানদের চেয়ে ও অন্য রকম। তাড়াতাড়ি রান করতে পারে। পারফর্ম করেছে। অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে সেঞ্চুরি করে ম্যাচ জিতিয়েছে। আমার মনে হয়, চার নম্বর জায়গাটার জন্য মণীশ খুব ভাল পছন্দ হতে পারে।

interview team India Ravi Shastri head coach রবি শাস্ত্রী
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy