কুম্বলে ইস্তফা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে প্রশ্নটা এখন উঠে আসছে, তা হল, পরবর্তী কোচ কে হতে পারেন। ভারতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বললে তাঁদের পছন্দের নামটা পরিষ্কার হয়ে যাবে— রবি শাস্ত্রী। ক্রিকেটাররা মনে করেন, শাস্ত্রীর আমলে ড্রেসিংরুমের পরিবেশ অনেক খোলামেলা ছিল। শুধু তাই নয়, শাস্ত্রীর টেকনিক্যাল প্রজ্ঞাও ভারতীয় ক্রিকেটারদের অনেক উপকারে আসত। যেটা হালফিলে হচ্ছিল না। কুম্বলে কোচ থাকায় ভারতীয় দলে কোনও বোলিং কোচ রাখা হয়নি। টিমের পেস বোলারদের অভিযোগ ছিল, তাঁরা সমস্যায় পড়লে কারও কাছ থেকে সাহায্য পাচ্ছেন না।
ক্রিকেটারদের কথা শুনলে কোচের দায়িত্বে আসা উচিত শাস্ত্রীর। কিন্তু শাস্ত্রীকে নিয়ে সমস্যা হল, তিনি নিজে কোচের পদের জন্য আবেদন করেননি। শাস্ত্রীর বক্তব্য পরিষ্কার, তাঁকে কোচের দায়িত্ব দিতে হলে ক্রিকেট বোর্ডকে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে হবে।
আরও একটা নাম কোচের দৌড়ে খুব ভাল ভাবে আছে। সেটা হল, বীরেন্দ্র সহবাগ। ভারতীয় বোর্ডের কয়েক জন কর্তার কথায় সহবাগ কোচের পদে আবেদন করেছেন। যে ক’জন প্রার্থী এই পদের জন্য আবেদন করেছেন, তাঁদের মধ্যে আপাতত সহবাগই সবচেয়ে এগিয়ে।
মঙ্গলবার কুম্বলের ইস্তফা অবশ্য ভারতীয় ক্রিকেট মহলে বেশ আলোড়ন ফেলেছে। সুনীল গাওস্কর বলেছেন, ‘‘বিরাট কোহালি এবং অনিল কুম্বলের মধ্যে কী সমস্যা ছিল, তা আমি জানি না। আমি শুধু বলব, এটা ভারতীয় ক্রিকেটের পক্ষে একটা দুঃখের দিন। আমি ভেবেছিলাম, কুম্বলে সরে যাবে না।’’ গাওস্কর মনে করেন, এই অবস্থায় শ্রীলঙ্কা সফরের আগে অবশ্যই ভারতের কোচ বেছে ফেলা উচিত।
যখন দায়িত্ব নিলেন
২৩ জুন, ২০১৬। বোর্ডের ক্রিকেট অ্যাডভাইসরি কমিটি এক বছরের জন্য ভারতীয় দলের কোচ হিেসবে বেছে নিল অনিল কুম্বলেকে।
কুম্বলের আমলে
ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট সিরিজ জয় (২-০)। ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড (৩-০), ইংল্যান্ড (৪-০), বাংলাদেশ (১-০) ও অস্ট্রেলিয়ার (২-১) বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ জয়। ওয়ান ডে-তে জয় ৮, হার ৫।
সম্পর্কে চিড়
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরুর আগেই অনিল কুম্বলে এবং বিরাট কোহালির সম্পর্ক নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে যায়। দু’জনের সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে ইংল্যান্ডে। ভারতীয় টিমের নেট প্র্যাকটিসের সময় যা বার বার ধরা পড়েছে।
নতুন ছয় নাম
১ জুন, ২০১৭। বোর্ডের বিজ্ঞাপনের জবাবে আবেদন করলেন প্রার্থীরা। সেই তালিকায় ছিলেন কুম্বলে নিজে, বীরেন্দ্র সহবাগ, টম মুডিরা। সহবাগকে নাকি আবেদন করতে বলা হয়েছিল।
এ বার কে
ভারতীয় ক্রিকেটারদের পছন্দের নাম হল রবি শাস্ত্রী। ক্রিকেটারদের কথা শোনা হলে, শাস্ত্রীকেই কোচ হিসেবে দেখা যাবে। কিন্তু শাস্ত্রী সরকারি ভাবে আবেদন করেননি। দৌড়ে সহবাগও।
গত কয়েক সপ্তাহে ভারতীয় কোচকে নিয়ে নাটকের পরে এখন প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, নতুন কোচ নির্বাচনের সময় কেন ক্রিকেটারদের কথা শোনা হবে না। ভারতীয় দল ওয়েস্ট ইন্ডিজে উড়ে যাওয়ার পরেও বিভ্রান্তি থেকে গিয়েছিল, কুম্বলের ভাগ্যে কি আছে? সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেলেও সেটা এল অনেক নাটকের পরে। যার জেরে চিফ কোচ ছাড়াই ক্যারিবিয়ানে পাঁচটা ওয়ান ডে এবং একটা টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে গেলেন কোহালিরা।
কুম্বলে ইস্তফা দেওয়ার পরে এখন প্রশ্ন উঠছে, নতুন কোচ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কি এ বার ক্রিকেটারদের বক্তব্য শোনা হবে? কুম্বলেকে কোচ করার সময় ক্রিকেটারদের বক্তব্য শোনা নিয়ে দু’রকম মত আছে। কেউ বলছেন, ক্রিকেটারদের কথা একেবারেই শোনা হয়নি। কেউ আবার বলছেন, বক্তব্য শোনা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু মানা হয়নি।
সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির নাটক শেষ হয়ে গেলেও ভারতীয় ক্রিকেটের নাটক শেষ হওয়ার কোনও চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না।