হেরে যাওয়ার ভয় তাড়ালেই আসবে সাফল্য, টিপস দিলেন অঞ্জু। —ফাইল চিত্র।
অর্থাৎ, সাফল্যের জন্য ট্যালেন্টের পাশাপাশি কোচের গাইডেন্স অত্যন্ত দরকারি। ভাল কোচ পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। এক্ষেত্রে কি ভারতীয় কোচদের উপর আস্থা রাখা যায়, নাকি বিদেশি কোচের দরকার রয়েছে?
অঞ্জু ববি জর্জ: বিদেশি কোচদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাই সবসময় তাদের উপর ভরসা করা যায় না। আর তা করলে আমাদের পরিকাঠামো এগোবে না। আমাদের নিজস্ব কোচেদের উপর আস্থা রাখতেই হবে।
হালফিল ভারতীয় অ্যাথলিটরা সাফল্য পাচ্ছেন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়। অলিম্পিকেও কি সেই রেখা ঊর্ধ্বমুখী থাকবে?
অঞ্জু ববি জর্জ: আমাদের রেখা অবশ্যই ঊর্ধ্বমুখী। তবে তা অত্যন্ত ধীরগতির। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে আমি যখন পদক জিতলাম তার পর আশা করেছিলাম অনেক উন্নতি দেখা যাবে। বাট নাথিং হ্যাপেন্ড। তবে তরুণরা উঠে আসছে। জুনিয়র লেভেল অনেক শক্তিশালী। ওরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়শিপে পদক আনছে। কিন্তু জুনিয়র পর্যায় থেকে সিনিয়র পর্যায়ে বিশাল ফারাক রয়েছে। পদক পাওয়া অনেক কঠিন। এই পর্যায়ে অনেক পরিকল্পনার দরকার হয়। সিস্টেমও বদলাতে হয়।
নীরজ চোপড়া সম্প্রতি বলেছেন যে অলিম্পিকে সাফল্যের জন্য তিনি সোশ্যাল মিডিয়া ত্যাগ করবেন। স্টেডিয়ামে পরিবারের কারওর উপস্থিতি তিনি চান না। মনঃসংযোগের জন্য আপনি কী করতেন?
অঞ্জু ববি জর্জ: একবার স্টেডিয়ামে ঢুকে পড়লে বাইরের কোনও সাপোর্ট সিস্টেম কাজ করে না। তখন পুরোটা নিজেকেই সামলাতে হয়। এ ক্ষেত্রে যেটাতে নিজের সুবিধা মনে হবে সেটাই করতে হবে। এটায় একজন অ্যাথলিটের স্বাধীনতা রয়েছে। সে নিজের ফোকাসের জন্য নিজেই ব্যবস্থা নেবে। মাথায় রাখতে হবে এই পর্যায়ে নিরবচ্ছিন্ন মনঃসংযোগের প্রয়োজন। ফোকাস সম্পূর্ণ একদিকেই রাখতে হয়। কোনও ভাবেই যেন তা বিচ্ছিন্ন না হয়। আমাদের নিজেদের ম্যাক্সিমামটা দিতে হয় ঠিক সময়, বের করে আনতে হয় সর্বোত্তম পারফরম্যান্স।
আরও পড়ুন: মোহনবাগানের প্রাক্তন অধিনায়ক মণিতোম্বি প্রয়াত, ময়দানে শোকের ছায়া
আপনার রুটিন কী থাকত?
অঞ্জু ববি জর্জ: আগেই বলেছি, একবার স্টেডিয়ামে ঢুকে পড়লে কোচ কিছু করতে পারে না, বন্ধুরা কিছু করতে পারে না, পরিবার কিছু করতে পারে না। তখন পুরোটাই নিজের উপর এসে যায়। বিশ্বাস করতাম যে দেশের জন্য নিজের বেস্ট তুলে ধরা কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। আর আমি গুড ফাইটার। লড়াইয়ের ময়দানে ঢুকে পড়লে আমি হাল ছাড়তাম না। নিজের সেরাটা মেলে ধরতে প্রাণপাত চেষ্টা করতাম। ফল তো হাতে থাকে না। লড়াই থাকে, প্রচেষ্টা থাকে। সেটাই করতাম। মেডেল না মিললে ভাবতাম কপালে নেই বলেই আসেনি। কিন্তু লড়াইয়ে ঢিলে দিতাম না। ফাঁকি থাকত না কোথাও।
সেটাই কি আপনার উপদেশ হবে পরের প্রজন্মের জন্য যে হাল ছেড়ো না?
অঞ্জু ববি জর্জ: একটা ঘটনা বলি। প্যারিসের পরে হেলসিঙ্কিতে দ্বিতীয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিন মেডেল হারিয়েছিলাম কয়েক সেন্টিমিটারের জন্য। চতুর্থ হয়েছিলাম। প্রথম গেমের পর খুব বৃষ্টি হয়েছিল। তার মধ্যেই নিজের সেরাটা দিয়েছিলাম। সর্বাধিক প্রচেষ্টা করেছিলাম। ওই প্রতিযোগিতার আগে ভারতে আমি লাফিয়েছিলাম ৬.০৯ মিটার। সেখান থেকে এক মাসের মধ্যে বিশ্বের চতুর্থ হয়েছিলাম। এটাই আমার সাহস! এটা ভাবিনি যে ভারতে কেমন করেছি চ্যাম্পিয়নশিপের আগে। বিশ্বাস ছিল ঠিক সময়ে আমি মেলে ধরতে পারব নিজেকে।
মানে সাফল্যের জন্য দরকার নিজের উপর অনন্ত বিশ্বাস এবং ভিতরের শক্তি।
অঞ্জু ববি জর্জ: আর একটা জিনিসও দরকার। নিজের ভিতরে জ্বলতে থাকা আগুন। নিজের দক্ষতায় আস্থা তো রাখতেই হবে।
এই বৈশিষ্ট্য কি এখনকার অ্যাথলিটদের মধ্যে দেখতে পাচ্ছেন?
অঞ্জু ববি জর্জ: (হাসি) আমাদের অধিকাংশ অ্যাথলিটদের মধ্যে ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু তাঁরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সেই ক্ষমতা মেলে ধরতে পারছে না দুর্ভাগ্যবশত।
সেটা কি ভিতরের আগুনের অভাবে?
অঞ্জু ববি জর্জ: হ্যাঁ, তা বলতে পারেন। ভিতরে আগুন না থাকা একটা কারণ। আর একটা কারণ হল হেরে যাওয়ার ভয়। যদি হেরে যাই, এই ভয় তাড়া করছে। ফিয়ার অফ লুজিং। আর একটা ভয় আছে। যদি সেরাটা দিতে না পারি, সেই ভয়। বিশ্বের সেরাদের বিরুদ্ধে লড়ার ভয়ও থাকছে।
মানে, সেই আগের কথা। যথেষ্ট পরিমাণ প্রতিযোগিতায় নামতে না পারা আনছে হীনমন্যতা।
অঞ্জু ববি জর্জ: ইয়েস। ভারতে বসে বলতেই পারি যে অলিম্পিক সোনা জিতব বা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পদক আনব। কিন্তু, একবার স্টেডিয়ামে ঢুকে পড়লে পাশে কেউ থাকে না। তখন নিজেকেই যা করার করতে হয়। তখন নিজের মধ্যেই জন্ম নেয় প্রশ্ন, এ বার কী করব রে বাবা (হাসি)!
আপনার মেয়ের গলা ভেসে আসছে মোবাইলে। আর একটা চ্যাম্পিয়ন অ্যাথলিট কি পেতে পারে দেশ?
অঞ্জু ববি জর্জ: ইয়েস, ডেফিনিটলি। ইচ্ছে তেমনই আছে। তবে অ্যান্দ্রিয়ার বয়স মাত্র ছয়। দেখা যাক কী হতে চায় ও।