Advertisement
E-Paper

শ্যুটিংয়ে সাফল্যেও উত্‌সবে অনীহা জয়ীদের

সম্ভাবনা যথেষ্টই। তবে ভবিষ্যত্‌ এখনও আঁধারে! তাই রাজ্যস্তরে সোনা-রূপো-ব্রোঞ্চেও উত্‌সবে মাতে না মেদিনীপুর ডিস্ট্রিক্ট শ্যুটিং অ্যাসোসিয়েশন। ‘নর্থ কলকাতা রাইফেল ক্লাবে’ ৪৭ তম পশ্চিমবঙ্গ শ্যুটিং প্রতিযোগিতায় (৩-৭ সেপ্টেম্বর) পশ্চিম মেদিনীপুরের ২৭ প্রতিযোগী যোগ দিয়েছিলেন। তাতে ব্যক্তিগত ভাবে স্পোর্টস পিস্তলে সোনা জিতেছেন সুজাতা ভট্টাচার্য, অভিনব সিংহ (এয়ার রাইফেল) এবং বাপ্পাদিত্য খাটুয়া (এয়ার পিস্তল) পেয়েছেন ব্রোঞ্চ।

সুমন ঘোষ

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৫৭
চলছে অনুশীলন। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

চলছে অনুশীলন। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

সম্ভাবনা যথেষ্টই। তবে ভবিষ্যত্‌ এখনও আঁধারে! তাই রাজ্যস্তরে সোনা-রূপো-ব্রোঞ্চেও উত্‌সবে মাতে না মেদিনীপুর ডিস্ট্রিক্ট শ্যুটিং অ্যাসোসিয়েশন।

‘নর্থ কলকাতা রাইফেল ক্লাবে’ ৪৭ তম পশ্চিমবঙ্গ শ্যুটিং প্রতিযোগিতায় (৩-৭ সেপ্টেম্বর) পশ্চিম মেদিনীপুরের ২৭ প্রতিযোগী যোগ দিয়েছিলেন। তাতে ব্যক্তিগত ভাবে স্পোর্টস পিস্তলে সোনা জিতেছেন সুজাতা ভট্টাচার্য, অভিনব সিংহ (এয়ার রাইফেল) এবং বাপ্পাদিত্য খাটুয়া (এয়ার পিস্তল) পেয়েছেন ব্রোঞ্চ।

দলগত ভাবেও পুরস্কার পেয়েছেন প্রতিযোগীরা। এয়ার পিস্তলে মা কাকলি মহাপাত্রের সঙ্গে উপযুক্ত সঙ্গ দিয়েছেন বটানি অনার্সের প্রথম বর্ষের ছাত্রী মেয়ে মধুরিমা। ওই দলে অবশ্য ব্যক্তিগত ভাবে সোনা জয়ী সুজাতাও ছিলেন। একই ভাবে ফ্রি পিস্তলে পারব কালি, স্বরূপ কুণ্ডু, সুব্রত কুণ্ডুরা এবং সেন্টার ফায়ার পিস্তলে বাপ্পাদিত্য কালি, স্বরূপ কুণ্ডু ও জিতেন্দ্র সিংহেরা ব্রোঞ্চ পেয়েছেন। একই সঙ্গে ৫ জন সুযোগ ছিনিয়ে নিয়েছেন জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় যোগদানে উপযোগী কিনা, তার পরীক্ষা দেওয়ার প্রতিযোগিতাতেও (প্রি ন্যাশনাল)।

বহুদিন পর অবশ্য এমন সাফল্য মিলেছে। বেজায় খুশি ক্লাবের সদস্যেরা। কিন্তু, সাফল্য এল কী ভাবে? ক্লাবের সম্পাদক বিজয়গোপাল মল্লিক বলেন, “এত দিন মান্ধাতা আমলের রাইফেল, পিস্তল দিয়ে প্রশিক্ষণ হত। তাতে ভাল ফল হত না। এ বার সেই সব মান্ধাতা আমলের সরঞ্জাম বেচে আধুনিক জিনিস এনেছি। তাতেই সাফল্য।” প্রশিক্ষক শান্ত কর্মকারের (নামকরা শ্যুটার জয়দীপ কর্মকারের বাবা) কথায়, “জেলায় প্রতিভা রয়েছে। কিন্তু অর্থাভাবে তা বিলুপ্ত হচ্ছে। না হলে আমাদের জেলা থেকেও অনেকেই অলিম্পিকে যেতে পারত।”

হবে না-ই বা কেন? সবে দেশ স্বাধীন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ‘সেকেন্ড লাইন অব ডিফেন্সের’ জন্য দেশ জুড়ে রাইফেল শ্যুটিং ক্লাব তৈরিতে জোর দিলেন। ১৯৫২ সালে মেদিনীপুরেও তৈরি হল ক্লাব। শুধু মেদিনীপুর কেন? কাঁথি, তমলুক, ঘাটাল, মহিষাদল, ঝাড়গ্রাম বহু জায়গাতেই এমন ক্লাব তৈরি হল। কিন্তু বর্তমানে সবই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

মেদিনীপুরের ক্লাবটিও যে নিয়মিত ছিল তা কে বলবে? ১৯৫২ সালে দিব্যেন্দুসুন্দর রায়, বিজয়কৃষ্ণ কালি, কৃষ্ণ মণ্ডল-সহ কয়েকজন উদ্যোগী হয়ে ক্লাবটি করেছিলেন। সম্পাদকও ছিলেন দিব্যেন্দুসুন্দরবাবু। উদ্বোধন করেছিলেন তত্‌কালীন রাজ্যপাল হরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। ১৯৭৫ সালে দিব্যেন্দুবাবুর মৃত্যুর পরে সব বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৮২ সালে নতুন করে শুরু হয় ক্লাব। সম্পাদক হন বিজয়গোপাল মল্লিক। তখন মেদিনীপুর পুলিশ লাইনের মাঠে প্রশিক্ষণ হত। কিন্তু ১৯৮৬ সালে ফের ভাটা। প্রায় ৮ বছর এ নিয়ে কেউ ভাবেননি। পরবর্তী সময়ে বিজয়গোপালবাবুই উদ্যোগী হন। ১৯৯৪ সালে গাঁধীঘাটে পৈতৃক জমিতে গড়ে তোলেন শ্যুটিং রেঞ্জ। উদ্বোধন করেন তত্‌কালীন যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান প্রণব মুখোপাধ্যায়। তারপর থেকে অবশ্য প্রশিক্ষণ বন্ধ হয়নি। উল্টে এগারো বার স্টেট চ্যাম্পিয়ানশিপ, পাঁচ বার ইস্টার্ন ইন্ডিয়া চ্যাম্পিয়ানশিপ হয়েছে।

এর থেকেই বোঝা যায় সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এখনও ক্লাবের নিজস্ব ভবন নেই। তহবিলও নেই। নেই নিজের শুটিং রেঞ্জ। নিজের বাড়িতে ও নিজের জমিতে-দু’জায়গায় দু’টি শুটিং রেঞ্জ বানিয়েছেন বিজয়গোপালবাবু। বছরে একটি শ্যুটিং রেঞ্জ রক্ষণাবেক্ষণে ন্যূনতম আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা খরচ। তার বাইরে শ্যুটিংয়ের জন্য গুলির খরচ রয়েছে, আগ্নেয়াস্ত্র রক্ষণাবেক্ষণ রয়েছে। অথচ সাহায্য নেই। সংগঠনের জেলা সম্পাদক তথা রাজ্যের সহ সভাপতি বিজয়গোপালবাবু বলেন, “যত কষ্টই হোক, যত দিন বেঁচে থাকব এটা চালিয়ে যাব।” তাঁর কথায়, “দুঃখের কী জানেন, সাহায্য মেলে না জেনেও প্রতি বছরে আগ্নেয়াস্ত্র বেঙ্গল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশনকে দু’হাজার টাকা কমিশন দিতে হয়, গুলি পিছু ১ টাকা। এমনকি প্রতিযোগিতা করানোর যে এন্ট্রি ফি-এরও ২৫ শতাংশ দিতে হয়। এ নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে বহু বিতর্ক করেছি। তবু ছাড় মেলেনি।”

শ্যুটারদের প্রশ্ন, ভবিষ্যতে কী হবে? এ বার সোনা জয়ী কাকলি, মধুরিমা বা ব্রোঞ্চ জয়ী পারব কালিদের কথায়, সরকার যদি শ্যুটিং রেঞ্জ তৈরির সামান্য জমিও দিত, তা হলে ভবিষ্যত নিয়ে অত চিন্তা হত না! বিজয়গোপালবাবু বলেন, “কতবার প্রশাসনের দুয়ারে ঘুরেছি। জমি দেবেও বলেছিল। কোনও ক্ষেত্রে ১৬ লক্ষ টাকা সেলামি এবং বছরে ১৬ হাজার ভাড়া, কোনও ক্ষেত্রে ৬ লক্ষ সেলামি বছরে ৭ হাজার ভাড়া চেয়েছিল। আমাদের টাকা কোথায়! জমি নেই বলে সরকারি অনুদানও মেলেনি।” ফলে সাফল্যের পরও ভবিষ্যত্‌ যে আঁধারে, তা বলাইবাহুল্য।

midnapore district shooting association suman ghosh midnapore state news latest news online news lates
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy