লড়াই: বাড়িতেই চলছে তিরন্দাজ দম্পতি অতনু-দীপিকার প্রস্তুতি। নিজস্ব
টোকিয়ো অলিম্পিক্সের টিকিট হাতে পেয়ে গিয়েছেন। কিন্তু করোনার থাবা এ বছরের মতো টোকিয়ো যাওয়ার স্বপ্নে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বছরের মতো অলিম্পিক্স বাতিল করে পরের বছর আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক সংস্থা। তাই এই পরিস্থিতিতেও প্রস্তুতিতে কোনও ফাঁক রাখছেন না বাংলার তিরন্দাজ অতনু দাস।
তরুণদীপ রাই, প্রবীণ যাদবের সঙ্গে ভারতের রিকার্ভ দলে রয়েছেন অতনু। গত বছর তাঁদের সঙ্গেই তিরন্দাজির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের দলগত বিভাগে রুপো জিতেছেন বাংলার তিরন্দাজ।
প্রতিযোগিতায় ৭০ মিটারের দূরত্বে তির ছুড়তে হয়। কিন্তু বাড়িতে এখন মাত্র দশ মিটারের দূরত্বে তির ছুড়তে হচ্ছে নিজের ছন্দ ধরে রাখতে। সদ্য বিবাহিত স্ত্রী দীপিকা কুমারির সঙ্গে কলকাতার বাড়িতেই চলছে অতনুর ট্রেনিং। আনন্দবাজারকে ফোনে অতনু বলছিলেন, ‘‘এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, বাইরে বেরোতে ভয় লাগছে। অ্যাকাডেমিতে যাওয়ার প্রশ্নই নেই। বাড়িতে যতটা সম্ভব প্রস্তুতি চলছে। দশ মিটার দূরত্বে বোর্ড টাঙিয়ে অনুশীলন করছি আমি আর দীপিকা।’’ অলিম্পিক্সের জন্য এই প্রস্তুতি যথেষ্ট? অতনুর উত্তর, ‘‘প্রতিযোগিতার সঙ্গে অবশ্যই আকাশ-পাতাল ফারাক। প্রতিযোগিতায় আমাদের টার্গেট বোর্ড থাকে ৭০ মিটার দূরে। এখানে দশ মিটার। কিন্তু চর্চার মধ্যে থাকার জন্য এই প্রস্তুতিই আপাতত চালাতে হচ্ছে।’’
তিন মাস গৃহবন্দি থাকার ফলে মানসিক অবসাদ গ্রাস করে অনেকের মধ্যে। তা কাটিয়ে তোলার জন্য যোগব্যায়াম ও ধ্যানই অস্ত্র এই তারকা তিরন্দাজ দম্পতির। অতনুর কথায়, ‘‘তিরন্দাজিতে মনঃসংযোগ সব চেয়ে জরুরি। তা বাড়ানোর জন্য যোগব্যায়াম ও বিভিন্ন ধরনের এক্সারসাইজ় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি ধ্যান চালিয়ে যেতে পারলে প্রচুর উপকার পাওয়া যায়। আমি আর দীপিকা সেটাই করছি।’’
২০১৪ এশিয়ান গেমসে ব্যক্তিগত কম্পাউন্ড বিভাগে ব্রোঞ্জ জয়ী তৃষা দেব ও মণিকা সারেন চিত্তরঞ্জনের অ্যাকাডেমিতেই অনুশীলন করছেন। তৃষা বলছিলেন, ‘‘রেলে চাকরি পাওয়ার সুবাদে এই সুযোগ পাচ্ছি। কিন্তু যারা এখনও চাকরি পায়নি, তাদের কাছে এই পরিস্থিতি খুব কঠিন।’’ ঠিক যেমন জুনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের মিক্সড টিমে সোনাজয়ী স্বকীর্তি সুত্রধরের অবস্থা। বীরভূমের লাভপুরে বাড়ি ১৯ বছর বয়সি তিরন্দাজের। বাড়ির মধ্যে সে রকম ব্যবস্থা নেই। ব্যায়াম করেই নিজেকে ফিট রাখছেন। বাড়ির মধ্যে ছোট টার্গেট তৈরি করে মাঝেমধ্যে অনুশীলন চলছে তাঁর। স্বকীর্তি বলছিলেন, ‘‘আমরা এখনও চাকরি পাইনি। তাই বড় বড় অ্যাকাডেমিতে যাওয়ার সুযোগ কম। সাইয়ে প্র্যাক্টিস বন্ধ। এর মধ্যে কী করে ছন্দ ধরে রাখব, জানি না।’’
প্রথম ভারতীয় মহিলা তিরন্দাজ হিসেবে অলিম্পিক্সের ব্যক্তিগত বিভাগে সুযোগ পাওয়ার রেকর্ড রয়েছে দোলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। অর্জুন পুরস্কারজয়ী তিরন্দাজের কথায়, ‘‘বাড়িতে অনুশীলন করে ছন্দ ধরে রাখা যায় না। আমার অ্যাকাডেমি খুলতে পারছি না। ছাত্রছাত্রীদের অনলাইনে পরামর্শ দিচ্ছি। কিন্তু কেউ উন্নতি করছে কি না বোঝা যাচ্ছে না।’’
স্পোর্টস অথোরিটি অব ইন্ডিয়া (সাই)-র পক্ষ থেকেও এ ধরনের বেশ কিছু অনলাইন ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। সাইয়ের অন্যতম কোচ হরিশ বলছিলেন, ‘‘হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ বানিয়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যায়ামের ভিডিয়ো পাঠানো হচ্ছে। প্রত্যেকের ভুল ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করছি।’’
প্রাক্তন তিরন্দাজ পরেশনাথ মুখোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, তিরন্দাজিতে অনায়াসে শারীরিক দূরত্ববিধি মেনে চলা যায়, সে ক্ষেত্রে কেন আউটডোর অনুশীলনের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না? বাংলার একমাত্র তিরন্দাজির অ্যাকাডেমি ঝাড়গ্রামে। সেখানেও প্রস্তুতি বন্ধ। রাজ্যের বিভিন্ন ক্লাবেও বন্ধ অনুশীলন। তাঁর কথায়, ‘‘সব খেলাকে আমরা একই সুতোয় বেঁধে ফেলি। শারীরিক দূরত্ববিধি হয়তো কুস্তি, কবাডিতে মেনে চলা যায় না। তাই বন্ধ। কিন্তু তিরন্দাজিতে কোনও ভাবেই দূরত্ববিধি ভাঙার প্রয়োজন নেই। তবুও কেন প্রস্তুতি শুরু করা হচ্ছে না?’’
পশ্চিমবঙ্গ তিরন্দাজি সংস্থার সচিব রূপেশ কর বলে দিলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে আমরা কোনও নির্দেশ পাইনি। অ্যাকাডেমি খুলতে বলা হলেই তা চালু করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy