Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Arzan Nagwaswalla

লোকাল ট্রেন থেকে ইংল্যান্ডের উড়ানে, এক নতুন পার্সি ক্রিকেটারের উত্থান

মাঠে পৌঁছে আলাদা করে খুব একটা গা-ঘামানোর প্রয়োজন পড়ত না। ট্রেন যাত্রার ধকল সামলেও ঘণ্টায় ১৩৫ কিলোমিটার গতিতে টানা বল করে যাওয়ার ক্ষমতা ছিল অর্জনের।

লক্ষ্য: সুযোগ পেলে কাজে লাগাতে মরিয়া তরুণ বাঁ-হাতি পেসার অর্জন।

লক্ষ্য: সুযোগ পেলে কাজে লাগাতে মরিয়া তরুণ বাঁ-হাতি পেসার অর্জন।

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত 
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২১ ০৬:০৪
Share: Save:

ভোর তিনটেয় ঘুম থেকে উঠে চারটের লোকাল ট্রেন ধরার জন্য ভালসাড স্টেশনে অপেক্ষা করে থাকতেন অর্জন নাগোয়াসওয়াল্লা। কারণ, রাজ্য স্তরের বেশির ভাগ ম্যাচই থাকত আমদাবাদে। যা তাঁর গ্রাম নারগল থেকে সাড়ে তিনশো কিলোমিটার দূরে। ট্রেনে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা যাত্রা করে আমদাবাদ আসতেন তরুণ বাঁ-হাতি পেসার। সকাল দশটা থেকে ম্যাচ খেলতে হলে চারটের ট্রেন ধরতেই হত। কারণ, পরের ট্রেন দু’ঘণ্টা পরে।

মাঠে পৌঁছে আলাদা করে খুব একটা গা-ঘামানোর প্রয়োজন পড়ত না। ট্রেন যাত্রার ধকল সামলেও ঘণ্টায় ১৩৫ কিলোমিটার গতিতে টানা বল করে যাওয়ার ক্ষমতা ছিল অর্জনের। সেই সঙ্গেই ডান-হাতি ব্যাটসম্যানদের ভিতরের দিকে আসা সুইং তাঁকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখত বয়সভিত্তিক স্তরে। অর্জনের এই দক্ষতাই যে একদিন তাঁকে ভারতীয় দলের ইংল্যান্ডগামী বিমানের দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দেবে, তা স্বপ্নেও ভাবেননি। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজের দলে স্ট্যান্ডবাই তালিকায় জায়গা পেয়েছেন ২৩ বছর বয়সি
বাঁ-হাতি পেসার। ফারুখ ইঞ্জিনিয়ারের পরে প্রথম পার্সি ক্রিকেটার হিসেবে ভারতীয় দলে সুযোগ তাঁর।

শুক্রবার আমদাবাদ থেকে গ্রামের বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎই অভিনন্দন বার্তা আসতে শুরু করে তাঁর ফোনে। অর্জন ভাবতেই পারেননি ভারতীয় দলের সঙ্গে ইংল্যান্ড উড়ে যাচ্ছেন তিনি। শুরুতে বিশ্বাস করেননি। কিছুক্ষণ পরে গুজরাতের প্রাক্তন অধিনায়ক পার্থিব পটেলের ফোন আসায় অর্জন নিশ্চিত হন, সত্যি তাঁর মুকুটে নতুন পালক যুক্ত হতে চলেছে। শনিবার দুপুরে নারগল থেকে আনন্দবাজারকে ফোনে অর্জন বলেন, ‘‘এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। এত বড় সুযোগ আসবে ভাবতে পারিনি। করোনা পরিস্থিতির জন্য বাড়িতেই উৎসব সীমাবদ্ধ রাখতে হয়েছে। না হলে এত ক্ষণে গ্রামের প্রত্যেকে এখানে চলে আসতেন।’’

স্বচ্ছল পরিবার থেকে উঠে এলেও নারগলে ক্রিকেট পরিকাঠামো উন্নত ছিল না। তাই টেনিস বলেই যাত্রা শুরু অর্জনের। ২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনালে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সেই স্মরণীয় ছয় দেখে বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই ব্যাট তুলে নিয়েছেন। অর্জনের জীবনে ধোনির সেই ছয় সে ভাবে দাগ কাটতে পারেনি। প্রতিযোগিতা জুড়ে জ়াহির খানের দুরন্ত কিছু স্পেল দেখেই জোরে বোলার হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু। গ্রামে টেনিস বলেই ক্রিকেটের হাতেখড়ি। কিন্তু অর্জনের প্রতিভা দেখে তাঁর এক প্রতিবেশী পরামর্শ দেন, ভালসাডে একমাত্র কোচিং ক্যাম্পে ভর্তি হওয়ার। সেখানে বয়সভিত্তিক স্তরে ভাল খেলার পর থেকেই ডাক পেতে শুরু করেন রাজ্য স্তরের বয়সভিত্তিক দলে। গুজরাতের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৬, অনূর্ধ্ব-১৯ ও অনূর্ধ্ব-২৩ বিভাগে দুরন্ত পারফর্ম করেন। ২০১৮ সালে তাঁর জন্য খুলে যায় রঞ্জি ট্রফির দরজা। তার পর থেকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি তরুণ পেসারকে।

১৬টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে তাঁর উইকেটসংখ্যা ৬২। ‘এ’ তালিকাভুক্ত ক্রিকেটে ২০ ম্যাচে পেয়েছেন ৩৯টি উইকেট। ২০১৯-২০ সালের রঞ্জি ট্রফিতে আট ম্যাচে ৪১টি উইকেট রয়েছে অর্জনের। তার মধ্যে চার বার পেয়েছেন ইনিংসে পাঁচ উইকেট। তবুও আইপিএলের কোনও দলে জায়গা হয়নি। তবে নেট বোলার হিসেবে তাঁকে নেওয়া হয় মুম্বই ইন্ডিয়ান্স শিবিরে। সেখানেই আলাপ হয় তাঁর স্বপ্নের দুই জোরে বোলারের সঙ্গে। প্রথম জন অবশ্যই জ়াহির খান, দ্বিতীয় ব্যক্তির নাম ট্রেন্ট বোল্ট। তাঁদের দেখে শুরুতে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন অর্জন। বলছিলেন, ‘‘আমার সব চেয়ে প্রিয় দুই পেসারকে এত কাছ থেকে দেখব, স্বপ্নেও ভাবিনি। তবে জ়াহির ভাই কখনও বুঝতেই দেয়নি ও এত বড় মাপের বোলার ছিল। আমার কোথায় সমস্যা হচ্ছে জানতে চাইত। অ্যাকশনে কোনও খুঁত দেখতে পেলে শুধরে দিত।’’ আর বোল্ট? তাঁর কাছে বিশেষ কিছু শিখলেন? অর্জনের উত্তর, ‘‘টেস্ট দলে সুযোগ পেলে বোল্টের শেখানো ইনসুইং ইয়র্কার দিয়েই নিউজ়িল্যান্ডকে পরাস্ত করার ইচ্ছে আছে।’’

মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের নেটে রোহিত শর্মা ও কায়রন পোলার্ডের মতো ব্যাটসম্যানকে একাধিক বার পরাস্ত করেছেন অর্জন। রোহিত তাঁর বলে নেটে আউটও হন। তার পর থেকেই ‘হিটম্যান’-এর পছন্দের পাত্র হয়ে ওঠেন অর্জন। বলছিলেন, ‘‘রোহিত ভাইকে বাউন্সার দেওয়া যায় না। এত ভাল পুল আর হুক করে যে নিশ্চিত ছয় হবেই। ওর পা লক্ষ্য করে বল করে এক দিন সফল হই। তার পর থেকে রোহিত ভাই আমাকে ওর বিরুদ্ধে বল করতে ডাকত। পোলার্ডকে বল করেও অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি।’’

অর্জনের জীবনে বিরাট অবদান রয়েছে পার্থিব পটেলের। রাজ্য স্তরে অর্জনের প্রথম অধিনায়ক পার্থিব। বিপক্ষ যখনই বড় কোনও জুটি গড়ত, পার্থিব বল তুলে দিতেন অর্জনের হাতে। তাই গুজরাত দলে তাঁকে বলা হয় ‘ম্যান উইথ দ্য গোল্ডেন আর্ম’। অর্জন বলছিলেন, ‘‘পার্থিব ভাইয়েরই দেওয়া এই নাম। আসলে রঞ্জি ট্রফির সময় আমাকে খুবই সাহায্য করত। কোনও ম্যাচে খারাপ বল করলেও কিছু বলত না। ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার খবরটা পার্থিব ভাইয়ের থেকেই পাই।’’

স্ট্যান্ডবাই দলে থাকলেও অর্জনের বোলিংয়ে সাহায্য পেতে পারেন বিরাটরা। নেটে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাট করেই বোল্টকে সামলানোর প্রস্তুতি নিতে পারে ভারতীয় দল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket Gujarat India Team Arzan Nagwaswalla
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE