Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ব্রডদের ঔদ্ধত্যে চার দিনেই ছাই অস্ট্রেলিয়া

একটা টেস্ট ম্যাচ হারার নানা ভঙ্গিমা থাকে। কোথাও পাঁচটা দিন চোয়ালচাপা যুদ্ধ চালিয়েও শেষে নতজানু হতে হয়। কিন্তু সেই পরাজয়কে বলে বীরের পরাজয়। কখনও আবার দেখা যায়, শুরু ভাল করেও একটা টিম আস্তে আস্তে যুদ্ধ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। সেখানেও মনে রাখার মতো এক-আধটা ইনিংস, গোটা কয়েক স্পেল থাকে। যা থেকে খুঁজে নেওয়া যায় পরবর্তী যুদ্ধে প্রত্যাবর্তনের রসদ। কিন্তু কার্ডিফে যে টেস্টটা শনিবার মাইকেল ক্লার্করা হেরে গেলেন, তার থেকে তাঁরা কী পেতে পারেন?

অ্যাসেজ ২০১৫: কুক ১-০।

অ্যাসেজ ২০১৫: কুক ১-০।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৫ ০৩:৩৮
Share: Save:

একটা টেস্ট ম্যাচ হারার নানা ভঙ্গিমা থাকে। কোথাও পাঁচটা দিন চোয়ালচাপা যুদ্ধ চালিয়েও শেষে নতজানু হতে হয়। কিন্তু সেই পরাজয়কে বলে বীরের পরাজয়।
কখনও আবার দেখা যায়, শুরু ভাল করেও একটা টিম আস্তে আস্তে যুদ্ধ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। সেখানেও মনে রাখার মতো এক-আধটা ইনিংস, গোটা কয়েক স্পেল থাকে। যা থেকে খুঁজে নেওয়া যায় পরবর্তী যুদ্ধে প্রত্যাবর্তনের রসদ।
কিন্তু কার্ডিফে যে টেস্টটা শনিবার মাইকেল ক্লার্করা হেরে গেলেন, তার থেকে তাঁরা কী পেতে পারেন?
অসীম স্তব্ধতা।
চারশোর উপরে তাড়া করে কোনও অ্যাসেজ যুদ্ধ আজ পর্যন্ত কেউ জেতেনি। না ইংল্যান্ড, না অস্ট্রেলিয়া। জিততে হলে অস্ট্রেলিয়াকে আজ ইতিহাস গড়তে হত, টুকরো করতে হত এত দিনের লালিত রেকর্ড। নিঃসন্দেহে কাজটা কঠিন ছিল। কিন্তু এত জঘন্য ভাবে, এত দৃষ্টিকটু ভাবে সব বরবাদ করে দেওয়ার মতোও অসম্ভব কর্মকাণ্ডও ছিল কি?
মাইকেল ক্লার্ক উত্তরটা দিতে পারতেন। কিন্তু দিলেন যেটা, তাকে সার্বিক পর্যবেক্ষণ গোছের কিছু একটা বলা যেতে পারে। ‘‘বেশি কথায় না গিয়ে সংক্ষিপ্তে সারতে চাই। উই ওয়্যার আউটপ্লেড। ক্রিকেটের তিনটে বিভাগেই স্রেফ হেরে গিয়েছি,’’ ম্যাচের শেষে বলতে শোনা গেল বিষণ্ণ অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ককে।
বললেও বা কী বলতেন ক্লার্ক? যে মিডিয়া, যে দেশ আজ অ্যালিস্টার কুকদের কার্ডিফ টেস্ট জয় নিয়ে এখন এত উৎসব করছে, সেই ব্রিটিশ মনন তো বিশ্বাসও করেনি, ইংল্যান্ডের পক্ষে গোটা সিরিজে একবারের জন্যও ন্যূনতম বিপদে ফেলা সম্ভব। সেখানে ইংল্যান্ড একটা গোটা দিন বাকি রেখে ১৬৯ রানে টেস্টটা ফেলে-ছড়িয়ে জিতে বেরিয়ে গেল।

কার্ডিফ টেস্ট শুরুর আগে বিলিতি মিডিয়া প্রবল সন্দিহান ছিল, অস্ট্রেলিয়ার হাড় হিম করে দেওয়া ব্যাটিং লাইনআপকে দু’বার আউট করার সাধ্য আদৌ ইংরেজ বোলিংয়ের আছে কি না। সেখানে আজ একটা ১২ ওভারের সময়-বৃত্তে অস্ট্রেলিয়ার পাঁচ জনকে তুলে নিয়ে গেলেন ইংল্যান্ড বোলাররা।

মনে করা হচ্ছিল, অস্ট্রেলিয়ার দুই ‘মিচ’-এর সামনে খড়কুটোর মতো উড়ে যাবে ইংরেজ ব্যাটিং। জনসন-আতঙ্কে জোনাথন ট্রটকে এমনই এক অ্যাসেজের পরে খেলা ছেড়ে দিতে হয়েছিল। বাউন্সার নামক আতঙ্কের সামনে মানসিক বিপর্যয়ে। আর স্টার্ক? এই মুহূর্তে তো ক্রিকেট-বিশ্বের সেরা ফাস্ট বোলার তিনি। অভ্রান্ত নিশানা, সুইং, পেস— কোনটা নেই? অথচ ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে জো রুট সেঞ্চুরি করে গেলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ইয়ান বেল এমন মার মারলেন স্টার্ককে যে, বলাবলি শুরু হল— ওহে দেখো, পুরনো মুখদের নিয়ে নতুন ইংল্যান্ডের জন্ম হয়েছে!

মাইকেল ক্লার্ক বললেও কী বলতেন আজ?

আসলে হার যে এমন ন্যক্কারজনক হবে, অপমানের আগুনে এ ভাবে পুড়তে পুড়তে ছাই হবে অস্ট্রেলীয় ঔদ্ধত্য, অনেকেই ভাবেননি। ডেভিড ওয়ার্নার যতক্ষণ ছিলেন, মনে হয়েছে কিছু একটা হতে পারে। ডেভিড হাফসেঞ্চুরি (৫২) করলেন, কিন্তু গোলিয়াথ হয়ে দেশকে ইতিহাসের পাতায় পৌঁছে দিতে পারলেন না। তার আগেই মইন আলির বল অস্ট্রেলীয় ওপেনারের পায়ে জমা হয়ে গেল।

সবচেয়ে বড় কথা, ইংরেজ বোলিং-ফিল্ডিংকে যে নিখুঁত দেখিয়েছে এমন নয়। রুট স্লিপে একটা ছেড়েছেন। মইন আলি দ্বিতীয় ওভারে এসে সতেরো রান দিয়ে চলে গিয়েছেন! কিন্তু ম্যাচ নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে দেয়নি ইংল্যান্ড। ভাল করে বললে, স্টুয়ার্ট ব্রড দেননি। অস্ট্রেলীয় টপ অর্ডারের চারের তিন জনকে একা তুলে নিলেন। ক্রিস রজার্স (১০), মাইকেল ক্লার্ক (৪), স্টিভ স্মিথ (৩৩)। ওয়ার্নার যখন ব্যাট নামক ‘কুঠার’ নিয়ে বোলার নিধনে মত্ত, তখনও ইংরেজ পেসারের হাত থেকে একটা বলও বেরোয়নি যা অস্ট্রেলীয় বাঁ হাতির সুবিধে করে দিতে পারে।

সতীর্থদের হাততালির মধ্যে মাঠ ছাড়ছেন ম্যাচের সেরা জো রুট। শনিবার কার্ডিফে। ছবি: এএফপি

জেমস অ্যান্ডারসনও কী কম ভোগালেন? উইকেট না পেতে পারেন, কিন্তু অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের দিকে কঠিন থেকে কঠিনতর পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছুড়ে দিতে থাকলেন ক্রমাগত। আর মার্ক উডস? সম্ভবত চলতি অ্যাসেজ যুদ্ধের প্রথম রাউন্ডে তিনি সেরা প্রাপ্তি। দেশকে দরকারের সময়ে দ্বিতীয় ইনিংসে রান দিয়েছেন, এ দিন দু’টো উইকেট নিয়েও চলে গেলেন। মইন যে মইন, যাঁকে এখনও ক্রিকেট-বিশ্ব দরের স্পিনার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চায় না, তিনি পর্যন্ত শেষ করলেন তিন উইকেট নিয়ে!

মিচেল জনসনের হাফসেঞ্চুরি (৭৭, দলের সর্বোচ্চ) করে যাওয়া নিয়ে আরও একদফা অসন্তোষ তৈরি হল। বলাবলি চলল, জনসন বোলার হয়ে যা পারেন, তা স্মিথরা কেন পারলেন না? জনসনকে তো আলাদা পিচ দেওয়া হয়নি, আলাদা বোলিং-আক্রমণও ছিল না। এবং মাইকেল ক্লার্কের যন্ত্রণা কার্ডিফেই শেষ হল, এমন মনে করারও কোনও কারণ নেই।

টিমের এক নম্বর পেসার মিচেল স্টার্কের গোড়ালির চোট আবার বেড়েছে। রীতিমতো এখন খোঁড়াচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার এক নম্বর পেসার। আগামী বৃহস্পতিবার লর্ডস টেস্টে তিনি শেষ পর্যন্ত নামলে হয়!

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ইংল্যান্ড ৪৩০ ও ২৮৯।

অস্ট্রেলিয়া ৩০৮ ও ২৪২

(জনসন ৭৭, ওয়ার্নার ৫২, ব্রড ৩-৩৯, মইন ৩-৫৯)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ashes 2015 England Australia cricket test
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE